ঠগে ঠগে না মিললে যেসব বিপদ হতে পারে

৩২৯২ পঠিত ... ১৯:০০, মার্চ ২৬, ২০২০

কার্টুন: তাইসির

বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জে, জনপদে অনেক হাসির গল্প প্রচলিত আছে। এর মধ্যে একটা গল্প আছে দুই ঠগের।

এক দেশে ছিল দুই ঠগ। অতি বিখ্যাত প্রতারক এরা।

তো একদিন সকালবেলা দুই প্রতারক বের হয়েছে কিছু আয়-রোজগারের আশায়। একজন নিল এক বস্তা আমের শুকনো পাতা। আরেকজন নিয়েছে এক বস্তা কলার বিচি। এরা কেউ কাউকে চেনে না। পথে একজন বস্তা রেখে বিশ্রাম করছে। তাকে দেখে অন্যজনও মাথা থেকে বস্তা নামিয়ে তার পাশে বসে পড়ল।

‘তোমার বস্তায় কী ভাই?’

‘আমারটায় তেজপাতা। তোমারটায়?’

‘গোলমরিচ।’

দুজনেই খুশি। বেটাকে ঠকাতে হবে। ওঠার সময় দুজনেই ভুল বস্তা ঘাড়ে তুলল।

হাটে গিয়ে দুজনেই বস্তা খুলল। এ দেখে ওর ভেতরে আমের পাতা, ও দেখে কলার বিচি।

কে কাকে ঠকাবে!

এদের দুজনের আবার দেখা। একজন খালি হাঁড়িতে পানি চড়িয়ে সেদ্ধ করছে। আরেকজন এসে বলল, ‘কী কর?’

‘ভাত রাঁধি।’

‘তুমি যখন রাঁধছ আমারও দুমুঠো চাল ওতে দেই। একসঙ্গে হয়ে যাবে।’

সে তো এই আশাতেই ছিল। ‘আচ্ছা দাও।’

দ্বিতীয়জনও গামছা থেকে চাল ঢালছে এরকম খানিক অঙ্গভঙ্গি করল সে।

অনেকক্ষণ পরে ভাত ফুটেছে কি না দেখতে গিয়ে দেখা গেল, পুরো হাঁড়িতে শুধু পানি ফুটছে।

তখন তারা দুজনে সন্ধি করল।

‘ভাই, বোঝা গেছে, আমাদের দুজনেরই পেশা এক। দক্ষতাও এক। কেউ কাউকে ঠকাতে পারব না। বরং আসো, মিলিত হই। আমরা দুজন একসঙ্গে থাকলে কে আমাদের ঠকাতে পারবে!’

তারপর তারা একসঙ্গে তাদের অভিযান শুরু করল।

রাস্তার ধারে একটা জুতা ফেলে রাখল একজন। একটা বস্তা বোঝাই গাড়ি যাচ্ছে। গাড়িয়াল একা। এক প্রতারক বলল, ‘ওই মিয়া, একটা জুতা পড়ে আছে, নিবা নাকি?’

গাড়িয়াল বলল, ‘একটা জুতা নিয়া কী করব!’

খানিকক্ষণ যাওয়ার পরে গাড়িয়ালকে ধরল আরেক ঠগ, ‘এই মিয়া, একপাটি জুতা পড়ে আছে পথের ধারে, লইয়া যাও।’

গাড়িয়াল তখন ভাবল, আগের পাটি জুতা নিয়ে এলেই তো জোড়া পূর্ণ হয়। গাড়ি থেকে নেমে সে ছুটল আগের পাটির সন্ধানে। আর ততক্ষণে গাড়ি গায়েব।

দুই ঠগ গেল এক নতুন রাজ্যে। গিয়ে দেখে, রাজা মারা গেছে। কে হবে নতুন রাজা, তা নিয়ে কথা হচ্ছে।

তখন এক ঠগ গিয়ে বলল, ‘রাজা আমাকে স্বপ্নে বলেছেন, আমিই হব নতুন রাজা। বিশ্বাস না হলে চলুন কবরে।’

আরেক ঠগ তখন কবরের নিচে গোপন গর্তে লুকিয়ে আছে। কবরের কাছে গিয়ে সবাই বলল, ‘হুজুর, কী আদেশ?’

গোপন স্থান থেকে ঠগ বলল, ‘ওই পরদেশি আগন্তুক আর তার বন্ধু দুইজন হবে রাজা। আর দুই রাজকন্যার সঙ্গে তাদের বিয়ে দিতে হবে।’

এভাবে তারা অন্য রাজ্যে গিয়ে রাজা আর রাজজামাতা হয়ে গেল।

এবার অন্য দুই ঠগের গল্প। এক দেশে ছিলেন একজন কাজি। বিচারক আর কী। উচ্চ আদালতে বিচার করেন। তিনি কাজ থেকে অবসর নিলেন। তারপর একবার দেশের উজির হয়ে গেলেন। তারপর শুরু করলেন ঘুষ খাওয়া। আর এমন করে তিনি ঘুষ খান, সবাই অবাক হয়। কাজি সাহেব এইভাবে ঘুষ খান!

ওই দেশে ছিল এক ঠগ। কাজি সাহেবের ওজারতি চলে গেলে সে গেল তাঁর কাছে। বলল, ‘আপনি যে ঘুষ খেয়েছেন আমরা জানি। আপনার বিচারের তদন্তের ভার আমাদের ওপরে। আমরা আপনাকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়ব। জেলের ভাত খাওয়াব।’

প্রাক্তন কাজি ভাবলেন, কোটি টাকার পোস্টিং বাণিজ্য করেছি। এ থেকে যদি ২৫ লাখ যায়, তাও তো থাকে ৭৫ লাখ। আচ্ছা যাক। তিনি ঘুষ সাধলেন। ২৫ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে ঠগেরা কেটে পড়ল।

কাজেই এই ঠগ আর ওই ঠগ, এই দুই ঠগের উচিত ছিল এক সঙ্গে থাকা। তারা একত্র হলেই পুরো দেশ তো দেশ, পুরো পৃথিবীকে তারা গলাধঃকরণ করতে পারবে। প্রতিভায় তারা কারও চেয়ে কম যায় না।

এবার বুঝুন ওই কাজি যখন বিচার করতেন, রায় দিতেন, কী রায় দিতেন!

দুই নম্বর চিন্তাটা হলো, যে কাজি বুঝতে পারেন না কোন তদন্তকারী আসল, আর কোনটা প্রতারক− তিনি যখন বিচার করেন, তখন কীভাবে রায় দেন কোনজন অপরাধী, আর কোনজন নিরপরাধ!

অবশ্য রায় দেওয়ার আরেকটা সহজ উপায় আছে। সেটা হলো, রায়ের আগের রাতে…

এই সবই কাজির আমলের গল্প। রূপকথার আমলের। আমরা এখন আর রূপকথার জগতে বাস করি না। আমরা বাস করি বাস্তবতার জগতে। একবিংশ শতাব্দীতে। এখন আর এ ধরনের অপঘটনা ঘটা সম্ভব নয়। এখন ‘কাজির গরু কাগজে আছে গোয়ালে নাই’ এটা হতেই পারে না।

এখন আমরা বড্ড ভালো আছি।

৩২৯২ পঠিত ... ১৯:০০, মার্চ ২৬, ২০২০

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top