স্বাধীনতা তুমি যেমন ইচ্ছে লেখার চাঁদা আদায়ের খাতা

১০৪৪ পঠিত ... ১৬:০৯, এপ্রিল ১৯, ২০২২

Chada-adayer-khata (1)

ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সঙ্গে ঐ এলাকার ব্যবসায়ীদের যুদ্ধকে চাঁদাপথের যুদ্ধ বলা হয়।

স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই ক্ষমতাসীন দলের ফুটসোলজার ছাত্রদের মাধ্যমে সারাদেশে ব্যবসায়ী থেকে রিক্সাওয়ালার কাছ থেকে দেশপ্রেম কর সংগ্রহের ব্যবস্থা প্রচলিত হয়। বিপুল সংখ্যক ভিক্ষুক এসময় পলিটিক্যাল ফুটসোলজার হিসেবে যোগদান করে।

এরপর যে দলই যখন ক্ষমতায় থাকে সে দলের ছাত্রসৈনিকেরা চাঁদা আদায়ের লাইসেন্স পায়। এটি অল্টারনেটিভ ট্যাক্সেশন সিস্টেম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। ভিক্ষুক ছাত্রসৈনিকেরা কালক্রমে রুলিং এলিট হয়ে ওঠে। এখন সেকেন্ড হোমে তাদের শান সোওকত দেখে বোঝার উপায় নেই যে এরা পোকিত ফইন্নির ঘরের ফইন্নি।

১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে রক্ত-ঘাম ঝরিয়েছিলেন প্রত্যন্তের কৃষক শ্রমিক মেহনতী মানুষ। কিন্তু ১৬ই ডিসেম্বরের চূড়ান্ত বিজয়ের দিনে, মাথায় পতাকা বেঁধে হাতে রাইফেল নিয়ে ছবি তুলে, ভিক্ষুকেরা মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট শুরু করে। যুদ্ধাহত দেশের ত্রাণ সংস্থা রেডক্রস-এ পৌঁছে যায় স্বাধীন চাঁদাবাজ দল যারা রাজবদর হিসেবে দেশ ছেড়ে যাওয়া হিন্দু ও বিহারীর বাড়ি দখল করে অভিজাত এলাকার বাসিন্দা হয়। ফেইক মুক্তিযোদ্ধার মতো; দাদাকে নবাব সাজিয়ে ছবি তুলে দেয়ালে ঝুলিয়ে দেয়। আর দেয়ালে সুন্দরবন থেকে আনা বাঘের চামড়া ঝুলিয়ে বলে, জমিদার দাদা উনবিংশ শতকে বাঘ মেরে এই চামড়া সংগ্রহ করেছিলেন।

রাজবদরেরা বলে, ‘নয় মাস যুদ্ধ করেছি; এখন স্বাস্থ্যপুনরুদ্ধারে সবাইকে দেশপ্রেম কর দিতে হবে।‘ ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠন বেরিয়ে পড়ে অলৌকিক চাঁদাবাজিতে। বঙ্গবন্ধু আর্তনাদ করে, কোন কুক্ষণে আচরি; পেলাম এই চোরের খনি।

প্রজাতন্ত্রের চাকরিতে ছেলের হাতের মোয়া তুলে দেয়া হয়; কোটাল পুত্রদের হাতে। তারা মনের সুখে সরকারি চাঁদাবাজি করে রুলিং এলিট হয়ে উঠতে থাকে।

বন্দুকওয়ালা জলপাই বাহিনী তাদের চাঁদা দাবী করলে; রক্ষী বাহিনী ও জলপাই বাহিনীর মধ্যে কে বেশি পলিশ করা জুতা পরবে; এই দ্বন্দ্বে, প্রতিপক্ষের স্ত্রীর পেছন থেকে বেণী ধরে টেনে শুরু হয়, বৌঁচাদা আদায়ের কলতলা সংস্কৃতি।

এই চাঁদাপথের প্রথম যুদ্ধে নিহত হন জাতির জনক। এতিম দেশটিকে তখন দুনিয়াটা মস্ত বড় খাওদাও ফূর্তি করো বসন্ত। জেল থেকে বেরিয়ে আসে ১৯৭১-এর আলবদরেরা। রাজবদর চাঁদা সৈনিকদের হটিয়ে দিয়ে রাজত্ব শুরু করে আলবদর চাঁদা সাথীরা।

