বেলারুশের ঘরে ঘরে জরিপের আনন্দ

৬৫৮ পঠিত ... ১৭:৫৯, আগস্ট ১০, ২০২৩

বেলারুশের-ঘরে-ঘরে-জরিপের-আনন্দ

১৯৯৪ সাল থেকে ক্ষমতার চেয়ারে নিজের পেছনভাগটি ফেভিকল থেকে আটকে রেখেছেন বেলারুশের নেতা লুকাশাংকা। বিরোধী দলকে নির্মূল ও বিনাশ করে একের পর এক নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় অর্জন করে হাকালুকি গণতন্ত্রের জন্ম দিয়েছেন তিনি। বেলারুশের সর্বত্র একই রব, লুকাশাংকার কোন বিকল্প নাই।

নির্বাচন প্রসঙ্গে লুকাশাংকা মনে করিয়ে দিয়েছেন মহাপরাক্রমশালী জোসেফ স্ট্যালিনের অমোঘ বাণী, জনগণের জন্য এটুকু জানাই যথেষ্ট যে একটি নির্বাচন হচ্ছে। কিন্তু ভোট কী হবে কে ভোট কে দেবে আর ফলাফল কী হবে এসব দেখবেন নির্বাচন কর্মকর্তারা। নির্বাচন কর্মকর্তাদের বড় বড় গাড়ি কিনে দাও; যাতে তারা ফল নিয়ে দ্রুত পৌঁছে যেতে পারে নির্বাচন কমিশনে!

বিরোধী দলকে বিনাশ করা গেলেও ফেসবুকে ক্যান্ডল লাইট পার্টি নামে একটি ফ্যাসিজম বিরোধী দল তৈরি হয়েছে। তারা নিরন্তর সমালোচনায় লুকাশাংকার কান গরম করে দেয়। লুকাশাংকার বিদূষক সহমত ভাইদের পক্ষে আত্মবিশ্বাস ধরে রাখা কঠিন হয়।

লুকাশাংকা কী করা যায় সে ব্যাপারে পরামর্শ নিতে তার দলের চার কর্মকর্তাকে বেলারুশের স্বামীর দেশ রাশিয়ায় পাঠায়। সেখানে মহারাজ পুতিনের চার নাতির সঙ্গে বৈঠক শেষে সিদ্ধান্ত হয়, পুতিন ও লুকাশাংকা একযোগে বেলারুশ শাসন করবেন।

পত্রিকায় এ খবর দেখেই তেতে ওঠে বেলারুশে রুশ বংশোদ্ভুত পুলিশ কর্মকর্তা বিজয়ভ বিপ্লভস্কি তালুকারুশ। সে হুংকার দেয়, ক্যান্ডল পার্টির কেউ আমাদের পুলিশের গায়ে হাত দিলে সেই হাত আস্ত থাকবে না।

পুতিন ফোন করে লুকাশাংকাকে, লুকি শুধু গরমে কাজ হবে না। একটা জরিপ করাও। এমেরিকায় রিপাবলিকান পার্টির কিছু রিটায়ার্ড বুড়োর একটা জরিপ সংস্থা আছে। ইরেলেভেন্ট রুথলেস ইন্টেলিজেন্স নামে এই সংস্থা জরিপে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে এগিয়ে রেখে রিপাবলিকানদের মনোবল জোগায়। আমার কর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করতে আমি ঐ রিপাবলিকান বুইড়াগুলিরে বলি, বানাইয়া দেও এক ছিলিম শান্তি তামুক সাজাইয়া দেও। যাতে আমার কর্মীরা এক টানেতে যেমন তেমন দুই টানেতে সুখি, তিন টানেতে রাজা-উজির, চারটানেতে খুকি হইতে পারে!

লুকাশাংকা সময় নষ্ট না করে তার উপদেষ্টা পুত্রটিকে বলে, ইরেলেভেন্ট রুথলেস ইন্টেলিজেন্স থিকা একটা সুখী জরিপ বানাইয়া আইনে দেও গো বাজান।

লুকাশাংকা পুত্র তার নিজের জরিপ সংস্থা সেন্টার ফর রুথলেস ইন্টেলিজেন্সকে দিয়ে জরিপের ফিল্ড ওয়ার্ক করায়। রেড স্প্যারোদের ডেকে এনে উড়িয়ে দেয় বেলারুশের আকাশে।

লুকাশাংকার ভক্ত, চিত্রনায়িকা, গায়িকা, টেবল ডান্সার, মোরগ স্টুডিও-র আ আ আ করা স্বর্ণকেশীদের জরিপের একটা প্রশ্ন পত্র ধরিয়ে দিয়ে বলে, যাও জনগণকে এসব প্রশ্ন জিজ্ঞেস করো গিয়ে।

টেবল ডান্সার মার্থা এক বাড়িতে কলিং বেল বাজায়। সেখান থেকে বের হন এক অশীতিপর বৃদ্ধ!

