পারলে না রাজাপাকশে

৪৯১ পঠিত ... ১৬:১৭, মে ১০, ২০২২

Rajapakshe

করোনাকালে শ্রীলংকার পর্যটন শিল্পে ধ্বস নামায় অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। শ্রীলংকার মানুষ শতভাগ শিক্ষিত হওয়ায়; তাদের লাত্থি দিয়ে মধ্প্রাচ্যে দাস হিসেবে পাঠানো যায় না। আরবের লোকের টয়লেট পরিষ্কার করে, ডিশ ওয়াশিং ও অনিয়ন কাটিং করে, আরব পুরুষের রসনা ও লালসা তৃপ্ত করে বাম্পার রেমিটেন্স আনার ব্যবস্থা নাই। লেখাপড়া করে যে অনাহারে মরে সে।

শ্রীলংকার লোক শিক্ষিত হওয়ায় গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে শ্রম শোষণের মাধ্যমে বিপুল রপ্তানী আয় বাড়ানোর সুযোগ নাই। গার্মেন্টস মালিক ধনী হবে; আর সেলাইদিদিরা ‘গণতন্ত্রের স্তম্ভ ধরে নাড়িয়ে’ ফ্যাক্টরি ভবন ধ্বসে এক পা কেটে গেলে; আরেক পায়ে নুপুর পরে আবার সেলাই-কাজে রাজি হয় না। ঐ যে বেশি শিক্ষিত হলে, নিজের অধিকার বুঝলে যা হয় আর কী!

ফলে ৫১ বিলিয়ন ডলারের বিদেশী ঋণ এখন শ্রীলংকার ২ কোটি ২০ লাখ মানুষের ঘাড়ে।

রাজাপাকশে পরিবারটি সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে শ্রীলংকার জ্ঞানপাপী বিরোধীদের ষড়যন্ত্র রুখে দিতে। গতকাল সোমবার দশটি পেট্রোল বোমা পড়েছিলো প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকশের সরকারি বাসভবনে। রাজাপাকশে সমর্থকরা তার গৃহটিকে আগুনের শিক্ষা থেকে বাঁচাতে লাঠি ও টোকের বালু নিয়ে আসলেও; হেলমেট আর চাপাতির অভাবে তারা উন্নয়নের শত্রুদের প্রতিহত করতে পারেনি।

সোমবারের সরকারি সহমত ভাই বনাম ভিন্নমত ভাই সংঘর্ষে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। শ'দুয়েক মানুষ আহত হয়েছে। ১৯৪৮ সালে স্বাধীন হওয়া দেশটিতে এমন সংকট এর আগে আর আসেনি।

মাহেন্দা রাজাপাকশে সেনা-পাহারায় ভোরের দিকে বাসভবন ত্যাগ করলে; বিমানবন্দরের কাছাকাছি একটি সেফ হাউজ থেকে তিনি জুমচাষে যুক্ত হন eআরকির সঙ্গে।

 

eআরকি: মি পাকশে, আপনার নামটি পাক্ষে থেকে পাকশে হলো কী করে!

রাজাপাকশে: ঠাকুর থেকে টেগোর হয়েছেন যেভাবে আমি ঠিক সেইভাবে; পশ্চিমা মিডিয়ার ‘যন্ত্র ঐ একটাই ষড়যন্ত্রে’ পাক্ষে থেকে পাকশে হয়ে গেলাম।

eআরকি: তা আপনার বাক্সে কোন জনসমর্থন নেই কেন!

রাজাপাকশে: জানেন ভাই, জনগণের জন্য এতো করেছি; এতো দিয়েছি, তার পরিবর্তে ওরা আমার প্রাণ সংহার করতে চাইলো। আমরা পুরো পরিবার মিলে জনগণের সেবা করেও মন পেলাম না!

eআরকি: আপনি যাদের পিএম হাউজে ডেকে পিঠা-পুলি, নারকেলের পানি খাওয়াতেন, সেই বুদ্ধিজীবীরা কই? আগে টকশোতে যারা নারকেলের ফলন বাড়াতো তারা কই?

