স্মার্ট বাজেটে আশার লোডশেডিং

২৭৮ পঠিত ... ১৮:১০, জুন ০৬, ২০২৩

Ashar-loadsheding

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে স্মার্ট বাজেট দিলেন অর্থমন্ত্রী। যিনি ডুমুরের ফুলের মতো কেবল বাজেট ঘোষণার দিন সংসদের ডালে ফুটে থাকেন। সারাবছর জবাবদিহিতার জন্য তাকে পাবার জো নেই। নির্বাচনী বছরে উচ্চাকাংক্ষী এই বাজেট দেয়া হয়েছে  প্রায় ৭ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি বাজেট ২ লাখ ৫৮ হাজার টাকা।

৩৮ শতাংশ ব্যয় হবে উন্নয়ন খাতে। ৬২ শতাংশ ব্যয় হবে অনুন্নয়ন খাতে সরকারি কর্মচারিদের বেতন দিতে, ঋণ শোধে। জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা ৭.৫ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশ ধরে রাখার প্রত্যাশা রাখা হয়েছে।

বাজেট ঘোষণার পর ফেসবুকে প্রত্যেকেই একদিনের জন্য অর্থনীতিবিদ হয়ে উঠলেও সহমত সংবাদ সংস্থা (সসস) প্রকৃত অর্থনীতিবিদদের কাছে ছুটে গেছে বাজেট-প্রতিক্রিয়া নিতে।

ছাত্রলীগ বাজেট বিজয় মিছিল করার সময় তাদের নেতার প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি, ভাঁজ ভাঙ্গা পাঞ্জাবির পকেট থেকে চিরুনি বের করে চুল আঁচড়ে বলেন, ‘স্মার্ট বাজেটের প্রতিক্রিয়া জানাতে স্মার্ট হওয়া চাই। এই বাজেট নির্বাচনের আগেই দেশকে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোর মতো কল্যাণরাষ্ট্র করে ছাড়বে। আর কেউ ভিসার জন্য পশ্চিমা দূতাবাঁশের লাইনে দাঁড়াবে না। মাথাপিছু আয় মাসে হয়ে যাবে সাড়ে ১২ হাজার ডলার।‘

প্রশ্ন করতে আসিনি, প্রশংসা করতে এসেছির তারকা সাংবাদিকদের জিজ্ঞেস করা হয় বাজেট সম্পর্কে। এমিরেটাস এডিটরস গিল্ডের সভাপতি বলেন, ‘দূরদর্শিতার ঠাস বুননে এ বাজেট যেন গীতি কবিতার মতো। কলমের দাম বাড়ছে; কারণ আমরা এখন কী বোর্ডে লিখি। সানগ্লাসের দাম বেড়েছে; কারণ স্বাধীনতার শত্রু জিয়া সানগ্লাস পরতেন। বাসমতি চালের দাম বাড়ছে, কারণ এখন পাস্তা খায় নিম্ন আয়ের মানুষ। কাজু বাদামের দাম বাড়ছে। কারণ এখন বেহুঁশপতিবারে খুশিজল খাই আমরা রেশমি কাবাব দিয়ে। মাংসের দাম কমেছে। নির্বাচনের আগে অনেক বিরোধী মাংস পাওয়া যাবে তাই।‘

বাজেটের মোট ব্যয়ের অনুপাতে শিক্ষায় বরাদ্দ ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ। এ প্রসঙ্গে ছা-ছপ-ছমুছাপাচার্য বলেন, মাত্র ১০ টাকায় ছা ছপ ছমুছা পাওয়া গেলে; শিক্ষাখাতে আর খরচের জায়গা কোথায় রইলো বলুন। শিক্ষকরা বিনামূল্যে বিবৃতি লিখে দেন আজকাল; সোনার ছেলেরা এ বছর গ্রামে গ্রামে গিয়ে স্মার্ট সরকারের জন্য ভোট চাইবে। আমরা ভাবছি এ বছর অযথা ক্লাস নিয়ে কী লাভ! শুধু লাইব্রেরি খোলা থাকবে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের তপস্যার জন্য।‘

সরকারের এক সমাজতান্ত্রিক শরিক নেতা বাজেট প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমারও ডায়াবেটিস ধরা পড়লো আর মিষ্টির দাম কমলো। অনেকটা যেন, আমিও বিধবা হলাম আর লালপেড়ে শাড়ির দাম কমলো। বাজেটে ভ্রমণ কর বাড়ানোটা ভালো লেগেছে; ভিসাই নেই; ভ্রমণ করবো কোথায়! আবার ঐ গড়াই নদীর ধারে হাঁটাহাটি করবো সেই আগের মতো। শুধু একটাই আশা, নির্বাচনে দুটো আসন দিয়ে যান; আমরা গরীব ইনসান।‘

এরশাদের অনুসারী এক নেতা বাজেট প্রসঙ্গে বলেন, ‘আসছে নির্বাচনে আমাদের একটু বেশি করে আসন দিলে বলবো এ বাজেট গণমুখী; আর আসন কম দিলে বলবো, এ বাজেট গণবিরোধী। বাজেটে টিস্যুর দাম দেখলাম বেড়েছে; কিন্তু মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠক করে মনে হলো, সরকারের অশ্রু মোছার জন্য অনেক টিস্যু লাগবে। তা ছাড়া চিকন ঘামও তো হবে; টেনশনে। অবশ্য পশু খাদ্যের দাম কমবে। এতে ভোটের ক্যানভাসারদের খাদ্য সংস্থান দলগুলোর পক্ষে সহজ হবে।‘

