নোবডিজ ম্যান

১১২৫ পঠিত ... ১৭:২৯, এপ্রিল ৩০, ২০২৩

Nobodies-man

আমার কিছু কিছু ফিকশনাল পোস্ট নিয়ে কনফিউশন তৈরি হয়। বেশিরভাগ বন্ধু এ থেকে রসটুকু নিংড়ে নিতে পারলেও; কেউ কেউ তেতো প্রতিক্রিয়া দেন।

কেউ কেউ এরকম একটা পোস্ট পড়ে আমাকে হাসিনা'জ ম্যান বলে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। এরকম আগেও হয়েছে; কেউ কেউ বড্ড ক্ষেপে গিয়ে আমাকে খালেদা’জ ম্যান বলেছেন।

মায়ের বয়েসী বলে উনাদের দুজনকেই শ্রদ্ধা করি। কিন্তু আমি তো আমার মায়েরই অনুগত ম্যান হতে পারিনি কখনো। কাজেই খালা-চাচিদের অনুগত হই কীভাবে! আমি তো আমার স্ত্রীরই অনুগত নই; বড্ড আনফেমিনিস্ট।

এমনকী নিজেরই অনুগত নই। হ্যাঁচকা টানে আরোপিত নাগরিক মুখোশ খুলে নিজেকেই তুলে ধরতে পারি আলবেয়ার কামুর একজন আউটসাইডার হিসেবে। 

বাংলাদেশে একজন মানুষকে সাদা-কালোয় নির্ণয়ের চেষ্টা করা হয়। মুক্তির স্বপক্ষের নাকি বিপক্ষের, প্রগতিশীল নাকি অগতিশীল, চরিত্রবান নাকি চরিত্রহীন, আওয়ামী লীগ নাকি বিএনপি নাকি তৃতীয় শক্তি। দেশপ্রেমিক নাকি দেশদ্রোহী। এলিট নাকি নন এলিট। লোকটার রোলেক্স ঘড়ি আছে নাকি নাই। লোকটার প্রাসাদ আছে; নাকি স্টুডিও এপার্টমেন্টে থাকে। লোকটার গাড়ি আছে নাকি উবার-বাসে ঘোরে। লোকটা বিদেশে ছুটি কাটাতে যায়; নাকি কক্সবাজার যাবার মুরোদ নাই। লোকটা ভিআইপি আসরে দাওয়াত পায়; নাকি হিংসায় জ্বলে জ্বলে ফেসবুক পোস্ট লেখে! লোকটার কি কাম-কাইজ নাই; নাকি ফেসবুকে হাতিঘোড়া মারে। নবমিতা আপা বিরাট চাকরি করেন বলে, হোয়াইট হাউজ আর ক্রেমলিন একসঙ্গে চালায় বলে ফেসবুকে আসার সময় পায় না। আর এই লোক সারাক্ষণ ফেসবুকে থাকে সুতরাং ভাদাইম্মা হবে।

 একজন লোককে ঠিক নিজের চিন্তার গজফিতায় পট করে মেপে ফেলে; দ্রুত একটা অনুসিদ্ধান্ত টানা; অথচ এই সীমিত কল্পনার পরিসরের বাইরে অমলকান্তির রোদ্দুর হবার জীবন থাকে। যে জীবন দোয়েলের শালিকের তার সঙ্গে দেখা হবার জীবন থাকে। ডেড পোয়েটস সোসাইটির সাহিত্য আসরের বাইরে; ছাত্রদের প্রিয় একজন ক্ষুদ্র মাই ক্যাপটেন ওহ ক্যাপটেনের জীবন থাকে। লাল সিং চাড্ডার জীবন থাকে। ঘাস ফড়িং-এর জীবন থাকে।

আমাদের সমাজে সারাক্ষণ দেখিয়ে দেয়া, ফাটিয়ে দেয়া, তাক লাগিয়ে দেয়া, কর্ণফুলীর নীচে টানেল বানিয়ে ইংলিশ চ্যানেলকে পিছে ফেলে দেয়া, মেট্রো রেল বানিয়ে কলকাতার ট্রামকে হারিয়ে দেয়া; পদ্মা সেতু বানিয়ে পৃথিবীকে অবাক করে দেয়া; কিংবা পৃথিবীর বৃহত্তম কারাগার নির্মাণ করা।

