আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম

৭৭৭ পঠিত ... ১৬:৫২, আগস্ট ০৯, ২০২২

Age-ki-sundor-din-kataitam

আগের সময়গুলাই বোধহয় ভালো ছিলো! কত আজগুবি ঘটনা ঘটতো মানুষের সাথে। বাঘ-হরিণ থেকে বনের পশুপাখি মানুষের ভাষায় কথা বলতো। কাটা মুণ্ডুর কথা শুনে মানুষ ধর্মান্তরিত হতো। অলৌকিক কত কী ঘটতো!

এই তো সেদিনও জিন ভূতের আনাগোনাও ছিলো বেশ! আশপাশ থেকে কত জিনে ধরা, ভূতে মারার গল্প শুনেছি। কতরকম ভূত-প্রেত ছিলো সমাজে। সারাক্ষণ চারপাশে মানুষই থাকবে কেনো? খুবই বোরিং বিষয়টা। একটু অন্ধকার হলে ভূত-প্রেত আসবে, জিন আসবে, ভয় দেখাবে, উড়িয়ে অন্যরাজ্যে নিয়ে যাবে। এগুলোর কিছুই আর হচ্ছে না। জীবনটা খুব পানসে হয়ে যাচ্ছে, এইসব না দেখতে দেখতে, না শুনতে শুনতে।

খুব বাজে একটা সময় চলছে। অলৌকিক বলতে গেলে তেমন কিছুই ঘটে না এখন আর।

ছোটোবেলায় একবার বেশ রাত করে অন্ধকার রাস্তা দিয়ে স্কুল থেকে সাইকেল চাপিয়ে কবরস্থান দিয়ে ফেরার পথে ছড়ছড় শব্দে যখন আত্মারাম প্রায় খাঁচাছাড়া, নির্ঘাত কবরস্থানের ভূত ভেবে চোখমুখ খিচে সাইকেল চালিয়ে ঘেমে নেয়ে বাড়ি ফিরে খুবই হতাশ হয়েছিলাম। কবরস্থান থেকে তো মিনিমান ছোটোখাটো ভূত- প্রেতও তো আসতে পারতো, তা না, কবরস্থানের তালগাছের পাশে সুপারি গাছ থেকে সুপারি পাতাই পড়তে হলো সাইকেলের পিছনের ক্যারিয়ারে? তালগাছের ভূতেরা কি এতটাই বোরড হয়ে গেছে?

মেঘ বৃষ্টিও আর মানুষের কথা শোনে না। কারও আঙ্গুলের ইশারায় আর কোনোকিছু এদিক-ওদিক হয় না। ফুঁ দিয়ে দিয়ে কেউ আর সমুদ্রে ঝড়ও তোলে না! কারো জন্য মেঘও সরে না, ছায়াও নামে না।   

কোনোরকম শারীরিক সম্পর্ক ছাড়াই গাছের ফলটল খেয়েও কেউ আর সন্তান প্রসব করছে না। শারীরিক সম্পর্ক করেও তো সন্তান হচ্ছে না। কলিকাল!

সবকিছু কেমন জানি খুবই রুটিনমাফিক হয়ে গেছে। লজিক্যাল হয়ে গেছে।

সূর্য পূর্ব দিকে উঠে পশ্চিমে ডুবে যায়। কেন বাবা। প্রতিদিন কেন একইরকম হতে হবে? একদিন তো ভুল করে পশ্চিমেও উঠতে পারতো। তাতে কি এমন ক্ষতি হতো? বরং চারিদিকে একটু উৎকণ্ঠায় ছুটো-ছুটি মিলিয়ে একটা ব্যতিক্রমি দিন পাওয়া যেতো।

লজিকে লাইফটা খুব বোরিং। রুটিনে জীবন পানসে। মাঝে মাঝে লজিক ব্রেক করে, রুটিন থেকে বেরিয়ে জীবনে কিছু ঘটা উচিত। আগে এগুলো সুন্দর ঘটতো। জীবনও নিশ্চয় তখন অনেক মজার ছিলো। আনএক্সপেকটেড ছিলো।

চোখের পলকে লোকজন মহাকাশ-আসমান ঘুরে আসতো। এখন বিমান রকেট দিয়েও সেটা হচ্ছে না। এই সবকিছুর জন্য আমি জ্ঞান-বিজ্ঞানকেই দায়ী করবো!

ভূত-প্রেত-জ্বিন-পরী-দেও-দানো-অশরীরি, কাটামুন্ডুর গল্প, মহাকাশ ভ্রমণের গল্প এগুলো তো বিশ্বাসেই মজা। এগুলো শুনে কি বিজ্ঞানের ঐসব বস্তাপঁচা লজিক্যাল প্রশ্ন করা মোটেও উচিৎ? আদতে প্রশ্নই করা উচিত না। প্রশ্ন করাকেই প্রশ্রয় দেয়া উচিত না। প্রশ্ন করে করেই মানবজাতির আজ এই অধপতন! এত প্রশ্ন করে কী জানতে চাও? এত জেনে কী হবে? না জানলেই বা কি ক্ষতি হবে? না জানলে বরং ভালো। বৈচিত্র আসবে জীবনে।   

কেনো এত প্রশ্ন করতে হবে। কেন তোমার এত কিছু জানতে হবে! যা শুনবে চোখ বন্ধ করে শুধু বিশ্বাস করে যাবে। দেখবে জীবন অনেক সুন্দর। জীবনে অনেক মজার মজার অলৌকিক ঘটনার ঘনঘটা।

মানুষের সাথে বনের পশু-পাখি কথা বলবে! গাছপালা কথা বলবে।

কাটামুন্ডু মন্ত্র পড়াবে।

জ্বিন-ভূত-প্রেত-দৈন্য-দানোতে চারপাশ জমজমাট।

কত চমৎকার চমৎকার গল্প বের হতে থাকবে।

সেই গল্পে কেউ কেউ.. ..

ঠিক আগেকার দিনের মতো।

৭৭৭ পঠিত ... ১৬:৫২, আগস্ট ০৯, ২০২২

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top