কিম জং উনের হীরক সাফল্যের দশ বছর

৪১৪ পঠিত ... ১২:৩৩, এপ্রিল ১৬, ২০২২

Kim-jong-un-thumb

উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতাসীন ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা হিসেবে কিম জং উনের  শাসনের ১০ম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে ব্যাপক কর্মসূচী নেয়া হয়েছে। দশদিন ব্যাপী এই কর্মসূচীতে জাতির দাদা, জাতির পিতা ও জাতির প্রফেটকে নিয়ে গণকান্দন, গণমাতম ও গণস্তুতির ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

প্রথম দিনের কর্মসূচীর মধ্যে ছিলো পারমানবিক অস্ত্রের উন্নয়নে তার নেতৃত্বের প্রশংসা, তার রাজনৈতিক অর্জনগুলো তুলে ধরা, তার নতুন ছবি উন্মোচন এবং তার প্রদর্শনী।

দুই হাজার এগারো সালের ডিসেম্বরে তার বাবা কিম জং-ইলের মৃত্যুর পর ক্ষমতায় আসেন কিম জং উন।

যথাযোগ্য মর্যাদায় ও ভাবগাম্ভীর্যে নাগরিকেরা জড়ো হয় কিমের বাবা ও দাদার বিশাল মূর্তির সামনে। শিশুরা টিভির লাইভ শোতে জাতির দাদা, বাবা ও নাতির স্তুতি করতে থাকে। উত্তর কোরিয়ায় কেবল তিনটি রচনা মুখস্থ করে সবাই। জাতির দাদু-জাতির বাবা-জাতির নাতি এই তিন বিষয়ে রচনা মুখস্থ করা ও অনর্গল মুখস্থ বলার ওপর নির্ভর করে উত্তর কোরীয়দের  জীবনের আয় উন্নতি।

দুই হাজার ছয় সালের পর থেকে এ পর্যন্ত পারমানবিক অস্ত্রের ছয়টি পরীক্ষা চালিয়েছে দেশটি।

এরমধ্যে চারটিই কিম জং উনের শাসনামলে। কোরীয় সামরিক বাহিনীর সদস্যদের দশদিন ধরে পারমানবিক অস্ত্র জড়িয়ে ধরে গণকান্দনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এই বর্ষপূর্তিকে বর্ণিলভাবে উদযাপন করছে দেশটি। কিমের স্ত্রী রাইয়ের সম্মানে একটি ভাস্কর্য উন্মোচন করা হয়েছে। সেই ভাস্কর্য সম্পর্কে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি কুং দুং বলেছেন, ‘রাইয়ের সৌন্দর্য্য ঈশ্বর-প্রদত্ত। গ্রিক দেবি আফ্রোদিতির চেয়ে অধিক সুন্দর তিনি।‘

উত্তর কোরিয়ার নয়নের মণিকে নিয়ে পিয়ং ইয়ং-এর রুদালিরা আয়োজন করেছিলো, তাকে মধ্যমণি করে কেঁদে কেঁদে তার চারপাশে নাচা। মেয়েরা কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে গেলে; তাদেরকে জাতীয় ক্রন্দন বীরের সম্মাননা দেয়া হয়েছে।

উত্তর কোরিয়ার বর্ষীয়ান নেতারা জাতির দাদা ও জাতির পিতার মমির চারপাশে চক্রাকারে ঘুরেছে সারাদিন। শেষ পর্যন্ত টিকে থাকা দশ নেতাকে দেয়া হয়েছে, স্বাধীনতা পদক।

উত্তর কোরিয়ার সহমত ভাইয়েরা দেশ ব্যাপী চাঁদা তুলে কাঙ্গালি ভোজের আয়োজন করেছিলো বিকেলের দিকে। সহমত ভাইদের দুটি গ্রুপের মধ্যে খাবার নিয়ে হাতাহাতি হলে; তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। উত্তর কোরিয়ার তথ্যমন্ত্রী হান সাং বলেছেন, এরা আমাদের দলে অনুপ্রবেশকারী।

ওয়াকার্স পার্টির নেতাদের সেকেন্ড হোমের এক আলোকচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় আর্ট গ্যালারিতে। নেতাদের পক্ষ থেকে তাদের এই সেকেন্ড হোমদাতার অমরতা প্রার্থনা করে বিশেষ সার্ভিসের ব্যবস্থা করা হয়। ধর্মযাজক দং রং বেশং প্রার্থনা পরিচালনা করেন।

জাদুকরী উন্নয়নের দশবছর শীর্ষক এক সেমিনারে জাহাজমন্ত্রী খাং লং দুম বলেন, দেশরত্ন কিম জং উন পৃথিবীর বৃহত্তম দার্শনিক। এই সভায় পিয়ং ইয়ং-এর খ্যাতিমান বুদ্ধিজীবী জাং ফন রং আক্ষেপ করে বলেন, এমেরিকা আমাদের উন্নয়নে ঈর্ষান্বিত হয়ে মানবাধিকার রিপোর্টে যাতা লিখে ষড়যন্ত্র করছে। এমেরিকার নাম মুখে আনলে, আমার টুথ ব্রাশ দিয়ে দাঁত মাজতে ইচ্ছা করে। উনি খস খস করে দাঁত মাজতে মাজতে মঞ্চ ত্যাগ করেন।।

দশবছরে ক্রসফায়ারে সাফল্য শীর্ষক মাথার খুলি ও হাড় গোড় প্রদর্শনীতে এলিট ফোর্সের সর্বাধিনায়ক বেং জিং গর্ব করে বলেন, এসব আগাছা পরিষ্কার করায় উত্তর কোরিয়া এখন একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ফুলের বাগান।

এমেরিকার ষড়যন্ত্রের কারণে কিমজং গিলিয়াস ফুল ফোটাতে পিয়ং-এর মালিরা ব্যর্থ হওয়ায়, তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় জাতীয় স্টেডিয়ামে। গ্যালারিতে গ্ল্যাডিয়েটর শো দেখার উল্লাসে ফেটে পড়ে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সহমত্তবর্গ ও দেশপ্রেমিক বরেণ্য জাতীয়তাবাদীরা।

 অগত্যা প্রতিবেশী দেশ চীন থেকে প্লাস্টিকের সুগন্ধী কিমজংগিলিয়াস ফুল এনে হেলিকপ্টার থেকে ছিটানো হয়েছে সারা দেশে।

চীনের সুকৃতি ও বন্ধুত্বের মোটিফ নিয়ে চীন অনুগত উত্তর কোরীয় সাংস্কৃতিক বলয় আয়োজন করেছিলো একটি মঙ্গল শোভাযাত্রা। এই মংগল শোভাযাত্রায় চীনের ড্রাগন কেন এমন প্রশ্ন উত্থাপন করলে পাঁচ যুবককে ড্রাগনের মুখের হা'-র মধ্যে দিয়ে দেয়া হয়।

কিম জং উনের প্রতি তেলাঞ্জলি নিবেদনের জন্য চীন থেকে কয়েকটি তেলের ব্যারেল এসে পৌঁছেছে। ওয়াকার্স পার্টির তেলাঞ্জলি ইউনিট দিনমান টিভি টকশোগুলোতে গিয়ে এই তেল ঢালছে কিম পরিবারের প্রতিকৃতিতে।

জাতীয় স্কোয়ারে আয়োজিত স্কোয়ারে তেল ছড়ানো পথে অভিনব এক তেলকুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়।

পিয়ং ইয়ং-এ নির্মীয়মান মেট্রোরেল ধরে গর্ব প্রকাশের এক মানব বন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

রাতের এক রাষ্ট্রীয় আয়োজনে অর্থমন্ত্রী লোং টান সুং তার প্রাণপ্রিয় নেতা গণতন্ত্রের মানসপুত্র কিমকে একটি জিডিপির মালা পরিয়ে দেন।

মন্ত্রীসভার সদস্যরা সমস্বরে গেয়ে ওঠে, জয় নর্থ কোরিয়া বলে এগিয়ে চলো। কিম তুমি আমাদের ঈশ্বর একটা কিছু বলো!

কিম  উত্তর দেন, ‘গণতন্ত্র ও উন্নয়নের শত্রুদের ষড়যন্ত্রের দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিন।‘

আনন্দের আতিশয্যে এসময় নিজেদের দাঁত ভাংতে থাকে মন্ত্রীসভার সদস্যরা।

(পিয়ং  ইয়ং এর ডায়েরি)

৪১৪ পঠিত ... ১২:৩৩, এপ্রিল ১৬, ২০২২

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top