: হাই আমি মার্থা, সুপ্রভাত। আচ্ছা বলুন তো লুকাশাংকাকে কী আপনার ভালো লাগে, নাকি মোটামুটি লাগে নাকি মন্দ লাগে।

: লুকি! না না ও ফ্যাসিস্ট!

: নো নো নো নো ডার্লিং ডোন্ট ব্রেক মাই হার্ট!

: ঠিক আছে যাও মোটামুটি লাগে।

মার্থা বুড়োর কপালে চোখের আর্টিফিশিয়াল পাঁপড়ি দিয়ে  একটা প্রজাপতি চুম্বন দিয়ে বলে, এবার বলো লক্ষীটি।

: খুব ভালো লাগে, খুব ভালো লাগে।

মোরগ স্টুডিওর আ আ আ করা স্বর্ণকেশী জরিপ করতে যায় আরেক বাড়িতে। দরজা খোলে মাঝ বয়েসী এক লোক। ভেতরে তার স্ত্রী চেঁচাচ্ছে, লোকে লুকাশাংকার ভক্ত হয়ে সেকেন্ড হোম বানিয়ে ফেললো, আর এক অপদার্থ জুটেছে আমার কপালে।

: সুপ্রভাত স্যার। আপনি কী লুকাশাংকার শাসনে তৃপ্ত!

: অতৃপ্তি তো আমার সমস্ত জীবন জুড়ে; পেছনে তো দেখছেনই রওশনয়াভ জামিলস্কির ফ্যাসিজম; বলুন তো, এ খাঁচা ভাঙ্গবো আমি কেমন করে!

স্বর্ণকেশী গাঢ় আলিঙ্গনের ফরাসী সৌরভের হুল্লোড়ে লোকটিকে এলোমেলো করে দেয়!

লোকটা কিছুক্ষণ চোখ বুঁজে থেকে বলে, লুকাশাংকার সরকার, বারবার দরকার।

সেন্টার ফর রুথলেস ইন্টেলিজেন্স তাদের সংগৃহীত ডেটা এমেরিকায় পাঠায় ইরেলেভেন্ট রুথলেস ইন্টেলিজেন্স দপ্তরে। সেই ডেটা নিয়ে রিপাবলিকান বুড়োরা অনেকদিন পর রাজসিক ওয়ার্কিং ডিনার করে লুকাশাংকার ছেলের পাঠানো খাই-খর্চায়। তারপর রিপোর্ট তৈরি হয়, বেলারুশের ৮০ শতাংশ মানুষ লুকাশাংকার শাসনে সন্তুষ্ট। ৭৫ শতাংশ লোক তাকে আমৃত্যু ক্ষমতায় দেখতে চায়। গ্রাফ, পাই চার্ট দিয়ে সাতটি রঙ এর মাঝে মিল খুঁজে এনে প্রশ্নের সঙ্গে উত্তর মিলিয়ে জরিপের ফল প্রকাশ পেলে বেলারুশে ঈদুল জরিপ উদযাপন শুরু হয়।

এমেরিকান স্যাংশনের দংশনে পুঁতিয়ে যাওয়া লুকাশাংকা সমর্থক, এমেরিকা-ক্যানাডায় সেকেন্ড হোম বাতিল হয়ে যাওয়া লুকির পার্টির বাগানের শুকিয়ে যাওয়া গোলাপ; ভয় পেয়ে যাওয়া আমলা-পুলিশ; ফেসবুকের হতোদ্যম লুকি গ্যাং; সবাই আবার যেন প্রাণ ফিরে পায়।

লুকাশাংকার মামাত ভাইয়ের সংগঠন, বেলারুশ বণিক সংস্থার প্রেসিডেন্ট সাদা একটা হ্যাট পরে টিভিতে বাইট দেয়, লুকাশাংকার যে বিপুল জনপ্রিয়তার দেখা পাই আমরা এই জরিপে; তার তারিফ করে বলি, এখন থেকে সেকেন্ড হোম বানাতে ইদি আমিনের স্মৃতিধন্য  আফ্রিকায় যেতে হবে! আমৃকারে পুছিনা।

বেলারুশ টিভিতে শুরু হয় উন্নয়ন সংগীত। জরিপের মালা পরে স্বর্ণকেশীরা আ আ করে,

লুকাশাংকা গাড়ি চালায় পিছে বসে পুতিন

জরির মালা গলায় দিয়া জরিপের নাতিন

ওগো জয় লুকি বলে এগিয়ে চলো

উন্নয়নের কথাগুলোই আজকে বলো

আ আ আ....

৬৫৮ পঠিত ... ১৭:৫৯, আগস্ট ১০, ২০২৩

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top