ফেসবুকে প্রতিদিন নিজের একটি সাফল্যের গল্প বলে সহমত ভাইয়ের অভিনন্দনে সাঁতার কাটা; পরাজিত মেঘের ভিড়ে বিজয়ী ঘুড়ি হয়ে ওড়ার; জীবনে সাফল্যের এভারেস্ট ছোয়ার জন্য যে সামাজিক চাপ; প্রাডো, সেকেন্ড হোম ছেলের আইভি লীগে ভর্তি হবার গল্প; আমার ছেলে বাংলা কইতে পারে না'র যে বাল-সুলভ বালোকিত সমাজ; সেখানে আজ আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের আলোকিত মানুষ গড়ার ডাক বড্ড বেমামান।

সায়ীদ স্যারের নামটা বললেই কর্নেলিয়াতে পিএইচডি গবেষণারত মিলেনিয়াল পলিটিক্যাল কারেক্টনেসের পেডাগগ; তড়াক করে তিনটি লিংক ধরিয়ে দেয়; উনি দেখুন সেক্সিক্ট কমেন্ট করেছেন। সুতরাং উনি বাতিল।

জাফর ইকবালের লেখা মুক্তিযুদ্ধের কিশোর উপন্যাস পড়তে বললেই, তিনটি লিংক ধরিয়ে দেবে গোঁফ গজানো মার্ক্সিস্ট; উনি তো সরকারি বুদ্ধিজীবী। উনি মুক্তিযুদ্ধের সময় পরিখা বানিয়ে লুকিয়ে ছিলেন। সুতরাং ইনি বাতিল।

বাঙ্গালির পারফেকশানের আকাশ-কুসুম তুলাদণ্ডে পারফেক্ট কোন লোক নেই। ছিদ্রান্বেষী বাঙালি ছেঁদা খুঁজতে খুঁজতে সমাজটাকে ঝাঝরায় পরিণত করেছে। যেখানে শতছিদ্র ঝাঝর এসে সুঁইয়ের পিছে একটি ছিদ্র পাবার অভিযোগে সুইটাকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারে বের হয়। ন্যুনতম ম্যাগালোম্যানিয়ার আয়নাঘরে নিয়ে ডিম দেয়।

পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ দেশপ্রেম আর ধর্মপ্রেমের ভাবমূর্তি বানাতে বানাতে গড়ে তুলেছে হীরক রাজার মূর্তি।

এই যে বিশ্ববিজয়ী হবার লক্ষ্যে ইঁদুর দৌড়ে পেরেশান সমাজ; তার সময় কোথায় সৈয়দ মুজতবা আলী, আবুল মনসুর আহমদের রম্যরচনা পড়ার। রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই কিংবা আবদার রশীদের রম্যছড়া খোঁজার সময় কোথায়। গোল্ডেন জিপিএ পাবার বইয়ের পাহাড় ঠেলেই সময় মেলেনা; আবার সিলেবাসের বাইরের বই পড়তে বলা।

আর গোল্ডেন জিপিএ না পেলে দলের বড় ভাইয়ের পিছে ঘুরে ঘুরে জয় বাংলা কিংবা জিন্দাবাদ শ্লোগান দিয়েই সময় মেলে না; আবার স্যাটায়ার পড়ে সেটা বোঝা। আরে না বোঝার পুরস্কারই তো শত কোটি টাকা; সেকেন্ড হোম, পদ-পদবী, পিউ পাপিয়ার টেকাটুকা ক্লাব, ভোট ফর বোট ক্লাব।

কাজেই ফেসবুকে কিছু একটা পড়েই দাগিয়ে দাও; এটা হাসিনাজ বুদ্ধিজীবী ওটা খালেদাজ বুদ্ধিজীবী। খুব নিভৃতে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী টিম টিম করে জ্বলতে থাকলেও তা চোখে পড়বে কী করে। সাড়ে চুয়াত্তর টিভিতে কিংবা হীরামতির আলোয় না দেখলেই তা অদেখা। নিজের অভিজ্ঞতার বাইরের জগত একেবারেই অজানা আমাদের; যেখানে বসবাস করে অসংখ্য নোবডিজ ম্যান...

১১২৫ পঠিত ... ১৭:২৯, এপ্রিল ৩০, ২০২৩

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top