প্রাক বৃদ্ধকালের 'এইজ অ্যাক্টিভেটেড অ্যাটেনশন ডেফিসিট ডিজঅর্ডার'

৩৭০ পঠিত ... ১৮:০৯, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২২

Prak-briddhokaler

ইন্টারনেট যুগে মনোযোগের অভাব আবাল-বৃদ্ধ বণিতার সকলের। মনোযোগ দিয়ে কথা না শুনে পট করে রেগে ওঠাদের তাই প্রতিদিন ফেসবুকে দেখা যায়।

চলুন দেখা যাক কীভাবে এইজ অ্যাক্টিভেটেড অ্যাটেনশন ডিজ অর্ডার বা এডিডি'র লক্ষণ ধরা পড়ে।

দবির ঠিক করলো বাগানে পানি দেবে। হোস পাইপ দিয়ে গাড়ির প্রবেশপথের পাশের গাছে পানি দিতে গিয়ে চোখ পড়ে গাড়ির দিকে। বিড়বিড় করে বলে, গাড়িটা নোংরা হয়ে আছে; এটা ধোয়া দরকার।

গ্যারেজের দিকে হাঁটতে দিয়ে চোখে পড়ে পোর্চের টেবিলে মেল বক্স খুলে এনে ফেলে রাখা চিঠির খামগুলো পড়ে ওখানে।

‘গাড়ি ধোয়ার আগে চিঠি গুলোর খাম খুলে দেখা করা দরকার।‘ দবির মনে মনে বলে।

গাড়ির চাবি টেবিলের ওপর রেখে জাংক চিঠিগুলো টেবিলের নীচে তাকিয়ে দেখে গার্বেজ ক্যান বিয়ারের খালি বোতলে পরিপূর্ণ।

সুতরাং চিঠিগুলো আবার টেবিলে রেখে গার্বেজ ক্যান খালি করার সিদ্ধান্ত নেয় সে।

কিন্তু আবার চিন্তা আসে গার্বেজ ক্যান পরিষ্কার করতে গেটের বাইরে যেতে হবে; ওখানে গার্বেজ কনটেইনারের পাশে তো মেইল বক্স। সেখানে নতুন চিঠি এসেছে। কাজেই আগের চিঠির বিলগুলো  পরিশোধের ব্যবস্থা করা যাক আগে।

টেবিল থেকে চেক বুক তুলে দেখে মাত্র একটা পাতা বাকি আছে। এক্সট্রা চেকবুক আছে স্টাডি রুমের ডেস্কে। সুতরাং বাসার ভেতরে গিয়ে স্টাডিতে ঢুকে দবির দেখে কোক খেয়ে অর্ধেক কোক ভরা ক্যান ফেলে গিয়েছে সে।

চেকবুক খুঁজতে গিয়ে হাতের ধাক্কা লেখে কোক যাতে পড়ে না যায় মেঝেতে সেই সাবধানতা অবলম্বন করতে কোকের ক্যান ফ্রিজে রাখতে যায় দবির। ঠাণ্ডা হলে খাওয়া যাবে এই আশায়।

কিচেন টেবিলের ওপর ফুলদানির দিকে নজর যায়, ফুলগুলোতে পানি দেয়া প্রয়োজন।

কোকের ক্যান কিচেন টেবিলে রাখতে গিয়ে দেখে সকাল থেকে যে চশমাটা খুঁজে পাচ্ছে না; সেটা ওখানে পড়ে।

কিচেন কাউন্টারে পড়ে থাকা চশমাটা স্টাডি রুমের ডেস্কে রেখে আসা দরকার। কিন্তু তার আগে ফুলগুলোতে তো পানি দেয়া দরকার।

চশমাটা আবার রেখে একটা পাত্রে পানি ভরতে গিয়ে  দেখে কেউ সেখানে

টিভি রিমোট ফেলে গেছে। সকালে টিভি দেখার সময় রিমোট খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না।

সুতরাং রিমোট জায়গামতো রেখে আসা দরকার; নইলে দবির ভুলে যাবে। কিন্তু তার আগে ফুলগুলোতে পানি দেয়া দরকার। সাতচিন্তার মধ্যে ফুলে পানি দিতে গিয়ে পানি অনেকটাই মেঝেতে পড়ে যায়।

সুতরাং ছোট তোয়ালে আনতে যায়, মেঝে মোছার জন্য। এসময় দবিরের অনুতাপ হয়; আজ কতোকিছু করার প্ল্যান করেছিলো; কিন্তু দিন শেষে গাড়ি ধোয়া হয়নি, জরুরি বিল দেয়া হয়নি,গরম কোক নিয়ে ক্যানটা পড়ে কিচেন কাউন্টারে, ফুলে ঠিকমতো পানি দেয়া হয়নি। চেকবুকের একটা পাতা ফরফর করে উড়ে বিদ্রুপ করছে যেন। রিমোট কোথায় মনে নেই, চশমাটাই বা কোথায়; গাড়ির চাবিটা কোথায় রেখেছিলো মনে নেই।

সারাদিন ব্যস্ত থেকেও কোন কাজ হয়নি; এখন দবিরের শরীর জুড়ে ক্লান্তি। এরকম সিরিয়াস সেলফ ম্যানেজমেন্টের প্রবলেম সারতে বন্ধু সাবেতকে মেইল করতে হবে এই সারাদিনের পণ্ডশ্রমের বর্ণনা দিয়ে।

দবিরের আবার মনেও নেই; এরকম মেইল আগেও সাবেতকে পাঠিয়েছে কিনা! দবিরের এই চার্লি চ্যাপলিন দশা দেখে হাসাহাসি করার কারণ নাই। আজ যে দবিরকে নিয়ে হাহাকারী, ডিজিটাল লাফটার সিকিউরিটি অ্যাক্টের শাস্তিতে সে নিজেও দবিরের মতো হয়ে যাবে। ঘুঁটে পোড়ে গোবর হাসে।

৩৭০ পঠিত ... ১৮:০৯, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২২

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top