আয়নাঘরে ডিম ফুটে ন্যাশনালিস্ট মোরগের জন্ম

২৯৬ পঠিত ... ১৭:১৪, আগস্ট ১৩, ২০২৩

Aynaghor

সে এক সমৃদ্ধ সময় ছিলো; যখন আয়নাঘর ভর্তি ডিম ছিলো, হারুনের ভাতের হোটেলে ভাত ছিলো; অভিজাত কোটাল পুত্রদের ছিলো অস্ত্র উদ্ধারে যাবার সংকল্প, মিডিয়াজুড়ে ছিলো "ওয়ার অন টেররে"র ধারাবাহিক নাটক, স্বাধীনতার বন্ধুদের ছিলো হেলমেট আর হাতুড়ির কাব্যকলা।

কিন্তু ঐ সব্বোনেশে মানবাধিকার সংস্থা, দেশের শত্রু সুশীল আর স্বাধীনতার শত্রু বিরোধীদলেরা গিয়ে আংকেল স্যামের কানভারি করে অভিজাত কোটাল পুত্রদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আর উন্নয়নের সেকেন্ড হোমারদের ওপর ভিসা স্যাংশান এনে দিলে; তখন "গণতন্ত্রে"-র ডিম তা দিয়ে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বাচ্চা ফোটানোর দায়িত্ব পড়ে গেলো।

শুরু হলো ডিম সংকট। আয়নাঘরে অভিজাত কোটাল বাহিনী বসে গেলো ডিমে তা দিতে। এখান থেকে নতুন জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের বাচ্চা ফোটাতে হবে।

এই বাচ্চা ফুটলে গণতন্ত্রের মোরগ-মুরগিরা থাকবে কোথায়! মুরগির খোপে নতুন চেয়ার টেবিল ব্যানার মাইক্রোফোন কত কিছুই তো লাগবে। ৩০০ আসনের জন্য কমপক্ষে ৩০০ টি মোরগ-মুরগী চাই।

ওদিকে সাড়ে চুয়াত্তর টিভি সালিশে যেখানে মর্জিনা আপা সরকারি সিংহ আর ভটভটিকে সঙ্গে নিয়ে বিরোধী দলের মুখে চুনকালি মাখাতো; সেইখানে যেতে আর রাজি নয় বিরোধী দল। সেই টিভি থেকে তাড়া আসে; তাড়াতাড়ি গণতন্ত্রের ডিম ফুটিয়ে জাতীয়তাবাদী নেতার বাচ্চা বের করুন। টিভি সালিশে বিরোধী দল না থাকলে গণতন্ত্রের তৈলচিত্রটা ঠিক ফুটে ওঠে না।

আয়নাঘরে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মুরগীর বাচ্চাগুলো ডিম ফুটে বের হয়ে চি চি করতে থাকে। এগুলোকে তাড়াতাড়ি বড় করতে গোয়েন্দা হাজির বিরিয়ানির দোকান থেকে বিরিয়ানি এনে খাওয়ানো হয়। মুরগীর বাচ্চারা চি চি করে বলে, শুনেছি আপনাদের বিরিয়ানি খেয়ে বড় হলে নাকি ব্যাংকও খাওয়া যায়।

: হবে হবে সব হবে; আগে বড় হও গণতন্ত্রের বাচ্চা।

সেন্টার ফর রুথলেস ইন্টেলিজেন্স (ক্রাই)-এর ছোট চুল সুঠামদেহী সিনিয়র ফেলো মুরগীর বাচ্চাগুলোকে পলিটিক্যাল রেটরিক শেখায়; টিভি সালিশে কীভাবে কথা বলতে হয় শেখায়। সিনিয়র ফেলো বলে, চিন্তা নেই, লাইভ টিভি সালিশের সময় আমি হোয়াটস এপে উত্তর লিখে পাঠাবো!

এক মোরগ সাহস করে বলে, আপনারা তোতা পাখির ডিম ফুটালে ভালো করতেন। তোতারা কথা মুখস্থ করতে পারে বেশি করে।

অবশেষে সবচেয়ে বুদ্ধিমান মোরগটাকে নিয়ে যাওয়া হয় সাড়ে চুয়াত্তর সালিশে। সিংহ দেখে সে ভয় পায়। ভটভটি আশ্বাস দেয়, এই সিংহ তোমাকে কামড়াবে না!

প্রোডিউসার হোস্ট মর্জিনা আপাকে টক ব্যাকে বলে, এইটা কী কপিল শর্মা কমেডি শো, যে নকল শাহরুখ খান দিয়ে কাজ চালাচ্ছেন!

