ফেলুদা এবং চেস্টার বেনিংটনের মৃত্যুরহস্য

১৯১৪ পঠিত ... ১৭:৩৩, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৯

১.
ফেলুদা এখন আর লোকাল কোনো কেস নিতে চায় না। কিছুদিন আগে পাশের ফ্ল্যাটের প্রণব বাবু এসেছিলেন। বললেন, 'আমাকে বাঁচান মশাই! গতকাল রাতে আমার নতুন শাওমি ফোনটা কে বা কারা চুরি করে নিয়ে গেছে! কিছু একটা করুন!'

ফেলুদা সব শুনে শান্ত ভঙ্গিতে বলল, 'খামোখা চিন্তা না করে নতুন একটা কিনে ফেলুন তো। এই কেস চালানোর টাকা দিয়ে তিনটা নতুন ফোন কিনতে পারবেন।'

প্রণব বাবু মন খারাপ করে চলে যেতেই ফেলুদা শাল জড়িয়ে আয়েশ করে আরাম কেদারায় বসতে বসতে বলল,

: বুঝলি তোপসে, সব কিছুর একটা বয়স আছে৷ ফোন-টোন চুরির কেস এখন আর মানায় না। এখন তো 'বাদশাহী আংটি' কেসটার কথা ভাবলেও হাসি পায়।'
: বুড়ো হয়ে গেছো, এটা বলতে চাচ্ছো?
: আলবৎ হয়েছি। জুলফিতে পাক ধরেছে। দৌড় ঝাপ দিয়ে মগনলালের পিছু নেয়ার বয়স কি আর আছে!

বলেই ফেলুদা একটা চারমিনার ধরালো।

ফেলুদা বুড়ো হয়ে গেছে, এটা ভাবলেই আমার মন খারাপ হয়ে যায়। আমি তাই আর কথা বাড়ালুম না। তবে এটা জানি যে, কেস ছাড়া ফেলুদা থাকতে পারে না। ও যে এখনো কিছু একটা ভাবছে এটা ওর ধোয়ার রিং ছাড়া দেখেই বুঝতে পারছি। অবশ্য কী ভাবছে সেটাও আমি জানি।

বেশ ক'মাস আগের কথা। জটায়ু হুড়মুড় করে হাঁপাতে হাঁপাতে ঢুকলেন। আমরা তখন টমেটোর সস দিয়ে সিঙ্গারা খাচ্ছিলাম। আমাদের দিকে বড় বড় চোখে তাকিয়ে জটায়ু বললেন, 'সেকি মশাই! এত বড় কান্ড হয়ে গেলো আর আপনারা বসে বসে সিঙ্গারা খাচ্ছেন? এও সম্ভব?'

ফেলুদা হেসে বলল, 'সিঙ্গারা খাওয়ার চেয়ে বড় কান্ড আবার হয় নাকি?'
: হয় মশাই! ইন্টারন্যাশনাল কেস!
: তাই নাকি? ঝেড়ে কাশুন তো।

এরপর জটায়ু হড়বড় করে যা বলল তার সারমর্ম দাঁড়ায়, 'বিখ্যাত ব্যান্ড লিংকিং পার্কের ভোকাল চেস্টার বেনিংটন আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু তার আত্মহত্যা করার কোনো কারণ নেই। এটা নির্ঘাৎ মার্ডার।

আমি ভাবলুম এসবে ফেলুদা আগ্রহ দেখাবে না। কিন্তু ফেলুদা আগ্রহ দেখালো। এই কেসটা বোধ হয় ওর বয়সের সাথে যায়। সেই থেকে ফেলুদার মাথায় একটা নামই ঘুরছে- চেস্টার বেনিংটন।

পরদিনই আমাকে সাথে নিয়ে ফেলুদা ইউটিউবে লিংকিং পার্কের সবগুলো গান শুনলো। বেশ কিছু গানের লিরিকের গুরুত্বপূর্ণ অংশ টুকে রাখতেও দেখলাম ওকে।

আমার উপর দায়িত্ব পড়ল উইকিপিডিয়া ঘেঁটে লিংকিং পার্কের ইতিহাস বের করা। অবস্থা এমন দাঁড়ালো যে, মাঝে মাঝেই দেখতাম ফেলুদা গুণগুণ করে লিংকিং পার্কের গানও গাইছে!