সেন্টার ফর পারু ডার্লিং-এর সিনিয়র ফেলো দেবুদা বাজেট সম্পর্কে বলেন, ‘ঘাটতি বাজেটের ভুঁড়িটাকে সরকারের শরীরের সঙ্গে ধরে রাখতে সাসপেন্ডার ঋণ প্রয়োজন হবে। এই সাসপেন্ডার কী গৌরি সেন দেবে! এরকম ঋণ করে ঘি খাওয়া বাজেটের আশার ছলনে ভুলি রাজাপাকসের কী হয়েছিলো; তা যেন আমরা ভুলে না যাই।‘

রহমত সংবাদ সংস্থা (রসস)-এর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বিরোধী দলের নেতা বলেন, ‘ভোট চুরি করার জন্য চোরদের পেছনেই দেখলাম বাজেটের ৬২ শতাংশ বরাদ্দ করা হয়েছে। আসলে এদের অনেকেই ভিসা স্যাংশনে সেকেন্ড হোম ও বৌ হারিয়েছে তো; তাই গুচ্ছ গ্রামে তাদের নতুন ঘর আর নতুন সংসার গুছিয়ে দিতে মরিয়া এই বাজেট। এতো বাজেট দেয়ার কী আছে! চার্টার বিমানে করে চাটার দল নিয়ে এ সরকার ফিনল্যান্ড চলে গেলেই পারে।‘

রহমত সংবাদ সংস্থা (রসস)-কে ধমক দিয়ে সরকারি এক নেতা বলেন, ‘ভালো হয়ে যাও মাসুদ। স্মার্ট হও। অযথা জনমুখী বাজেটের ছিদ্রান্বেষণে সময় নষ্ট কোরো না। রিটার্ন দাখিল করলেই ২০০০ টাকা কর দিতে হবে; কাজেই ঐ লুজার বিরোধীদের পিছু ছেড়ে প্রেসক্লাবে গিয়ে আমাদের দানখয়রাত গ্রহণ করো। মনে রাখবে এটা উন্নয়নশীল দেশ; এখানে ভিক্ষুকের স্থান নেই। চেষ্টা করো ব্যাংক ঋণ নিয়ে ভাগ্য বদলাতে। ব্যাংকগুলো তো রেখেছিই আমরা রহমতদের ঋণ দিয়ে সহমত বানানোর জন্য।‘

সাবেক কেয়ার টেকার সরকারের এক উপদেষ্টা রসসকে বলেন, ‘বাজেট বক্তব্য শুনে মনে হলো; উপরিকাঠামোর পপুলিস্ট বাজেট। রোগীকে আইসিইউ-তে বাঁচিয়ে রাখার শেষ চেষ্টা। ঘাটতি বাজেট রেকর্ড পরিমাণ, কোথা থেকে আসবে এতো টাকা! মনের মধ্যে গুনগুন শুনতে পাই, ইশটিশানের রেলগাড়িটা; মাইপা চলে ঘড়ির কাঁটা; প্লাটফর্মে বইসা আছি; কখন বাজে এক এগারোটা; কখন বাজে এক এগারোটা।‘

সংস্কৃতি বাজেট নিয়ে আপনি কী সন্তুষ্ট? এ প্রশ্নের উত্তরে এক সংস্কৃতি মামা বলেন, ‘সামনে আমাদের সংস্কৃতি স্বামীর নির্বাচনী ফাঁড়া। স্বামী টেনশনে থাকলে স্ত্রী কী তাকে সংসারের বাজেট নিয়ে বিব্রত করে! করে না। আমরা সংস্কৃতি চ্যাটবটেরা হচ্ছি শাবানার মতো অনুগত স্ত্রী। খুশি হয়ে সংস্কৃতি বাজেট যা দেবে হাতে; তাই যাবে সাথে।‘

সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভরশীল এক লোক বাজেট বক্তব্য শোনার পর এতোই হতাশ হয়ে পড়েছে যে সে লাথি দিয়ে ক্যামেরা ভেঙে দেয় সসস ও রসসের দুই প্রতিবেদকের। চিৎকার করে বলে, ‘বড় লোকের ঢাক তৈরি গরিব লোকের চামড়ায়। কৃষক-শ্রমিক-মধ্যবিত্ত কেউ বাঁচবে না এ বাজেটে। জ্বালানির ওপর ভর্তুকি উঠে যাবে আই এম এফ-এর ধমকে। লোডশেডিং-এর মায়ার খেলা চলবে একদিকে; অন্যদিকে হাতির ঝিলে স্মার্ট বাংলাদেশের আলোর নাচন। এটা কোন রাষ্ট্র হলো নাকি! এ হচ্ছে জমিদারতন্ত্র।‘

 অদূরে দাঁড়ানো এক সোনার ছেলে বলে, ‘চাচা এত তড়পাইতেছেন ক্যান; হেলমেট পরুম নাকি?’

২৭৮ পঠিত ... ১৮:১০, জুন ০৬, ২০২৩

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top