জগতের প্রতিটি প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে; এ এক চিরন্তন সত্য। কেউ আগে, কেউ পরে।
তবু আমাদের মেনে নিতে কষ্ট হয়। আমরা আমাদের প্রিয় মানুষদের সারাজীবন আঁকড়ে ধরে রাখতে চাই। গত শুক্রবারই আমাদের ছেড়ে অনন্ত যাত্রার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমালেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলের ছাত্রনেতা ও আদি হল-নিবাসী প্রিয় অভিভাবক আশফাক সুজন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো মাত্র ৮২ বছর। শেষ জীবনে
হাইপারটেনশন, অ্যাকিউট কিডনী ইনজুরি এবং পারকিনসন্স ডিজিজ-সহ নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
জানা যায়, ছাত্রজীবন থেকে আশফাক সুজন মুহসীন হলের ৫৪৬ নাম্বার রুমে বসবাস করছেন। তৎকালীন সময়ে তাকে সবাই এক নামে চিনতো। হাজার হাজার তরুণ তরুণীর প্রিয় অভিভাবক হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন তিনি। শুধু তাই নয় মৃত্যুর শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত ছিলেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে। তার অকাল মৃত্যুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে নেমে আসে শোকের মাতম।
আশফাকের স্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বিয়ে হয় এই হলেই। প্রথম দুই বাচ্চা হয় পাশের রুমে, আর সবচেয়ে ছোটোটা হয় ছাদে। এরপর থেকে আমরা এখানেই বাস করছি। আমার ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতনী সবারই এখানে বেড়ে ওঠা। মৃত্যুর পর ওর অনুপস্থিতিতে হলটা খা খাঁ করছে… কীভাবে থাকবো বুঝতে পারছি না!’এতটুকু বলে হাউমাউ করে কেঁদে উঠেন তার স্ত্রী আঙ্গুর বেগম।
আশফাক সাহেবের ছোট নাতি জনি মিয়া (১৮) দাদার মৃত্যুর পর হল ত্যাগ করতে চাইলে তেড়ে ওঠেন হলের বাকি ছাত্ররা। সুমন নামের এক তরুণ ছাত্রনেতা আশফাকের পরিবারের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘এই হল আপনাদের পৈতৃক নিবাস। এখান থেকে কোথাও যেতে পারবেন না আপনারা। বাপের ভিটেবাড়ি ছেড়ে কেউ কখনো যেতে পারে? আর এখানে আপনাদের কলোনী আছে। সম্পূর্ণ ৪, ৫, ৬ তলা জুড়ে এই কলোনী স্যারের মৃত্যুর পর ভেঙে গেলে স্যার ভীষণ কষ্ট পাবেন। এছাড়া আপনাদের ছাড়া এই হল আমরা ভাবতেও পারিনা। আপনারা কোথাও যেতে পারবেন না। আর কিছুদিন গেলে হয়তোবা এই হলের নামটাই বদলে আশফাক হল হয়ে যাবে। খুব বেশি আর দেরি নেই তা হতে…’
তরুণ নেতার বক্তব্যের সাথে সমর্থন দেন তার পেছনে থাকা হাজারো ছাত্র। আপাতত ৫৪৬ নাম্বার রুমটিকে আশফাক স্মৃতি জাদুঘর হিসেবে সংরক্ষণ করার পরিকল্পনা চলছে।