শেখ সাদীর গল্প : জীবন মৃত্যু

২৯৩৮ পঠিত ... ১৯:১৫, সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৯

 

বয়স তার প্রায় একশো বছর।

অতি বৃদ্ধ এক লোক। কঠিন অসুখ তার। এই বুঝি তার প্রাণ যায় এরকম অবস্থা।। মৃত্যশয্যায় সেই বুড়োলোকটা গোঙাতে লাগল। বিড়বিড় করে সে কথা বলছে ফারসি ভাষায়।

কিন্তু বুড়োর মৃত্যশয্যায় যারা উপস্থিত হয়েছেন তাদের কেউই অবশ্য একবর্ণ ফারসি বোঝে না। ভারি মুশকিল। মৃত্যুশয্যায় মানুষ অনেক প্রয়োজনীয় কথা বলে। এইসব কথা না বুঝলে চলবে কী করে?

লোকজন ছুটে গেল কবি শেখ সাদীর কাছে। কারণ শেখ সাদী একজন জ্ঞানী ব্যক্তি এবং কবি। একজন বললো, কবি, শিগগির চলুন। এক বুড়ো মৃত্যুশয্যায় কী বলছেন তা কেউই বুঝতে পারছে না।

শেখ সাদী দ্রত এসে উপস্থিত হলেন বুড়োর মৃত্যুশয্যায়। বুড়ো তখন কবিতা আবৃত্তি করছেন। সেই কবিতার অর্থ হল: হায়রে জীবন! এই জীবনে কত কিছু দেখার ছিল। কিছুই না-দেখে আমাকে মৃত্যুবরণ করতে হচ্ছে। বাগানে ঘুরে ঘুরে একটা গোলাপের পাশেই মরে গেলাম। পুরো বাগানটা আমার দেখা হল না।

বুড়োর বেঁচে থাকার আগ্রহ দেখে কবি শেখ সাদী ভারি অবাক হলেন। সকলে কবিতার অর্থ শুনে একেবারে চোখ কপালে তুলল। একশো বছর বেঁচে থেকেও বুড়ো আরও বাঁচতে চাইছেন।

কবি তাকে প্রশ্ন করলেন, আপনি কেমন আছেন? এখন আপনার কেমন লাগছে?

বুড়ো মৃদুস্বরে জবাব দিল, এই জীবনের চেয়ে প্রিয় আর কী আছে? একটা দাঁত তোলার ব্যথা সারাজীবন ভোলা যায় না। আমার প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে- এই যন্ত্রণার কথা আমি কী করে বর্ণনা করি?

শেখ সাদী তখন বললেন, আপনি শান্ত হন। মানুষ কখনও চিরদিন বাঁচে না। একদিন না একদিন মানুষকে মরতে হবেই। শরীর থাকলে অসুখ-বিসুখ থাকবেই। আমরা চিকিৎসক ডেকে আনি। তিনিই ব্যবস্থা করবেন।

তখন বুড়ো বললেন, অনেক কথাই বলা যায়। কিন্ত সময় ও স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করেন না। যে বাড়ির দেয়ালের রং নষ্ট হয়ে গেছে, চুন-সুরকি খসে গেছে, সেই বাড়ির চুনকাম করার কোনো মানে হয় না। আজ আমি বুড়ো হয়েছি, জীবনের শেষপর্যায়ে এসেছি, চিকিৎসক এনে আর লাভ কী? চিকিৎসক কি আমার যৌবন ফিরিয়ে দিতে পারবে?

বলেই বুড়ো হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন।

শেখে সাদীর মুখে সান্ত্বনার কোনো ভাষাই নেই। বুড়োর মৃত্যুশয্যায় তিনি স্থিরভাবে বসে রইলেন।

২৯৩৮ পঠিত ... ১৯:১৫, সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৯

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top