মুভি রিভিউ: ইহা কোনো প্রামাণ্যচিত্র নয়, সামান্যচিত্র মাত্র

২৩৯৪ পঠিত ... ০৫:৪১, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০২১

docu review

Humpty Dumpty sat on a wall,
Humpty Dumpty had a great fall.
All the king's horses and all the king's men
Couldn't put Humpty together again.

এই ছড়া শিশুকালে শুনেছিলো যারা; তারা এই নার্সারি রাইম থেকে তুলে আনা শিরোনামের এক সামান্যচিত্র দেখে নড়েচড়ে বসেছে। হৈ চৈ কিংবা দুপুর বৌদির ওয়েব সিরিজের মাঝে যেমন নিষিদ্ধ আনন্দের খোরাক; শিশুতোষ হামটি ডামটি ছড়া প্রভাবিত এক সামান্যচিত্রে কেন ঠিক তেমনি লুকিয়ে লুকিয়ে দেখার আনন্দ পেলো দর্শক; তা খুবই বিস্ময়ের ব্যাপার।

এক্সট্র্যাকশান মুভিতে পরিচিত পল্লীতে তুমুল একশান; গ্যাংস অফ ওয়াসিপুর চলচ্চিত্রের যে টান টান উত্তেজনা; এ সবই কিন্তু এই হামটি ডামটি সামান্যচিত্রের উপজীব্য। হয়তো অনুভূতি আহত হবার বাড়তি টেনশানে এক্সট্র্যাকশান কিংবা গ্যাংস অফ ওয়াসিপুরের চেয়ে অনেক বেশি বক্স অফিস হিট হয়ে গেলো এই সামান্যচিত্র।

আলফ্রেড হিচককের সাইকো এনালিটিক ফিল্মের মতো (ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হলেও) এই সামান্যচিত্রের একটি চরিত্রকে ধূমপান করতে করতে মারফতি সংলাপ আউড়াতে দেখা যায়। অসম্ভবকে সম্ভব করার অনন্ত জলিলীয় প্রত্যয় নিয়ে আজ সে মোহম্মদপুর তো কাল বুদাপেস্ট; পরশু সিঙ্গাপুর তো তারপরদিন প্যারিস; কেমন করে ঘুরছে মানুষ যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে; এটা দেখিয়েই ছাড়ে সামান্যচিত্রের চরিত্রটি।

জর্জ অরওয়েলের 'নাইনটিন এইটিফোর' কাহিনীর মতো পৃথিবীকে হাতের মুঠোয় এনেছে সে গুপ্ত ক্যামেরায়; অথচ এই চলচ্চিত্র ধারণেও ব্যবহৃত হয়েছে সেই একই গুপ্ত ক্যামেরা। এ যেন বাস্তব জীবন ও চলচ্চিত্র জীবনের গুপ্ত ক্যামেরা জীবনের শুভ সূচনা।

এই সামান্যচিত্রের কাহিনী 'যন্ত্র ঐ একটাই-ষড়যন্ত্র' দর্শনের এক প্রতিবিম্বিত প্রতিরূপ যেন। মহাভারতের পঞ্চপাণ্ডব; দ্রৌপদীর স্বয়ম্বর সভা; কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পরাবাস্তব টেকস্যাভি উপস্থাপন যেন এই সামান্যচিত্র।

ক্রিস্টোফার নোলানের 'ইনসেপশান' চলচ্চিত্রের মতো স্বপ্নের মধ্যে স্বপ্ন; তার মধ্যে স্বপ্ন; হত্যা-ক্ষমা-হিংসা-প্রতিহিংসা-দুষ্টের দমন শিষ্টের পালন; কিছুটা বুঝতে পারা; কিছুটা দুর্বোধ্যতা; ভাইয়ের সঙ্গে ভাইয়ের মিলন ও বিরহের দোলাচল চলে পুরো সামান্যচিত্র ব্যাপী। মূল চরিত্রটি বার বার ঘুরে ফিরে হামটি ডামটির হামটির কথাই যেন মনে করিয়ে দেয়।

মারিও পুজোর 'গড ফাদার' উপাখ্যানের আদলে ব্যাপ্টিজম দৃশ্যটির পুনরাবৃত্তি চোখে পড়ে গুপ্তক্যামেরায়। আবার গডফাদার চলচ্চিত্রের নৃত্যদৃশ্যের আদলে নাচে গানে ভরপুর রঙের বাড়ই দর্শকের বিনোদন আকাংক্ষাকে প্রশমিত করে।

ফিল্মক্রিটিকরা অনেকেই একে প্রামাণ্যচিত্রের তকমা এঁটে দিলেও শেষ বিচারে এটি সামান্যচিত্র; টিপ অফ দ্য আইসবার্গ বলছেন অনেকে। বিশেষ করে ঈদের পরে 'টাইটানিক' ছবি মুক্তির অভীপ্সা নিয়ে যারা ঘুরছেন; তারা এই সামান্যচিত্রকেই সব্বনেশে হিমশৈলের চূড়া ভেবে একে 'ওয়াটার গেট স্ক্যান্ডালধর্মী' প্রামাণ্যচিত্র আখ্যা দিচ্ছেন। সামান্যচিত্রে এই প্রথম হুইসেল ব্লোয়ার 'ডিপথ্রোট'-এর দেখা মিলেছে; এমন পুলকের গুঞ্জন শোনা গেছে অনেক দর্শকের কন্ঠে।

এই সামান্যচিত্রকে ঘিরে 'যন্ত্র ঐ একটাই- ষড়যন্ত্র' আর 'ঈদের পরে টাইটানিক ডুববে' এই দুই ঘরানার স্বাপ্নিক দর্শকের আবির্ভাব ঘটেছে। যে কোন চলচ্চিত্র মুক্তির পরে 'অনুভূতি'র সতত প্রবাহিত দুটি ধারার যে ফিল্ম ক্রিটিকদের দেখা মেলে; এই সামান্য চিত্র মুক্তির অব্যবহিত পরেই সেই দুটি ধারা সমান্তরালে বইছে। এবারের ধারা দুটিকে আল-জাজিরা ও আল-বাতাবি এই দুটি ভাগে ভাগ করা যায় মোটা দাগে। বারান্দায় বসে যে চলচ্চিত্রমোদিরা এরকম সামান্য চিত্র দেখেন; তারা অবশ্য অরসন ওয়েলেসের 'সিটিজেন কেন'-এর প্রতীকী উচ্চারণ 'রোজ বার্ড' শুনছেন; এমন অনেক প্রতিক্রিয়া দৃশ্যমান।

নেটফ্লিক্সে 'কিউপিন' ধারাবাহিকের একটি সিজন দেখে যারা তৃষ্ণা নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন; তারা এই সামান্যচিত্রের নতুন সিজনের দেখা পেয়ে বিনোদনহীন জীবনে বিনোদনের যথেষ্ট মশলা পেয়েছেন যেন। নয়ার চলচ্চিত্রের বিকাশমান ধারায়; টান টান উত্তেজনার ঠাসবুননে গ্যাংস অফ মোহম্মদপুরের যে বিশ্বায়ন ঘটেছে এই সামান্যচিত্রে; তা একট্র্যাকশান চলচ্চিত্রের টুপিতে গর্বের পালক যেন।

কেবলমাত্র সেলিন ডিওনের গাওয়া 'I Will Always Love You' or 'My Heart Will Go On?' এর অভাব বোধ করা গেছে; এমনটা মনে করছেন অনেক চলচ্চিত্রবোদ্ধা।

২৩৯৪ পঠিত ... ০৫:৪১, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০২১

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top