মিথ্যা বলার যেসব সুফলের কথা অনেক বড় মিথ্যুকরাও জানে না

১৮১৬ পঠিত ... ১৬:৪৪, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২০

[পোলিশ বংশোদ্ভূত ইসরায়েলের লেখক এটগার কেরেটের জন্ম ১৯৬৭ সালের ২০ আগষ্ট তিনি একাধারে গল্পকার, গ্রাফিক ঔপন্যাসিক, নাট্যকার, কমিক লেখক এবং শিশু সাহিত্যিক।  এটগার কেরেট ছোটগল্পের বাইরে নানা মাধ্যমে কাজ করলেও, বর্তমান বিশ্বের উল্লেখযোগ্য একজন ছোটগল্পকার হিসেবেই মূলত তার পরিচিতি।  কেরেটের চমকপ্রদ, উদ্ভট, ম্যাজিক্যাল ছোটগল্পগুলি কেরেটের সূক্ষ্ম রসবোধ ও গভীর জীবনবোধে ভাস্বর।] 

লোকটারে দেখেন।  ঝুমবর্ষার মধ্যে রাস্তায় সে দাড়ায়ে আছে, সবাইরে বলতেছে যে ঠান্ডা নাই। জমে যাওয়ার মতো তাপমাত্রা না মোটেই, এবং সে একটা হাঁচিও এখন পর্যন্ত দেয় নাই। ঘামের দানার মতো বৃষ্টির ফোটা তার গাল বেয়ে নেমে আসে- আর তার মুখটা - সত্যি সত্যি নিজের চোখে না দেখলে আপনার বিশ্বাস হবে না: তার মুখটা একটা নিখুঁত মহাজাগতিক ফেনোমেনন, একটা ব্ল্যাকহোল রিয়ালিটিরে এক দিকে গিলে ফেলে অন্য দিক দিয়া সম্পূর্ণ নতুন কিছু হিসেবে বাইর কইরা দেয়। এখন সে আত্মবিশ্বাসের সাথে  বলতেছে কী দারুণ ভবিষ্যৎ আমাদের সন্তানদের জন্য অপেক্ষা করতেছে। আবার কোনো প্রসঙ্গ ছাড়াই কাউরে সে খোদার অস্তিত্ব বিষয়ক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ শুনানো শুরু করবে। এবং বলবে যে এই খোদা মনে করে আমরা সবকিছু ঠিকঠাকই করতেছি। তারপর সে ছোট-খাটো কোনো ক্যাফেতে যাবে, গরম গরম লেবু চা খাবে এবং কাফেটার কফি নিয়া আজে-বাজে কথা বলবে।  

সবসময় কিন্তু সে এমন ছিলো না। ছোটবেলায় সে একটা মিথ্যা কথা সে বলতে পারতো না। একবার স্কুলের ক্লাসরুমে ভেঙে গেছিলো। ক্লাসের সবার সামনে সে হাত তুলে স্বীকার করে নিছিল যে  জানলায় সে-ই পাথর ছুড়ে মারছিলো। অথচ তার এইসব সততা তারে কিশোর অপরাধীর তালিকায় নিয়া যাওয়া ছাড়া কিছুই করে নাই। দীর্ঘ ও ক্লান্তিকর এই দীর্ঘযাত্রার একপর্যায় এক মোড়ে পৌছায় এবং পল্টি মারে। তারপর আর পেছনে ফিরে চায় নাই। 

প্রথম দিকে সে মিথ্যা বলতো খালি অপরিচিত লোকের সাথে। পরে যাদেরকে সে ভালোবাসতো আর সবশেষে নিজের সাথে। সবচেয়ে বড় মিথ্যা হইলো নিজের সাথে মিথ্যা। আপনার মোজা ভিজায়ে দেয়া নোংরা-কাঁদার রিয়ালিটি থেকে উষ্ণ আর মখমলের কোনো দুনিয়ায় যাওয়া এক মিনিটের মামলা। একটা কথা বলে দিলেই হইলো, ব্যর্থতাগুলা হয়া যায় নিজের ইচ্ছায় আত্মসমর্পন, নিঃসঙ্গতা বেছে নেয়ার জিনিস, এমনকি মৃত্যু যা আপনার সমাপ্তি ঘটায়ে দেয় তারেও বেহেশতের ওয়ান-ওয়ে টিকিট বানায়ে ফেলা যায়।  

লোকটা কিন্তু বোকা না। সে জানে সবাই তার কাজকর্মরে ভালো চোখে দেখে না।  উগ্রবাদী এমন অনেকেই থাকবে যারা মামুলি ব্যাপাররেও এমন প্রশংসা করবে যেন এইটা শিহরণ জাগানো কোনো অদ্ভুত ব্যাপার। আপনি কখনও আবর্জনা স্তূপ বা ব্যাঙাচি বা পোকা-মাকড়রে মিথ্যা বলতে দেখছেন? সৃষ্টির সেরা জীব, মানষেরই খালি কথা বইলা দুনিয়ার বাস্তবতা বদলানোর ক্ষমতা আছে। ঠিক বাস্তবতাও না, কিন্তু কিছু বদলায়। কিছু একটা যা শক্ত কইরা ধরে রাখলে আমরা টিকতে পারবো, ভেসে থাকতে পারবো। 

এখন কাজে ব্যস্ত তারে দেখা যাক। ডানে, তার স্ত্রী ও দুই সন্তান যাদেরকে সে পাগলের মতো ভালোবাসে। বায়ে, স্লিম ফিগারের এক ওয়েট্রেস যে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে ডিগ্রি পাইতে চায়। সে ওয়েট্রেসরে চুমু খাইতেছে আর নিজেরে বুঝতেছে যে এই কাজে খারাপ কিছু নাই। এরপর একদিন কিন্ডারগার্টেন থেকে তার দুই সন্তানরে নিয়া আইসা তাদের বুঝানো শুরু করলো, আব্বু-আম্মু কিভাবে তাদের দুনিয়াতে নিয়া আসছে।  

কয়েক মিনিটের ব্যবধানে মিলনোত্তর সিগারেট খাইতে খাইতে স্লিম ফিগারের ওয়েট্রেস আর নিজেরে সে বলবে যে ভালোবাসার এমন তীব্র আনন্দ সে জীবনেও পায় নাই। ভালোবাসা প্রাকৃতিক শক্তির মতো, আপনারে ভাসায়ে নেয়া ঘুর্ণিঝড়ের মতো, যার প্রতিরোধ করতে যাওয়া বৃথা। 

এখন থেকে দুই মাস পর, পেতাক তিকভার একটা ভাড়া করা এপার্টমেন্টে, জমজদের সাথে শুয়ে, অস্বস্তিকর আনন্দদায়ক স্বপ্ন দেখার বাসনা নিয়া ক্লান্ত আর একাকী প্রত্যেকটা উইকেন্ডের জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে করতে সে ভাবে, এইসব কিছু ঘটছে কারণ সে নিজেরে খুঁজে পাইছে। অনেকটা বিদেশি ফিল্ম যেখানে স্লিম ফিগারের ওয়েট্রেস তারে টানতে টানতে আর্টহাউস সিনেমা দেখাইতে নিয়া যায় আর সে একঘেয়েমিতে আক্রান্ত দর্শকের মতো সাইডালাইনে বইসা থাকে- এমনটা সে করে নাই। কারণ যতটা পরিপূর্ণভাবে জীবনরে উপভোগ করা যায় সে চেষ্টা করছে।  

এই সেপ্টেম্বরে সে মিথ্যা বলার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেবে। ধারাভাষ্যকারেরা আশাবাদী, সে দেশের জন্যে একটা পদক জয় করে আনবে। সে দুর্দান্ত, তারা বলে, এমনকি যদি অসম্ভব ঘটে আর সে হেরে যায়, এই ব্যাপারে সন্দেহের লেশমাত্র নাই সে নিজেরে- এবং আমাদেরকে- বিশ্বাস করাইতে পারবে যে জয়ী আসলে সে-ই।  কারণ সে এমনই: শিরোপা জেতার মাল। চোখ তার পদকে। সত্যিরে না কইরা দিয়া, মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিতে সে মোটেই ভয় পায় না। এমন ব্যক্তি যে কোনো কাজের জন্যে কখনও আফসোস করে নাই, আর আফসোস থাকলেও সে কক্ষনো স্বীকার করবে না।

১৮১৬ পঠিত ... ১৬:৪৪, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২০

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top