স্ট্রিট থিয়েটারের তিলোত্তমা

১৩১২ পঠিত ... ১৭:১২, মে ২৮, ২০২২

Street-theatre-er-tilottoma

থিয়েটারের লোকেরা আনলাকি হতে লাকি হবার চেষ্টায় সরকারি প্রকল্পের টেকাটুকা থিয়েটারের একনিষ্ঠ কর্মী হয়ে যাবার পর; থিয়েটার শিল্পে ধ্বস নামে। আর নিয়মিত এ ওকে, ও একে; দেশের শত্রু হিসেবে কালো তালিকাভুক্ত করায়; শিল্পী সংকটে মঞ্চগুলো ফাঁকা ফাঁকা দেখায়।

টকশো থিয়েটারে বাতাবি লেবুর সুগন্ধে মোহন সাহেদ; সম্ভাবনার দ্যুতি ছড়িয়েছিলো। অমনি তাকে কালো তালিকাভুক্ত করে পুলিশে দিয়ে দেয়; টকশো থিয়েটারের ব্যর্থ সিংহেরা। অথচ সাহেদের থিয়েটার ‘কাউকে ছাড় দেয়া হবে না’, বেশ সাড়া পেয়েছিলো, ফেসবুক থিয়েটারে সাবরিনা রুপ লাবণ্য ঢং বল্লরী; ফুরিয়ে যাওয়া অভিনেতা-অভিনেত্রীর দিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়। তখন তাকে কালো তালিকাভুক্ত করে দেয়; ফেসবুক থিয়েটারের ব্যর্থ শিল্পীরা।

এরা সবাই রয়েল লীগ গ্রুপ থিয়েটার কর্মী হলেও; যে-ই একটু রঙ্গভবন ঘুরে বড় মাছ হয়ে যাচ্ছে; সে-ই একটু ছোট মাছকে খেয়ে ফেলছে। মাৎস্যন্যায় যুগে একই থিয়েটার দলের কে কখন তাকে খেয়ে দেয়; তা বলা কঠিন।

পাপিয়ার ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন থিয়েটার হলে মুলারুশ হাওয়া বইলে; তাকে জেলে দিয়ে দেয় ঝাঁপিয়া আপারা মঞ্চে আবির্ভুত হয়।

বঙ্গবাজার থেকে লাল টিশার্ট আর গুলিস্তান থেকে সানগ্লাস কিনে অপরিমেয় ঢংগিতারা শুরু করে কারেন্টি থিয়েটার। বাংলার মধ্যে বডি শেমিং, মিসোজিনিস্ট, ও মাই গড, ডব্লিউ টি এফ; এসব শব্দ বলে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করে; এটাই প্রকৃত স্মার্ট থিয়েটার। পরে দর্শক ধোঁকা ধোঁকা বলে দুয়ো দেয়।

লালবাগ থিয়েটারের প্রাণপুরুষ হাজি সেলিমের সংগীত নৃত্যনাট্য ‘নুকা নুকা’ জনপ্রিয় হলে; তার ঠাঁই হয় কারাগারে। ওদিকে সম্রাটের জামিন নাটক দ্য লাস্ট সাপারের মেডিক্যাল বোর্ড; তাকে যীশুর মতো ক্রুশবিদ্ধ করে।

ঢাকা কলেজের চাঁদাপথের যুদ্ধ স্ট্রিট থিয়েটারের নতুন তারকা তিলোত্তমা নজর কাড়ে সবার। এর আগে মহানুভবতার প্রপস হিসেবে ভিকটিম পরিবারকে গরু ছাগল রুপচান্দা ঢেউটিন দেবার নজির থাকলেও; তিলোত্তমা অভিনেত্রী শাবানার সেলাই মেশিন এনে ভিকটিমের হাতে তুলে দিয়ে; থিয়েটার সমালোচকদের নজর কাড়ে। 

বাঁশ বিদ্যালয়ে নোয়াখালির অভিনেত্রী রিপা তার ‘জুয়েলকে টিএচ্চিতে যেন না দেখি,’ একাংকিকায় বক্স অফিসে তুফান তোলেন। এর আগে নিজ গ্রামে তার অভিনীত ‘আমাকে কেন স্টেজ থেকে নামায়ে দিলো,’ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো।

রিপা যখন অভিনেত্রী হিসেবে সবার হৃদয় জয় করেন; তিলোত্তমা তখন লতা ও নূরজাহানের মতো দম্ভে রুনা লায়লাকে থামিয়ে দিতে নতুন এক এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার নিয়ে আসে, অ্যাম্বুলেন্স ও বিবিধ হেলমেট।

স্ট্রিট ফাইটে ছেলেদের সঙ্গে সুলতানা রাজিয়ার মতো দৌড়ে গিয়ে তিলোত্তমা নেতৃত্ব দেন প্রতিপক্ষকে পেটাতে। অলৌকিক গহীন বালু চরে চর দখলের লড়াইকে উপজীব্য করে এই থিয়েটারে রয়েছে; পুরুষ এসে প্রতিপক্ষের নারীকে পেটানো; আবার তিলোত্তমা নারী হয়েও প্রতিপক্ষের পুরুষ পেটানো। তিলোত্তমা যেন নারীর ক্ষমতায়নের মূর্ত প্রতীক। আগে গ্রামের মেয়েরা মরা সাপ দিয়ে পিটিয়ে স্বামীকে মেরে ফেলতো বলে যে উপকথার প্রচলন আছে; স্ট্রিট থিয়েটারে তিলোত্তমা সেই সাপকেই বাঁশের লাঠিতে পরিণত করেন।

তিলোত্তমা লাঠিয়াল বাহিনীর সবাই হেলমেট পরলেও; তিলোত্তমা হেলমেট পরেনা। কারণ বীরের চেহারা না গেলে বীরত্বের আর মূল্য কী! কিন্তু দর্শক এই বীরত্বের পরিবর্তে রিপার কথার বীরত্বকেই বেশি গুরুত্ব দেয়। তিলোত্তমা ভাবে, দর্শক কী পেয়েছে ঐ কথা থিয়েটারে; যা আমার অভিনয়ে নেই। এইবার সে ফিরে অ্যাম্বুলেন্সে, আসে অসুস্থ শালিকের বেশে।

একই অঙ্গে এতো রুপ দেখে এবার দর্শক তালি দেয়।

কে একজন জিজ্ঞেস করে, ‘আগের দৃশ্যে না দেখলাম আপনিই বাঁশ দিয়ে একজনকে পেটাচ্ছেন; অ্যাম্বুলেন্সে তো হাসপাতালে যাবার কথা তার; আপনি কেন হাসপাতালে গিয়েছিলেন?’

তিলোত্তমা তখন ব্যথার অভিনয় করে বলে, ‘হেলমেট পরিনি বলে চোট পেয়েছি বড্ডো।‘

এবার হুইল চেয়ারে সহমত ভাই পরিবেষ্টিত দৃশ্যে তাকে দেখে দর্শক খিল খিল করে হেসে বলে, ‘আপাকে এই দৃশ্যে গোলাপী ম্যামের মতো দেখাচ্ছে যে। ঘোড়ায় চইড়া আইলে আপনারে আরো বেশি মানাইতো আফা।‘

১৩১২ পঠিত ... ১৭:১২, মে ২৮, ২০২২

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top