রাজাপাকশে: বুদ্ধিজীবী মাত্রই পাকশো বা পক্ষ বদলাতে ওস্তাদ। রাতারাতি ওরা রঙ বদলেছে। এতো পদ-পদবী-পদক-বিদেশ সফর-কলম্বোতে প্লট, হাউজ বিল্ডিং অনুদান; তবু আজ তারা একটুখানি জাস্টিফিকেশান দিচ্ছে না! পলিটিশিয়ানকে তবু বিশ্বাস করা যায়, দেখুন আমার মন্ত্রী-এমপিরা রাস্তায় বস্ত্র বিসর্জন দিচ্ছে আমার সমর্থনে। আর ইন্টেলেকচুয়ালের শিরায় শিরায় পাপ; তারা ফুলের মাঝে ঘুমিয়ে আছে ফুলের মধু খেয়ে। মৌরালা মাছের ঝোল আর যুবতী নারীর কোল নিয়ে ব্যস্ত সবাই।

eআরকি: আপনার সাংস্কৃতিক জোটের সমর্থকরা কোথায়; আপনার যে কোনো সংকটে যারা জাস্টিফিকেশন দিয়ে আর বিরোধীদের পরজিত শক্তি বলে ‘তকমা দিতো’ সেই উগ্রজাতীয়তাবাদীরা কোথায়?

রাজাপাকশে: উগ্রজাতীয়তাবাদীরা সব উগ্রপুঁজিবাদী হয়ে পালিয়ে গেছে সেকেন্ড হোমে। নূহের নৌকা তো দাঁড়িয়েই ছিলো কলম্বো জলবন্দরে। দুর্নীতি বসন্তের বালিশে মাথা রেখে ঘুমাতে ঘুমাতে পৌঁছে গেছে সংস্কৃতির ইঁদুরগুলো তাদের মাকামে মাহমুদে!  

eআরকি: আপনার ভুলগুলো কী ছিলো, একটু সংক্ষেপে বলবেন?

রাজাপাকশে: ভুল সবই ভুল, এই জীবনের পাতায় পাতায় যা লেখা সবই ভুল! আমি মাদ্রাসা, টোল, মিশনারী স্কুলের কিশোরদের নিয়ে ‘থ্যাংক ইউ কনসার্ট’ করিনি। ফলে তারা আমার ফুট সোলজার হয়নি। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-রাজনীতি জোরালো করে রাজপথের সৈনিক বানাইনি। সরকারি চাকরি আর পুলিশে নিজের এলাকার লোক ভর্তি করিনি; আমি একটা যা-তা!

eআরকি: সেনাবাহিনীর মধ্যে বেশ উচ্ছ্বাস লক্ষ্য করছি!

রাজাপাকশে: এইটা পাকিস্তানের বদ হাওয়া; সবাই জেনারেল বাজওয়া হতে চায়!

eআরকি: ভারত কোনো সাহায্য করলো না কেন আপনাকে?

রাজাপাকশে: আমি ভারতের সঙ্গে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছি। কিন্তু তখন সে বাংলাদেশের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে! আর চীনের বিনিয়োগ নেয়ায়, ভারতের অভিমান হয়েছিলো। কী যে করলাম, লঞ্চো গেলো পঞ্চো গেলো!

eআরকি: এতোই যে চীনের সঙ্গে মিশলেন, একদলীয় গণতন্ত্র তো প্রতিষ্ঠা করতে শিখলেন না!

রাজাপাকশে: চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের মতো নাম দিয়ে মাদক বিরোধী ক্রসফায়ার, বিরোধী দল নির্মূলে গুম করতে পারিনি। ফেসবুকে ভিন্নমত দমনে সোনালী আইন আনতে পারিনি! নিজের লোকদের ইতিহাসান বানাইতে পারিনি, যারা দুর্নীতির খবর চেপে রাখতে ইতিহাসের টাইম মেশিনে চড়িয়ে বার বার ১৯৪৮ সালে নিয়ে যাবে। আমি লোকটা কুনো কামেরই না!

eআরকি: ক্ষমতায় ফেরার কি কোনো আশা আছে?

রাজাপাকশে: শ্রীলংকার ফেসবুকে ‘কলতলা’ বসাইতে পারি নাইরে ভাই; যেইখানে গালি দিয়া দেশপ্রেম শেখানো যায়; ডুগডুগি বাজাইয়া উন্নয়ন গীতি গাওয়া যায়; রাজবংশের প্রশস্তি গাওয়া যায়। যেই দেশের মানুষের মজমার কলতলা নাই; সেই দেশে রাজাবংশের কদর নাইরে ভাই।

৪৯১ পঠিত ... ১৬:১৭, মে ১০, ২০২২

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top