জঙ্গলে করোনাভাইরাস ছড়ানোর পর খরগোশ ও কচ্ছপের দৌড়ে যে জিতলো

১২৫৩ পঠিত ... ২১:২২, এপ্রিল ০১, ২০২০

গোটা জঙ্গলে চলছে থমথমে অবস্থা। করোনার আতঙ্কে মহারাজ সিংহ জঙ্গলময় জারি করেছেন পনেরো দিনের লকডাউন। হাতি, বানর, কচ্ছপ, খরগোশ, ঈগল সকলেই যার যার ডেরায় বন্দি জীবন কাটাচ্ছে।

জীবন যেন হুট করে থমকে গেছে। কচ্ছপ আর খরগোশের দৌড় প্রতিযোগিতার তারিখও পিছিয়ে গেলো। অবশ্য খরগোশ বাসায় ঢোকার আগেও চোখ রাঙিয়ে কচ্ছপকে বলেছে, 'করোনারে হারাইতে পারলেও আমারে হারাইতে পারবা না। তারিখ যতই পেছাক, জিত আমারই হইবো!'

এরই মধ্যে ইতালি ফেরত শেয়াল এসেছে জঙ্গলে। ঘুরে বেড়াচ্ছে মনের সুখে। সজারুর দোকানে বসে তাকে টিকটিকির স্যুপ খেতে দেখা গেছে। সতর্কতার লেশমাত্র নেই তার মধ্যে। কিন্তু একা একা ঘুরতে তার কিছুতেই ভালো লাগছে না। নিঃস্তব্ধ জঙ্গলে কতক্ষণই আর ভাল লাগে!

শেয়াল তাই একটা বোতলে পুকুরের পানি ভরে নিয়ে গেলো খরগোশের বাসার সামনে। গিয়ে নরম সুরে বলল, 'ও খরগোশ ভায়া। কেমন চলছে দিনকাল?'
খরগোশ ঘরের ভেতর থেকেই বলল, 'শেয়াল দাদা তুমি বাইরে কি করছ? লকডাউন চলছে তো।'
: আরে লকডাউন চললেই কি বাসায় বন্দি হয়ে থাকতে হবে নাকি? এত সুন্দর জঙ্গল! বাইরে বের হলেই মনটা ভাল হয়ে যায়!
: কিন্তু দাদা, করোনায় আক্রান্ত হও যদি?
: ওসব বিদেশি রোগ, আমাদের হবে না। তুমি দৌড় প্রতিযোগিতার প্রস্তুতি নিচ্ছো তো?
: কিভাবে নেবো বলো! বাসা থেকে বের হতেই তো পারছি না।
: তুমি কিন্তু বন্দী থেকে নিজের ক্ষতি করছ। এর চেয়ে আমার সাথে চলো একটু ওয়ার্ম-আপ করবে। আর আমিও কিন্তু ইতালিতে ট্রেইনার হিসেবেই কাজ করতাম।
খরগোশ ইতঃস্তত ভাবে বলল, 'তা তুমি মন্দ বলোনি দাদা। কিন্তু করোনায় আক্তান্ত হই যদি?'
বোতল ভর্তি পানি দেখিয়ে শেয়াল বলল, 'আরে এত চিন্তা করছ কেন? এই যে তোমার জন্য এনেছি ইতালিয়ান হ্যান্ড-স্যানিটাইজার! '

খরগোশ এবার কিছুটা ভরসা পেলো। পুকুরের পানি হাতে মেখেই সে বের হল শেয়ালের সাথে। এভাবেই প্রতিদিন সে শেয়ালের সাথে বের হয়ে দৌড়ের প্রস্তুতি নিতে লাগলো৷ ট্রেইনারের ছদ্মবেশে শেয়ালও ভালোই মৌজমাস্তিতে সময় কাটাতে লাগলো।

ওদিকে কচ্ছপ ঘরে বসেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। দু'দিন পর কচ্ছপকে ফোন করলো তার বেস্ট ফ্রেন্ড ব্যাঙ। হালকা কেশে নাক টানতে টানতে ব্যাঙ বলল, 'কচ্ছপ ব্রো! শুনলাম খরগোশ কোমর বেঁধে প্রস্তুতি নিচ্ছে। তুমিও তো আমার কাছে ট্রেনিং নিতে পারো। কিছু লাফ দেয়ার ট্রিক্স আমি তোমাকে শিখিয়ে দিতে পারি।' বলেই ব্যাঙ দুইটা গগনবিদারী হাঁচি দিলো।

কচ্ছপ ভয় পেলো! ব্যাঙের তো নিশ্চিত সর্দি হয়েছে। কচ্ছপ বললো, 'ব্যাঙ ভায়া, তোমার তো সর্দি হয়েছে মনে হয়! তুমি বাসা থেকে বের হইয়ো না৷ আর যদি শরীরের জয়েন্টে ব্যথা হয়, জোর আসে, জরুরি হেল্পলাইনে ফোন দিতে ভুলবে না। আমার ট্রেনিংয়ের দরকার নেই। আমি খোলসের ভেতরেই ভালো আছি।' বলেই ফোন রেখে দিলো কচ্ছপ। ব্যাঙ আর খরগোশের অসতর্কতা দেখে তার প্রচন্ড দুশ্চিন্তা হতে লাগলো।

ওদিকে করোনা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাওয়ায় মহারাজ সিংহ লকডাউনের মেয়াদ বাড়ালেন। কিন্তু খরগোশের যেন তর সইলো না। লকডাউনের মধ্যেই জ্বর আর কাশি নিয়ে সে চলে এলো প্রতিযোগিতার মাঠে। কয়েকদিন হলো তার শরীরটা ভাল যাচ্ছে না, প্রস্তুতির ধকলের জন্য কিনা কে জানে। রেফারি হিসেবে ইতালি ফেরত শেয়ালও সাথে এলো৷ খরগোশ বলল, 'দেখেছো শেয়াল দাদা, কচ্ছপ আমার ভয়ে মাঠেই আসেনি।'
: ওকে নিয়ে তোমার ভাবতে হবেনা ভায়া। তুমি দৌড় শুরু করো। আমার ট্রেনিং কেমন হল সেটা তো দেখতে হবে, নাকি?

শেয়ালের কথায় তুমুল উৎসাহে খরগোশ কাশতে কাশতে শুরু করল দৌড়। কিন্তু দৌড়ে কিছুদূর গিয়েই হাঁপিয়ে উঠলো৷ প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট শুরু হল তার। কিছুতেই আর উঠে দাঁড়াতে পারলো না সে। ওদিকে খরগোশের মধ্যে করোনার সিম্পটম দেখে শেয়ালও আর বাঁচাতে এগিয়ে এলো না, এক দৌড়ে পালিয়ে গেলো। বিদেশ থেকে আসার পরও কোয়ারেন্টাইনে না থাকায় জঙ্গল পুলিশও তাকে খুঁজছে।

অলংকরণ: আরহাম হাবীব

দূর থেকে দূরবীন দিয়ে এসব দেখছিল কচ্ছপ। মুচকি হেসে ফোন হাতে নিয়ে সে ঢুকে গেলো নিজের সার্বক্ষণিক সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং প্লেস, মানে খোলসের মধ্যে। ফেসবুকে ঢুকে স্ট্যাটাস দিল, 'পেশেন্স এন্ড কোয়ারেন্টাইন্স উইন্স দ্য রেস!'

মোরাল: পেশেন্স এ্যান্ড কোয়ারেন্টাইন উইন্স দ্য রেস।

১২৫৩ পঠিত ... ২১:২২, এপ্রিল ০১, ২০২০

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top