জলপাই চাঁদাবাজেরা ঢাকা শহরের অভিজাত এলাকায় জমি বাড়ি দখল শুরু করে। দেয়ালে ঝুলিয়ে দেয়, পাকিস্তানের কাকুল একাডেমিতে পাসিং আউটের গর্বিত ছবি।

চাঁদাবাজিতে এরশাদকালটি ছিলো শুধুই কবিতার বিনিময়ে বৌচাঁদার সময়। কারো স্ত্রীর সঙ্গে দেখা হলেই এরশাদ বলতেন, একি অপরূপ রুপে মা তোমার হেরিনু পল্লীজননী! দেবে মোরে প্রেম-চাঁদা ওহে রুপেশ্বরী। চাঁদা গাড়িতে চড়ে রঙ্গভবনে এসে দিয়ে যেতো ল্যাপড্যান্সের রুপালী সাঁঝে।

এরপর পালা করে, জিয়া চাঁদা ও মুজিব চাঁদা আদায় করতে থাকে ভিক্ষুক দল ও ভিক্ষুক লীগ। গলায় জিয়ার ছবি ঝুলিয়ে জঙ্গী কালুদুলুভুলু; গলির ধারের ছেলেগুলো চাঁদাপথের যুদ্ধ করে বিজনেস ম্যাগনেট, এসে ওঠে মহানগীর অভিজাত এলাকায়।

মুজিবের ছবি ঝুলিয়ে ভাংড়ি মাছুম, কানা কাছিম, খোকুন চাঁদাপথের যুদ্ধ করে বিজনেস টাইকুন হয়ে, এসে ওঠে অভিজাত এলাকায়।

এরপর সরকারি ট্যাক্সেশন সিস্টেমের সমান্তরালে ডিপ স্টেট হাওয়া চাঁদা সিস্টেম গড়ে ওঠে। গুলি কইরা হাওয়া কইরা দিমু বলে ধমক দিয়ে চলতে থাকে দেশপ্রেম ও ধর্মপ্রেমের চাঁদা আদায়। তাদের শ্লোগান, কাঁদো বাঙালি হাসো।

এরপর উন্নয়ন চাঁদার সোনালী যুগ শুরু হয় কান্দাকাটি ভবনে। ডিপ সিস্টেমে ভিক্ষুক, জলপাই, বিসিএস, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, তেলাঞ্জলী রুদালিরা পাই মিলে চাঁদা ও দুর্নীতির বসন্তের ডাক দেয়। তাদের শ্লোগান, কাঁদো বাঙালি কাঁদো।

দোয়েল পাখি, রুপপুরের বালিশ, হাসপাতালের সুঁই ক্রয় চাঁদা নিয়ে দেশ থেকে টাকা রপ্তানী করতে শুরু করে সর্বদলীয় ফইন্নির ঘরের ফইন্নিরা।

ধাক্কা করে জায়গা করে নিতে পারেনা এমন ভিক্ষুকেরা চাঁদার ভাগ না পেয়ে ‘চাঁদাবাজ আমাদের কান্দাকাটি লীগের নয়, হাওয়াচাঁদা দল থেকে অনুপ্রবেশ করেছে;’ এই আর্তনাদে ফেসবুক হয়ে পড়ে আকালের সন্ধানে।

বাম চাঁদাবাজ-রামচাঁদাবাজ মক্কা-কাশী ঘুরে দেশে এসে দরবেশ ও সাধুর ভং ধরে; আর তলে তলে সবখাতে চাঁদার টেম্পু চালায়। কেউ কেউ মিডিয়া কিনে ডান্ডাবাদিক বানিয়ে খাম-সাংবাদিকদের পাঠিয়ে দেয়, প্রতিপক্ষের চাঁদাবাজের কাপড় খুলে নিতে।

এইভাবে বীরচাঁদাযোদ্ধা, চাঁদাপ্রেমিক, চাঁদাচেতনার দেশচাঁদাপ্রেমিকের স্ট্রিপটিজ চলতে থাকলে; নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের শিশু-কিশোরীরা হেসে হাততালি দেই, ‘চাঁদারাজেরা, তোমাদের পরনে কাপড় কোথায়?’

টোডরমলের ডায়েরি থেকে

১০৪৪ পঠিত ... ১৬:০৯, এপ্রিল ১৯, ২০২২

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top