: দর্শক চিনতেই পারবে না দেখে নিও; ভাববে আসল এটাই আসল শাহরুখ খান।

মর্জিনা আপা জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মোরগটাকে জিজ্ঞেস করে, এই সরকারের অধীনে নির্বাচন কি সুষ্ঠু হবে বলে মনে করেন!

: আলবাত হবে; ওসব কেয়ারটেকার সরকারের দাবী অসাংবিধানিক। সংবিধানে যেভাবে আছে ঠিক ওভাবেই নির্বাচন হবে।

সিংহ ধমক দেয়, আপনারা কয়টি আসনে প্রার্থী দেবেন! জনপ্রিয় সরকারের সঙ্গে প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা করার কী যোগ্যতা আছে আপনাদের!

ঘাবড়ে যায় জাতীয়তাবাদী মুভমেন্টের মোরগ। হোয়াটস এপে ক্রাইয়ের সিনিয়র ফেলো লিখে পাঠায়, যে সব মানুষ সরকারের ওপর অসন্তষ্ট তারা আমাদের অবশ্যই ভোট দেবে!

ভটভটি কটাক্ষ করে, এই সরকারকে আবার কেউ অপছন্দ করে নাকি! আই আর আই-এর জরিপ দেখেননি!

প্রবল পুলকে হেসে হুটোপুটি করে মর্জিনা আপা ও সিংহ। মোরগ আরো ঘাবড়ে গেলে হোয়াটস এপে সিনিয়র ফেলো লিখে দেয়,, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে জনমনে অসন্তোষ আছে!

মর্জিনা জিজ্ঞেস করে, আপনারাও কী পশ্চিমা হাঁসের সঙ্গে সেজে গুজে রাত বিরেতে ধর্ণা দিতে যান!

সিংহ সংশোধন করে, নিশ্চয়ই মুরগীদের পাঠায়!

প্রশ্নটা কমন পড়তেই মুভমেন্টের মোরগ চেঁচিয়ে ওঠে, আমরা দেশপ্রেমিক, আমরা জাতীয়তাবাদী; যারা বিদেশীদের সঙ্গে দেখা করে হস্তক্ষেপ প্রত্যাশা করে তারা দেশের শত্রু।

এসময় টিভির একটা টিকার যেতে থাকে স্ক্রলে, দিল্লি বৈঠকে বিজেপি-আওয়ামী লীগ একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করেছে।

সিংহ তখন খুক খুক করে কেশে বলে, প্রতিবেশি হলে সেটা আলাদা কথা। প্রতিবেশী তো আর বিদেশী নয়।

মর্জিনা জিজ্ঞেস করে, নির্বাচনে আপনাদের প্রতীক কী হবে!

ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্টের মোরগ বলে, আমরাই তো ধানের শীষের আসল দাবীদার। আগে যারা ধানের শীষ প্রতীক নিয়েছিলো তাদের রাজনীতি করার অধিকার নেই; তারা আআআ

কথা কেড়ে নিয়ে ভটভটি বলে, আগুন সন্ত্রাসী।

সিংহ হুংকার দেয়, তারা দুর্নীতিবাজ

মোরগ আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়ে বলে, ওদের নিষিদ্ধ করা গেলে; আমরাই কিন্তু পোকিত বিরোধী দল হতে পারবো রাতারাতি!

মর্জিনা তাচ্ছিল্য করে মুখ বাঁকা কোরে চোখের মণিটা এক কোণায় তুলে বলে, এতো দ্রুতই সাফল্য চাচ্ছেন।

মোরগ উত্তর দেয়, দ্রুততম ধনীর দেশে দ্রুততম রাজনৈতিক দল কী হতে পারে না বলুন! কমপক্ষে সংসদে গৃহপালিত বিরোধী দল।

সিংহ জিজ্ঞেস করে, নির্বাচন কমিশন কী বলছে, আপনাদের কী ধানের শীষ দেবে!

ন্যাশনালিস্ট মোরগ রেগে গিয়ে বলে, উনারা তো বলছেন গমের শীষ প্রতীক নিতে। উনারা নাকি ধানের শীষের মতো করেই এঁকে দেবেন; যাতে ভোটাররা আমাদেরকেই আসল ভেবে ভোট দেয়!

ভটভটি চোখটা কপালে তুলে বলে, উমা আপনারা কি আসল নন!

মোরগ উত্তর দেয়, আপনারা যতটুকু আসল চেতনার লোক; আমরাও ঠিক ততটাই আসল জাতীয়তাবাদের লোক!

২৯৬ পঠিত ... ১৭:১৪, আগস্ট ১৩, ২০২৩

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top