বিশ্ব অর্থনীতিতে দোলা দিয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতিবিদ লোটাসের ভূমিধস অর্থনৈতিক চিন্তা। বিশ্বের প্রচলিত অর্থনৈতিক স্কুল অফ থটগুলোকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে লোটাস স্কুল অফ থট। লন্ডন স্কুল অফ ইকোনোমিকস, হার্ভার্ড স্কুল অফ বিজনেসের একাডেমিক বৃত্তে লোটাস এখন হার্ট থ্রব। অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার বলে খ্যাত ব্যাংকার্স অ্যাওয়ার্ডটি বাংলাদেশের ব্যাংক সেক্টরে দোলা দেয়া লোটাসকে নিবেদন করা এখন কেবল আনুষ্ঠানিকতার ব্যাপার।
অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের ‘গ্রোথ উইথ ইকুইটি’-র বিপরীতে লোটাসের গ্রোথ উইথ ইনইকুইটি সূত্রটিকেই বেশি বাস্তবসম্মত বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের কয়েকজন প্রবাদপ্রতিম অর্থনীতিবিদ।
প্রবীণ অর্থনীতিবিদ দরবেশ বলেছেন, ‘লোটাসের সূত্রে দিনবদলের ইঙ্গিত আছে। যে কোনোসময় একটি ব্যাংক ২২ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিতে সক্ষম না হলে ওসব ব্যাংক থাকার প্রয়োজন কী! লোটাসের থিওরি ব্যাংককে এমন উদার ও সক্ষম করে তুলেছে।‘
অর্থনীতিবিদ মখা আলমগীর বলেন, ‘ফার্মার্স ব্যাংকের স্তম্ভ ধরে নাড়াচাড়া করার সময় লোটাসের সূত্র মেনে যদি উদারভাবে ২২ হাজার কোটি টাকা ঋণ পেতাম; তাহলে আর ব্যাংকটা হাতছাড়া হতো না। ঐ সময় আবুল মাল মুহিত অর্থনীতিবিদ না হওয়ায় অযথা কার্পণ্য দেখিয়েছেন।‘
অর্থনীতিবিদ এস আলম বলেছেন, ‘লোটাস ইকোনোমিক থিওরিতে হাওরে পদ্ম ফোটানোর প্রতীতী আছে। অর্থনীতিতে ক্যাশিয়ারদের ভূমিকা প্রধান করে তুলেছেন মি. লোটাস। দেখুন একটি ব্যাংক খেয়ে দিলেই দেশের অর্থনীতির ক্ষতি হয় না। বরং তা অফশোর অ্যাকাউন্টকে সমৃদ্ধ করলে বিশ্ব অর্থনীতিতে দোলা দেয়। আমি ইসলামি ব্যাংকের পুকুরে ঢিল দিয়ে দেখেছি। সেই ঢেউ সিঙ্গাপুর, ভার্জিনিয়া আইল্যান্ডস ও সাইপ্রাসের ব্যাংকে দোলা দিয়েছে। লোটাসের অর্থনীতি আসলে দোলাভত্তিক এক ধন্বন্তরী বিদ্যা।‘
অর্থনীতিবিদ সম্রাট বলেছেন, ‘বাজারে যখন মুহিতের রক্ষণশীল অর্থনীতি ছিলো তখন উদার অর্থনীতির জনক লোটাস পৌঁছে যান আশার বাতি নিয়ে। আসলে ক্যাসিনোও যে ব্যাংক এটা বোঝার মতো আধুনিক মনন সব অর্থনীতিবিদের নেই। মুহিত বলেছিলেন, “বাংলাদেশ বটমলেস বাস্কেট থেকে উপচে পড়া ঝুড়ি হয়েছে।“ কিন্তু সেই ঝুড়ি উপচে পড়তে পারে ক্যাসিনোতে; এ তার সীমাবদ্ধ কল্পনায় আসেনি। লোটাস সেটা বোঝেন, তাই তো তিনি বলেছেন, “যারা বলছে দেশের অর্থনীতি ভালো নাই, তারা আসলে অর্থনীতির কিছুই বোঝে না।“
অর্থনীতিবিদ পিকে হালদার বলেছেন, ‘আমার ভুল হয়েছিলো অমর্ত্য সেনের সনাতন অর্থনীতির দেশে আসা। আমি যদি ধরুন ক্যারিবিয়ান আইল্যান্ডে যেতাম, তাহলে লোটাসের অর্থনীতির উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে অর্থনীতি গ্রন্থে পাঠ্য হতে পারতাম। আরে বাবা ঐসব কার্লমার্কসের অর্থনীতি দিয়ে তো আর উন্নয়ন হয় না।‘
অর্থনৈতিক উন্নয়নে নিশিভোটসূত্র প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ বেসিক বাচ্চু বলেন, ‘আসলে সাংস্কৃতিক বাচ্চুদের ভোটসমনিয়ার যুগটি দেরিতে আসায় বেসিক ব্যাংককে ব্যর্থ হতে হয়েছে। মনে রাখতে হবে দিনের ভোট অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। কারণ রাতের ভোটে অর্থনৈতিক ধারাবাহিকতা থাকে। ধরুন একটি ব্যাংকের নৌকা ডুবে যাচ্ছে; তখন এম ভি লাইলাতুল ইলেকশানের উদ্ধারকারী জাহাজ এসে ব্যাংকের নৌকাটিকে তীরে পৌঁছে দিতে পারে। ঋণখেলাপীর ইনডেমনিটি ও কালোটাকা সাদা করার অবারিত সুযোগ ছাড়া বাচ্চু কখনো বড় হতে পারে না।‘
লোটাস অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে বিশ্বের দ্রুততম ধনী তৈরির জাদু। মাত্র পনেরো বছর আগে কুঁড়ে ঘরে পান্তা খেতো, এখন সেকেন্ড হোমে বসে গোলাপ খায়, অর্থনীতির দুর্জয় উন্নয়নের শিখরে এই যে বিকল্পহীনতার ধারাপাত, পৃথিবীর আর কোন দেশের অর্থনীতি কী এই জ্যামিতিক প্রবৃদ্ধি কল্পনা করতে পারে। এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হোয়াইট টাইগার বলেন, ‘আমি লোটাসের অর্থনীতিকে, ফাদার অফ ইকোনমি বলতে চাই। আমি পুণ্যভূমিতে মাজার ধরে কেঁদে, হেলমেট পরে হাতুড়ি সঞ্চালন করে, আনুগত্যের সঙ্গে কান্না ও পেশী মিশিয়ে গলি থেকে রাজপথে এসে গেছি। আমি লোটাসের অর্থনীতির সাকসেস স্টোরি।‘
রাখাল অর্থনীতির জনক আতিউর রহমান বলেছেন, ‘একটি গাড়ি পথ দিয়ে গেলে ধুলো উড়বেই। সুতরাং অর্থনীতির গাড়ি জোরে চললে দুর্নীতির যে ধুলো উড়বে, তা অর্থনীতির সুফল পথে রেখে যাবে রাজনীতির রাখাল বালকদের জন্য। আমি রবিনহুডকে এই অর্থনীতির প্রধানপুরুষ মনে করি। আর আবুল মাল মুহিত যখন বলেন, কয়েক হাজার কোটি কোন ব্যাপার নয়, তখন তার মধ্যে রবীন্দ্রনাথের জমিদারির টাকা বিলিয়ে দেবার ঔদার্য্যের যোগসূত্র পেয়েছি। হাজি মুহম্মদ মুহসীন নিজের উপার্জিত টাকা ফকিরদের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছেন, আর আমি ব্যাংকের টাকা ফকিরদের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছি। ব্যাংকের টাকা তো জনগণের টাকা, পলিটিক্যাল বেগারেরা তো জনগণেরই অংশ। সুতরাং ব্যাংকের টাকা তাদের প্রাপ্য। অনেক দেরীতে হলেও লোটাসের অর্থনীতি আমার চিন্তার পক্ষে দাঁড়িয়েছে। আমাকে ঠিক প্রমাণ করেছে।‘
এই ইকোনোমিক থিওরিকে ‘থিংক বিগ এক্সপেক্ট লেস’ কেন বলা হচ্ছে, এটা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে প্রবাদপ্রতিম অর্থনীতিবিদ লোটাস বলছেন, অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, বিনায়ক সেন, এরা বড় চিন্তা করতে সক্ষম নন। তারা সারাক্ষণ দ্রব্যমূল্যের লাগাম ছাড়া ঘোড়া, ব্যাংক ডাকাতির লাগাম ছাড়া ভালুক, দুর্নীতির লাগাম ছাড়া শৃগাল, শেয়ার বাজারের লাগাম ছাড়া বানর, টাকা পাচারের লাগাম ছাড়া কুকুর, কালো টাকার লাগাম ছাড়া বেড়াল নিয়ে এমনভাবে আলাপ করেন, যেন অর্থনীতি জর্জ অরওয়েলের এনিমেল ফার্ম। আকবর আলী একে শুয়োরের বাচ্চার অর্থনীতি বলেছেন একই চিন্তা থেকে। অথচ অর্থনীতি হচ্ছে গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের শত বর্ষের নীরবতা। নীরবে তারল্য বয়ে বেড়াবে প্রশান্ত, ভারত, আরব, পারস্য ও আটলান্টিক সাগরে। গ্লোবালাইজেশানের এই যুগে বড় চিন্তা করতে শিখতে হবে। সবাই তো সম্পদ আহরণের যোগ্য নয়। তাই আমি মনে করি ম্যাক্রো ইকোনমি থাকবে দলীয় ক্যাশিয়ার বা মাজারের প্রধান প্রধান খাদেমের হাতে। আর মাইক্রো ইকোনমি থাকবে জনগণের হাতে। একদল বড় চিন্তা করবে, আরেকদল ছোট ছোট আশা আনন্দ নিয়ে বাঁচবে। যেমন পদ্মাসেতু দেখার আনন্দ, মেট্রোরেলে চড়ার আনন্দ, ডিম সিদ্ধ করে ফ্রিজে রেখে কয়েকমাস পরে তা খাওয়ার আনন্দ কিংবা সত্যানন্দের ‘এক টাকার আহার’ ‘দুই টাকার এসির বাতাস’-এর আনন্দ।
ফাদার অফ থিংক বিগ এক্সপেক্ট লেস আরও বলেন, ‘বড় চিন্তাটা উনাকে করতে দেন, উনার চিন্তার বিকল্প নেই। আপনি ছোট চিন্তা করবেন তাহলেই দুঃশ্চিন্তাহীন নতুন জীবন পাবেন। যারা অর্থনীতি পড়েনি কিছুই বোঝে না, তারা বলতে চায় যে, আমাদের অর্থনীতি ভালো নাই। স্মার্ট বাংলাদেশের অর্থনীতি হচ্ছে জাহাজের খবর , আদার ব্যাপারীরা এর কী বুঝবে বলুন।'
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন