টাঙ্গুয়ার হাওর বাংলাদেশের এক অনন্য পর্যটন সম্পদ। তবে ফেসবুকে টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘোরার ছবি দেয়ার আগ্রহে হোক আর যে কারণেই হোক, এ বছর টাঙ্গুয়ার হাওরে উপচে পড়া ভিড়। সম্প্রতি খবর এসেছে, অতিরিক্ত পর্যটকের চাপে ঝুঁকির মুখে টাঙ্গুয়ার হাওর ও এর অনুপম সৌন্দর্য। আপনিও যদি এ বছর (বা পরেরবার) টাঙ্গুয়ার হাওরের উদ্দেশ্যে রওনা হন, তাহলে আগেই জেনে নিন কীভাবে জায়গাটির পরিবেশ আরও ভালো করে নষ্ট করবেন। সবাই করছে, আপনি পিছিয়ে থাকলে চলবে কেন! এই টেকনিকগুলো অ্যাপ্লাই করুন এবং যত দ্রুত সম্ভব টাঙ্গুয়ার হাওরকে ধ্বংস করে ফেলুন।
১# চিপসের প্যাকেট, বাদামের খোসা, ড্রিংকের বোতল দুই মাস আগে থেকে জমানো শুরু করবেন। ট্যুরে গিয়ে হাওরের পানিতে ছড়িয়ে দেবেন সব।
২# হাওরের পানিতে ছোটটা না করলে কি ফিল আসে বলেন? চাপ থাকলে সেরে নিতে পারেন বড়টাও। ভালমতো যেন পানি নোংরা করতে পারেন সেজন্য কয়েক মাস ধরে বাথরুম জমিয়েও রাখতে পারেন।
৩# রাতের বেলা সাউন্ডবক্সে জোরে জোরে গান বাজাবেন। ঘুরতে এসেছেন, চিল ম্যান! মাছ তো মাছ, পাশের নৌকার মানুষজনও যেন একদণ্ড বিশ্রাম করতে না পারে, এইটা আপনার দায়িত্ব। পাখি টাখি যা আছে সব যেন শোরগোলে ভেগে যায়।
৪# যে নৌকায় আপনারা ঘুরছেন, সেটা তো আপনার চৌদ্দপুরুষের সম্পত্তি (পাঁচ পুরুষ আগেরজন এই এলাকায় মাঝি থাকতেই পারে, তাই না?)। নৌকায় ধুপধাপ লাফাবেন, একটু ফুটো করে দেখবেন পানি ঢুকছে কিনা। এক-দুই দিন পর নৌকার যে হালই হোক, তাতে আপনার কী আসে যায়?
৫# লাইফ জ্যাকেট? হাহ! হাওরে ঘুরতে এসে আপনাদের কথায় একটু নিজের মতো থাকা যাবে না নাকি? লাইফ জ্যাকেট পরলে আর মজা হয় ক্যামনে? যতটা অনিরাপদ থাকা যায় তাই থাকুন। প্রকৃতির কাছাকাছি আসছেন ঝুঁকি নেবেন না? হোক নাহয় জীবনের শেষ ঝুঁকি...
৬# হাওরে বজ্রপাত হলে ছৈয়ের ভেতর থেকে বের হয়ে খোলা আকাশের নিচে আসুন, বজ্রপাত উপভোগ করুন। ‘সেল্ফি উইথ বজ্রপাত’ হ্যাশট্যাগে আপলোড করুন ইনস্টাগ্রামে।
৭# টাঙ্গুয়ার হাওর যাওয়ার সময় সাথে অ্যাকুরিয়াম নিয়ে যান। যা যা মাছ পাবেন সব ভরে বাসায় নিয়ে আসবেন। বাজারে বিক্রিও করতে পারেন।
৮# হাওরের বিশুদ্ধ বাতাসে নৌকায় বসে খাওয়াদাওয়া করবেন। তারপর কাটাকুটা, হাড্ডিগুড্ডি, তেল-চর্বি সব ফেলবেন হাওরে। আপনার রসনাতৃপ্তির ছাপ রয়ে যাক হাওরের জলে।
৯# হাওর মানে তো শুধু হাওর না। রয়েছে যাদুকাটা নদী, শিমুল বাগান আরও অনেক কিছু। যেখানেই সুযোগ পাবেন; পাথরের ফলকে, বসার জায়গায়, গাছের ছালে নিজের নাম+প্রিয়জনের নাম লিখে আসবেন। এতে আপনাদের প্রেম হবে অক্ষয়।
১০# সাথে করে ছররা রাইফেল, গুলতি নিয়ে যেতে পারে। মাছ খাবেন হাওরের, আর পাখিগুলো বেঁচে যাবে আপনার হাত থেকে? কখনোই নয়। হাওরের প্রাকৃতিক ফিল নিতে নিতে পাখি ধ্বংস করবেন এবং গুনগুন করে গান গাইবেন, 'মানুষ আমি কেন আমার পাখির মতো মন!'
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন