বৃটিশ রাজতন্ত্রের গোধুলী লগ্ন। রাণীর মৃত্যুর পর অনেক কমনওয়েলথ রাষ্ট্রই বেরিয়ে যেতে চায় এই কলোনিয়াল হ্যাং-ওভার থেকে। রাজা চার্লস ভীষণ চিন্তিত। রাজা হিসেবে অভিষেকের এতো অপেক্ষার পর; শেষ পর্যন্ত যখন তার অভিষেক হতে যাচ্ছে; তখন ক্যারিবিয়ান দুটি দ্বীপ রাষ্ট্র কমনওয়েলথের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে চায়। পিঠে রক্তজবার মতো ঔপনিবেশিক চাবুকের দাগ নিয়ে কে আর চায়; বৃটিশরাজের করোনেশানে এসে তেলাঞ্জলি দিতে।
রাজা চার্লস পায়চারী করেন বাকিং হাম প্যালেসের বারান্দায়। রাজপুত্র উইলিয়াম তাড়া দেয়, ‘বাবা রাজকীয় পোশাক পরে নাও। তোমার অভিষেকের সময় হয়ে এলো।‘
রাজকর্মচারী ধনঞ্জয় মুখার্জি এসে জিজ্ঞেস করেন, ‘হিজ এক্সসেলেন্সি কী নিয়ে ভাবছেন এতো? ঋষি তো আমাদেরই লোক। ওর শোণিত প্রবাহে বৃটিশরাজের প্রতি সমীহের গুঞ্জরন। নিশ্চয়ই আপনার রাজত্বকাল আনন্দপ্রদ হবে।‘
: আমি অর্থবহ সময় চাই ধনঞ্জয়। আমি ভূ-রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক হতে চাই। সারাটাজীবন তো কাটালাম বার্ড ওয়াচার হিসেবে; জগত ঘুরে ঘুরে নানারকম পাখি দেখে দেখে।
হার এক্সসেলেন্সি ক্যামেলা বারান্দা দিয়ে হেঁটে যাবার ছলে কান খাড়া করেন, ‘কী বললে; কী পাখি; দেখো বুড়ো বয়সে আবার বার্ডগেট কেলেংকারি কোরো না। ভালো হবে না বলে দিচ্ছি।‘
ধনঞ্জয় হাসি গিলে বলে, ‘রাজামশয় দোয়েল, শালিক, ময়না, টিয়া, হলুদিয়া পাখি সোনারই বরণের কথা বলছেন রাণীমা।‘
চার্লস জিজ্ঞেস করেন, ‘কী করা যায় ধনু; বৃটিশ রাজতন্ত্রের গৌরব ফেরাতে কী করা যায়!’
: রাজামশয় ভাবমূর্তির ওপর কাজ করতে হবে আমাদের।
: কোন দেশে ভালো ভাবমূর্তি তৈরি হয়? ভারতবর্ষে!
: আজ্ঞে ভারত-পাকিস্তানের কারিগরদের পিছে ফেলে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি কারিগরেরা। তাদেরকে এখন এমিরেটাস ইমেজ আর্টিস্ট বলা হয়।
: তাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে আমার ভাবমূর্তি বিনির্মাণের কাজ শুরু করো ধনু।
ধনঞ্জয় আজ্ঞে জাহাপনা বলে বেরিয়ে যান। কমনওয়েলথ ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টরকে ফোন করে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি কারিগরদের কমনওয়েলথ ফেলোশিপ দেবার অনুরোধ করেন।
বাংলাদেশের ভাবমূর্তি কারিগরেরা রাজকীয় বাসে চেপে কমনওয়েলথ ফাউন্ডেশনে আসেন। তাদের খুশিজল আর পনির ও জলপাই দিয়ে স্বাগত জানানো হয়।
খুশিজলের ট্রে বহনকারিনী প্যাট্রিসিয়াকে একজন ভাবমূর্তি কারিগর বলেন, ‘তুমি যাবে ভাই আমার সনে আমাদের ছোট গায়ে! জলপান যে করতে দেবো শালি ধানের চিঁড়ে।‘
ভাবমূর্তি নির্মাণ কর্মশালা শুরু হয়।
একজন কারিগর বলেন, বৃটেনে একটা ইমেজ প্রটেকশান ল চাই শুরুতেই। ফেসবুকে রাজা চার্লসের সমালোচনা করলেই; এলিট ফোর্স সমালোচনাকারীকে গ্রেফতার করবে; এমন দৃষ্টান্তমূলক ইমেজ রক্ষাকবচ চাই।
ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর মৃদুস্বরে বলেন, ‘এটা একটু কঠিন হবে। বৃটিশ আইনে এভাবে গ্রেফতারে বাঁধা আছে।‘
রেগে কাঁই হয়ে যান অভিজ্ঞ ভাবমূর্তি কারিগর, ‘রাজা যেটা বলবেন; সেটাই আইন। বৃটেনের উন্নয়ন চাইলে রাজার কথা শুনতে হবে। কথা না শুনে শুনেই আজ দ্রব্যমূল্য আকাশ ছোঁয়া। সবাই তিনটা টমেটো চারটা মরিচ কেনে; তিনবেলার পরিবর্তে দুইবেলা খায়। ঐ গণতন্ত্র গণতন্ত্র করেই আপনারা মারা পড়বেন দেখছি। আমাদের দিকে চেয়ে দেখুন, আমরা আমাদের নয়নের মণির প্রতিটি কথা শুনি বলেই; একরকমের বেহেশতের বাগানে বসবাস করি; তিনবেলা ভাত-মাছ-মাংস খাই।‘
আরেকজন ভাবমূর্তি কারিগর খুশিজলে খানিকটা আলুথালু হয়ে বলেন, ‘বিবিসিকে বাতাবি লেবুর সুঘ্রাণ দিতে হবে। বিবিসির সাংবাদিকদের ঢাকায় সাড়ে চুয়াত্তর টিভিতে সাংবাদিকতা শিখতে পাঠান। গার্ডিয়ান-ইকোনোমিস্ট নিয়মিত রাজার খবর না ছাপলে সম্পাদকদের আদালতের বারান্দায় নিয়ে যেতে হবে। এক কাজ করেন, দুই একটা রিপোর্টারকে গভীর রাতে রাজকীয় পুলিশ দিয়ে তুলে এনে ৩০ ঘণ্টা নিখোঁজ করে রাখেন।‘
কমনওয়েলথ ডিরেক্টর বলেন, ‘তাতে যে বৃটেন প্রেসসূচকে উত্তর কোরিয়া ক্লাবে চলে যাবে।‘
: রাখেন সাহেব প্রেস সূচক; প্রেশার সূচকে শীর্ষে না গেলে রাজাকে কেউ মানবে না। আর এক কাজ করেন, অক্সফোর্ড-কেমব্রিজের ভিসি পাল্টান। দরকার হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের চা-চপ-ছমুছার সংযুক্তিতে পাঠান। শিখে আসুক কীভাবে সময় সময় রাজার পক্ষে বিবৃতি দিতে হয়।
প্যাট্রিসিয়া মেযেন্টা রং-এর স্কার্টের সুঘ্রাণে কোমর দুলিয়ে আরেক রাউন্ড খুশি জল দিতে এলে সেই বিমুগ্ধ কারিগর বলেন, এই মেয়ে তুমি নাচ জানোনা; একটু পিউ-পাপিয়ার নাচটা নেচে দেখাও।
প্যাট্রিসিয়া হেসে বলে, ‘আমি নাচি না স্যার নাচাই।‘
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন