ডক্টর স্ট্রেঞ্জ ইন দ্য মাল্টিভার্স অফ ম্যাডনেস: আ ফেমিনিস্ট ইন্টারপ্রিটেশন

৫২৪ পঠিত ... ১৭:১৬, মে ২২, ২০২২

Doctor-strange

মারভেল কমিকস সিরিজে ডক্টর স্ট্রেঞ্জ ইন দ্য মাল্টিভার্স অফ ম্যাডনেস মুভিটা গতরাতে সিনেমায় গিয়ে দেখলাম। তুলনামূলক ধর্ম, মিথ পাঠের পর মারভেল কমিকস পড়ে মনে হয়েছে; ফিকশন না থাকলে জীবন অসম্পূর্ণ থেকে যায়। নন ফিকশনাল লাইফ স্টাইল হচ্ছে বাজারের ফর্দ আর ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফারের ম্যাড়মেড়ে ব্যাপার।

মারভেল কমিকসকে যারা বাচ্চাদের ব্যাপার বলে উড়িয়ে দেন, তারা হয়তো বোঝেন না; নোম চমস্কি কিংবা ইউভাল নোয়াহ'র প্রবন্ধ যেসব কথা বলে, মারভেল কমিকস সেসব প্রয়োজনীয় চিন্তাকেই ফিকশনের মাঝ দিয়ে জারিত করে।

ডক্টর স্ট্রেঞ্জ ইন দ্য মাল্টিভার্স অফ ম্যাডনেসের অন্তর্গত চিন্তাটা মনে হলো, জীবনের অল্টারনেটিভ রিয়ালিটি নিয়ে নাড়াচাড়া করা। এই যে নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস, ওপারেতে সর্ব সুখ আমার বিশ্বাস; এই যে সুখের অসুখ, এরকম রোগের রোগী এক নারী ওয়ান্ডা ম্যাক্সি মোফ; সে জাদুবিদ্যা জানে, সে ক্ষমতাশালী হতে চায়, আবার নিজের সন্তানদের সঙ্গে একটা শান্তিময় জীবন চায়। ওয়ান্ডাকে যেন সব পেতে হবে।

সমস্ত প্যারালেল ইউনিভার্সে ক্ষমতার অধীশ্বর হতে হবে। ওয়ান্ডা গাছেরটাও খাবে, তলারটাও কুড়াবে। ওয়ান্ডা ধৈর্য্যশীল কিন্তু স্বার্থপর। এমেরিকা শ্যাভেজ নামের এক কিশোরী বিভিন্ন ইউনিভার্স পরিভ্রমণ করতে পারে; তার এই ক্ষমতা বিক্ষুব্ধ করে ওয়ান্ডাকে। সে ওয়ান্ডার ক্ষতি করতে চায়। ড স্ট্রেঞ্জ ওয়ান্ডাকে বাঁচাতে চেষ্টা করে।

নরসিংদী রেলস্টেশনে একটি তরুণীকে ঘিরে ধরে যে বয়েসী নারী এক কিশোরীকে শাসাচ্ছে; সেই একই রকম যেন, ওয়ান্ডার শ্যাভেজকে শাসানো। ওয়ান্ডা যেন পাশের বাড়ির আন্টি যে কিশোরী শ্যাভেজকে মহল্লার পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর মনে করে।

ওয়ান্ডার যে ক্রোধ, তা যেন ক্ষমতায়িত নারীর ক্রোধ, ফ্যাসিজম আর ফেমিনিজমের মিশ্রণে ওয়ান্ডা যেন মূর্তিময়ী এক আতংক।

ডক্টর স্ট্রেঞ্জ তাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করে, বরং শ্যাভেজকে বাঁচাতে অনুরোধ করে। কিন্তু দ্রুতই বুঝতে পারে ওয়ান্ডা ম্যাক্সিমোফ ক্ষমতার দাপটে অন্ধ এক নারী যে ক্রমেই যেন দানবী হয়ে উঠছে। সে মনে করে শ্যাভেজের বিভিন্ন ইউনিভার্সে ঘুরে বেড়ানোর ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেই  তার সৃষ্টি করা দুই শিশু বিলি এবং টমির সঙ্গে মিলিত হওয়া সম্ভব হবে। কারণ ওয়ান্ডা ঘুমের মধ্যে ঐ দুই শিশুর মা হিসেবে মিলিত হয়। তাদের নিয়ে সুখের এক সংসার রচিত হয় স্বপ্নে; আরেক ইউনিভার্সে।

কিন্তু ঘুম ভাঙ্গলেই নেমে আসে মন খারাপের সকাল, যে সকাল মনের মধ্যে ‘কী জানি কীসেরও লাগি প্রাণও করে হায় হায়!’ ফেসবুকে যেমন ফেমিনিস্ট তার ডিপ্রেশনের কথা লেখে, ইনিয়ে বিনিয়ে এরজন্য দায়ী করে পুরুষতন্ত্রকে। ওয়ান্ডা যেমন মনে করে, তার স্বপ্নে দেখা সন্তানদের সঙ্গে স্থায়ীভাবে মিলিত হবার জন্য শ্যাভেজের ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ডক্টর স্ট্রেঞ্জ।

ওয়ান্ডার ক্রোধ থেকে শ্যাভেজকে বাঁচাতে ড স্ট্রেঞ্জ বুক অফ ভিশান্তির খোঁজ করে। এই শান্তির গ্রন্থটি আসলে আমরাও খুঁজছি বহুকাল ধরে।

ওয়ান্ডার স্বার্থপরতা অগণন মৃত্যু ঘটায় এই চলচ্চিত্রে, তবু তার অনুতাপ নেই, নিজের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সে সবকিছু করতে থাকে। এইখানে ওয়ান্ডা যেন নারী রাজনীতিকের প্রতীকী ও প্রতিভূ, যে নিজের স্বজন নিয়ে স্বার্থপরের মতো মায়াকান্না করে চলে; কিন্তু অন্যদের প্রতি সে মায়াহীন; স্বার্থপর অথচ চালাক; বুদ্ধিমতী শব্দটি হয়তো বেমানান ফ্যাসিস্টের ক্ষেত্রে।

ড স্ট্রেঞ্জ বিভিন্ন ইউনিভার্স ঘুরে বিশান্তি বই খুঁজতে থাকে; পথে এক ইউনিভার্সে এসে কার্ল মরডোর ফাঁদে পড়ে গ্রেফতার হয়ে যায় ইলিউমিনাত্তিদের কাছে। ইলিউমিনাত্তিরাই যেন এ যুগের গ্রিক দেবদেবীর মতো ক্ষমতাধর। ড স্ট্রেঞ্জ বিভিন্ন ইউনিভার্স ঘুরে এর ক্ষতি করছেন, এমন অভিযোগে তার বিচারের শুনানি হয়। অথচ ওয়ান্ডার হামলার সামনে তারা অসহায় হয়ে পড়ে। শ্যাভেজকে মাউন্ট উন্ডাগরে ধরে নিয়ে গিয়ে ওয়ান্ডার অভিশপ্ত মন্দিরে আটকে তাকে শাস্তি দিয়ে বশীভূত করার চেষ্টা করে।

ইলিউমিনাত্তিদের বিজ্ঞানী হিসেবে কর্মরত সাবেক প্রেমিকা খ্রিস্টিন পালমারের সঙ্গে দেখা হয় ড স্ট্রেঞ্জের। খ্রিস্টিনের সঙ্গে জীবন যাপন করতে না পারার বেদনা তাকে দীর্ণ করে। খ্রিস্টিনের সাহায্য নিয়েই ডার্কহোল্ড কালাজাদুর বইগুলো বিনাশ করতে থাকে একে একে। পরে স্লিপ ওয়াকিং-এর মাঝ দিয়ে অন্য একটি ইউনিভার্সে নিহত ড স্ট্রেঞ্জের মৃতদেহকে পাঠায় ওয়ান্ডার মন্দিরে। সেইখানে সবগুলো কালাজাদুর গ্রন্থ পুড়িয়ে ফেললে, ওয়ান্ডা ম্যাক্সিমফ আত্মহননে বাধ্য হয়। কারণ অন্য একটি ইউনিভার্সে তার স্বপ্নের সন্তানদ্বয় যখন ওয়ান্ডার মাতৃরুপের বদলে দানবীর রুপটি চিনে ফেলে তখন ওয়ান্ডার সব ক্ষমতা দম্ভ অর্থহীন হয়ে যায়।

মুভির কোথাও কোথাও পরিচালক স্যাম রাইমির কল্পনার ও ‘মারিজুয়ানা’-র প্রকোপ বেশি মনে হলেও; ফেমিনিস্ট ইন্টারপ্রিটেশান অফ মারভেল কমিকসের কাজটি বেশ ভালোভাবে সমাধা করেছেন বলেই মনে হয়েছে।

কালাজাদু আর মৃতদেহের স্লিপ ওয়াকিং-এর মাঝ দিয়ে ড স্ট্রেঞ্জের থার্ড আই বা তৃতীয় চোখ জন্ম নেয়। এই তৃতীয় চোখের গল্প হয়তো পরবর্তী মুভিতে আমরা শুনবো।

ওয়ান্ডার হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত কামার তাজ জাদুকরদের গৃহ মেরামত হতে থাকে। শ্যাভেজকে সেখানে প্রশিক্ষণে রেখে ফিরে যাবার সময় ড স্ট্রেঞ্জ, জীবনের সুখ বিষয়টি নিয়ে খানিকটা দার্শনিক হয়ে উঠলে, তার বন্ধু বলে, একটি ইউনিভার্সের জীবনেই নিজেকে সুখি রাখার চেষ্টা করে সে। কী হলে কী হতো এমন চিন্তার দোলাচল আর মায়ার খেলার বাইরেই হয়তো জীবনের স্থৈর্য্য।

৫২৪ পঠিত ... ১৭:১৬, মে ২২, ২০২২

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top