তারপর বহুদিন আর চেস্টার বেনিংটন নিয়ে ফেলুদার সাথে আলাপ হয়নি। ভেবেছিলাম ফেলুদা হয়তো ভুলেই গেছে। কিন্তু 'চেস্টার' নামটা যে ওর ব্রেনের এক কোণায় ঠিকই হাইলাইটার দিয়ে দাগানো ছিলো সেটা গতকাল বুঝতে পারলাম।


২.
'কি তাজ্জব ব্যাপার মশাই! ধরুন, মূর্তি বানানো হয়েছে আপনার আর চেহারা অবিকল আমার মত, ব্যাপারটা কেমন হবে একবার ভাবুন তো!' জটায়ু ফেসবুক স্ক্রল করতে করতে ফেলুদাকে বলল।

ফেলুদা একটা নিউজ পড়ছিলো। বিরক্তি নিয়ে বলল, 'হেয়ালি করবেন নাতো। ক্লিয়ারকাট বলুন।'

: আপনি তো ফেসবুকে ঢুকবেন না। জানবেন কিভাবে? মেসেঞ্জারে লিংক পাঠিয়েছি, একটা ঢু মেরে দেখুন না। কাজে দেবে!

ফেলুদা লিংক ওপেন করে পড়তে পড়তে বিড়বিড় করে বলল, 'মৃণাল হক...'
: ইন্টারেস্টিং ক্যারেক্টার মশাই! যেটাই বানাচ্ছে সেটাতেই চেহারা মিলছে না। আমার মনে হয় উনি আসলে সেলিব্রেটিদের পূর্বপুরুষদের চেহারাটা বসাচ্ছেন।

অলংকরণ : সালমান সাকিব শাহরিয়ার

ফেলুদা জটায়ুর কথা ইগনোর করে আমাকে বলল, তপসে! তুই লিংকিং পার্ক এর উপর একটা নোট করেছিলি না?
: হ্যা সেতো অনেক আগে!
: ওটা খুঁজে নিয়ে আয়। আর আমার ডায়রিটা।

বুঝলাম আজ বিকেলে আর ফেলুদা কথা বলবেনা। সারাটা বিকাল কিছু নিয়ে ভাবতে থাকবে৷ আমি আর জটায়ু তাই ইউটিউবে মুভি দেখতে বসলাম। আড়চোখে দেখলাম, ফেলুদার সামনে চেস্টার বেনিংটনের একটা সাদাকালো ছবি।


৩.
রাতে ভাত খাওয়ার সময় ফেলুদার মুখে হাসি দেখতে পেলাম। একবার বলল, 'জটায়ু লোকটা বেশ কাজের বুঝলি। আজ মৃণাল হকের খবরটা ভাজ্ঞিস দিয়েছিলো!' আমি চুপ করেই থাকলাম। জানি, সময় হলে ও নিজেই সব বলবে।

খাওয়া শেষে ফেলুদা বারান্দায় হাঁটাহাঁটি করতে করতে আমাকে বলল, তোর কী মনে হয় তোপসে?
: কোন ব্যাপারে? মৃণাল হক?
: হ্যা, ভাস্করাচার্য মৃণাল হক কি চেস্টার বেনিংটনের মূর্তিও বানাতে চেয়েছিলেন? আর এই কথা কি কোনোভাবে চেস্টার জেনে ফেলেছিলো?...

বলেই ফেলুদা চুপ হয়ে গেলো। ফেলুদা কি তাহলে চেস্টারের সাথে মৃণাল হকের ব্যাপারটা মিলিয়ে ফেলেছে! দুয়ে দুয়ে চার!

বুঝলাম, নানান প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ফেলুদার মাথায়। হঠাৎ ও আমাকে বলল 'তোপসে, চট করে আমার ডায়রিটা নিয়ে আয় তো।'

আমি ডায়রি এনে দেখি ফেলুদা একটা চারমিনার জ্বালিয়ে আনমনে টেনেই চলেছে। ডায়রি দিতেই বলল, 'চল! এক্ষনই বেরোতে হবে!'

আমি অবাক হয়ে বললাম, 'কোথায় যাবে এই রাতে?'

'গুলশানে! সেলিব্রেটি গ্যালারিতে!' চকচকে চোখে ফেলুদা উত্তর দিলো। উত্তর শুনেই বুঝতে পারলাম, কেসটা ও আরো দশ মিনিট আগেই সলভ করে ফেলেছে।

আমার মনটা হঠাৎ ভাল হয়ে গেলো। ফেলুদার বয়স তো মোটেই বাড়েনি দেখছি!

১৯১৪ পঠিত ... ১৭:৩৩, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০১৯

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি

স্যাটায়ার


Top