লেখা: সাইয়েদ আব্দুল্লাহ
সন্দেহটা প্রথমেই হয়েছিল, এই কয়েকদিন অবজার্ভ করে বিশ্বাসটা একেবারেই পাকাপোক্ত হয়েছে। একেবারে প্রথম থেকেই মনে হয়েছে SUST এর ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে ফাঁসানো হচ্ছে। এই প্লটটা পুরোপুরি পরিকল্পিত, এতে কোন সন্দেহ-ই নেই।
একটু লক্ষ্য করে দেখুন, এই ঘটনার শুরু হয়েছিল খুব তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে, হল প্রোভোস্ট না হয় একটু বিরক্তির সুরে কথা বলেছেই, তাই বলে ছাত্রীদের আন্দোলনে নেমে যেতে হবে? প্রোভোস্টের পদত্যাগ চাইতে হবে?
তারপর এসব শিক্ষার্থীদের উচ্ছৃঙ্খলতা ঠেকাতে ছাত্রলীগ নরম সুরে তাদেরকে বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করেছে, সেটার পর থেকেই সকল শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে আন্দোলন করে ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করে তুলেছে। এরপরই তারা কোন কারণ ছাড়াই ভিসির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। ভিসিকে অবরুদ্ধ করে। চিন্তা করে দেখুন একবার, এই শিক্ষার্থীরা কত বড় বেয়াদব! একজন পিতৃতুল্য শিক্ষক, যিনি আবার একজন ভিসি, তাকে এভাবে অবরুদ্ধ করে রাখে!
শেষপর্যন্ত কোন উপায়ন্তর না দেখে ভিসি নাহয় নিরাপত্তার জন্য আইনী সহায়তা চেয়েছে,পুলিশ ক্যাম্পাসে এসে গুলি ছুঁড়েছে, বিপথগামী ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করতে গ্রেনেড ছুঁড়েছে, টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করেছে, লাঠিপেটা করেছে।
এছাড়া কী-ই বা আর করার ছিল বলুন?
মাত্র কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে দৌড়াদৌড়ি করতে গিয়ে, আবার আন্দোলনটা নানাদিকে প্রবাহিত হওয়া শুরু হলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা নিজেদের ভেতরও বিভিন্ন গ্রুপে হাতাহাতি-সংঘর্ষ হয়ে আহত হয়।
এখন যাবতীয় দোষ এখন চাপানো হচ্ছে ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিনের নামে। সুযোগ পেয়ে আজ সবাই ভিসির বিরুদ্ধে কথা বলছেন। কিন্তু আমার প্রশ্ন হল ভিসি স্যারের স্পেসিফিক দোষটা কোথায়?
উনি একজন আদর্শিক মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের কর্মী, উনি সরকারী দলের একজন শুভাকাঙ্ক্ষী, এটাই কি উনার দোষ? উন্নয়নের রূপকার বর্তমান এই সরকারের যারাই পৃষ্ঠপোষকতা করে, ধরে ধরে দেখবেন সুকৌশলে তাদেরকেই ফাঁসানোর চেষ্টা করে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির দোসররা। শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্য যে এই শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে মৌলবাদী পাকি প্রেতাত্মা ও স্বাধীনতা বিরোধী কুচক্রীমহল খুবই কৌশলে তাদের এই কাজগুলো বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। মনে করে দেখুন ২০১৮ সালে এই সাস্টেই দেশবরেণ্য ও সর্বজনশ্রদ্ধেয়, দেশের শীর্ষ বুদ্ধিজীবী জাফর ইকবাল স্যারকেও আক্রমণ করা হয়েছিল।
ওই অপশক্তি কিন্তু এখনও শক্তিশালী, একথা ভুলে গেলে চলবেনা। বরং আগের চেয়েও এরা আরও বেশি সুসংগঠিত।
দেখুন, ভিসি ফরিদ স্যারকে ফাঁসানোর জন্য তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে টানাহেঁচড়া করে তাকে পাবলিক ট্রায়ালের মুখোমুখি করা হচ্ছে খুব বাজেভাবে। উনার পিএইচডি নেই, নেই তেমন কোন গবেষণাপত্র,তবুও তাকে কেন ভিসি বানানো হয়েছে,এই প্রশ্ন তুলছেন অনেক অনুর্বর মস্তিষ্কের লোকজন। আরে ভাই, ভিসি হতে দরকার প্রশাসনিক দক্ষতা, অন্যসব কথা টেনে এনে তাকে কেন ব্যক্তি আক্রমণ করা হচ্ছে। উনি রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত প্রজ্ঞাশীল একজন ব্যক্তি, গার্মেন্টস ব্যবসায়ী সংগঠনের সাথেও সম্পৃক্ততা আছে ওনার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা করেছেন এবং সেখানে বর্তমান সরকারী দলের একান্ত অনুগত হিসাবে শিক্ষক সমিতির প্রভাবশালী নেতা ছিলেন, এগুলো কি তার প্রশাসনিক দক্ষতার পরিচয় দেয় না?
আবার দেখুন, সেই কবে না কবে কথাপ্রসঙ্গে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়ে শিক্ষার্থীদের কিছু বাজে অভ্যাস নিয়ে উদাহরণ দিয়ে অন্যদের সতর্ক করার চেষ্টা করেছেন সরল বিশ্বাসে, সেটা নিয়েও এক হুলস্থূল কাণ্ড বাঁধিয়ে দিচ্ছে সবাই।
কেন এসব? একটু ভাবতে চেষ্টা করুন। সোনার বাংলায় আজ স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তির যারা অগ্রণী সেনা,তাদের বিরুদ্ধেই এভাবে টেকনিক্যালি ষড়যন্ত্র হয়। শুরু হয় মিডিয়া ট্রায়াল।
দেখুন ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে ওঁৎ পেতে থাকা একদল বিপথগামী প্রেতাত্মা আছে,যারা সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের উস্কানি দিয়ে এভাবে রাতদিন ভিসির বিরুদ্ধে আন্দোলন করাচ্ছে।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করতে হল বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে ভিসি স্যার, তাদেরকে নিজ নিজ বাড়ি চলে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই শিক্ষার্থীরা ঠিক কতোটা বেয়াদব হলে বাড়িতে গিয়ে পরিবেশ শান্ত করার পরিবর্তে আন্দোলন করে বেড়াচ্ছে ভিসির বিরুদ্ধে। তারা তাদের পিতামাতা সমতুল্য গুরুজন শিক্ষকবৃন্দকে বরং আবাসিক বাসা ছেড়ে চলে যেতে বলেছে! এতোটা বেয়াদবি করার ধৃষ্টতা তাদের কে শেখালো?
করোনার এই ঊর্ধ্বগতির ভেতর এসব সাধারণ শিক্ষার্থীরা গাদাগাদি করে একসাথে বসে-দাঁড়িয়ে আন্দোলন করছে,এই শিক্ষার্থীরা করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করছে,এরপর এরা অসুস্থ হলে তার দায় কে নিবে?
এইযে এরা না খেয়ে অনশন করে বসে আছে,এদের কিছু হলে তার দায় আবার বিশ্ববিদ্যালয় কেই চাপাবে।
তখন কি এই দায় ভিসির নেওয়া উচিৎ কিনা?
অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে সরকার বিরোধী মনোভাবের লোকজনের উস্কানিমূলক ইন্ধনে একশ্রেণির প্রতিক্রিয়াশীল ছাত্ররা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ভিসি স্যারের অপসারণ চেয়ে এখনও আন্দোলন চালিয়েই যাচ্ছে। ভিসি ফরিদ স্যারকে এভাবে সবার সামনে ফাঁসানো হচ্ছে। পুরো এই ঘটনায় ফরিদ স্যারকে উপস্থাপন করা হচ্ছে একজন নির্যাতনকারী প্রশাসক হিসাবে,অথচ ভিসি স্যারই প্রকৃতপক্ষে সবচেয়ে বড় নির্যাতনের শিকার এক্ষেত্রে।
এই উচিত কথাটা অনেকেই জানেন,কিন্তু পারিপার্শ্বিক উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কথা বলতে দ্বিধা করছেন। কিন্তু কে কী বললো,সেসব আমি মোটেই পরোয়া করিনা। আমি তাই স্পষ্টভাষায় বলে দিতে চাই আমার সমর্থন ফরিদ স্যারের সাথেই আছে।ফরিদ স্যারের অপসারণ তো চাই-ই না,উল্টো যেসব কুলাঙ্গার তার অপসারণ চাচ্ছে,তাদের বিচার চাই। এইসব কুলাঙ্গার শিক্ষার্থীদের বিচার চাই। এদের সবাইকে বহিষ্কার করা উচিৎ ভার্সিটি থেকে। দুষ্টু গরুর চেয়ে শূন্য গোয়াল-ই ভালো।
.............যাইহোক, ভাই- বোনেরা, এতটুকু পড়ে আগেই আমার চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার কইরেন না,দোহাই লাগে।
আসল কথাটা বলতেছি দাঁড়ান।
কথাটা হইল, নির্লজ্জ, বেহায়া ভিসি ফরিদ হাজারটা অপকর্ম করলেও এখনও বহু চেতনার আদর্শে দীক্ষিত দালালরা তাকে মনেপ্রাণে সমর্থন করে নিশ্চিত। কিন্তু এই দালালগুলো কীভাবে তার পক্ষ নিয়ে লিখবে বা কথা বলবে,তা বুঝে উঠতে পারছে না ঠিকঠাক। তাদেরকে একটু সহায়তা করতেই এই প্রয়াস। তো, লেখাটা কেমন হল জনগণ?
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন