আমাদের বিভক্তির ইতিহাস ও তার ধারাবাহিকতা

৫১৮ পঠিত ... ২০:১৩, অক্টোবর ০৭, ২০২০

 

* প্রথমে আমরা সবাই মিলে কোনো একটি ঘটনা বা পরিস্থিতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে উঠবো। তখন আমাদের মূল লক্ষ্য শুধু একটাই থাকবে, অন্যায়ের প্রতিবাদ এবং অপরাধীর বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করা।

* প্রাথমিক উত্তেজনা স্থিমিত হয়ে এলে 'আমি' যখন নজর দেবো পাশের জনের দিকে, দেখবো ’আমি’ যেভাবে যতটুকু চিৎকার করছি, পাশের জন ঠিক সেভাবে চিৎকার করছে না।

* তখন 'আমি' বিরক্ত হয়ে অন্যপাশে তাকাবো। দেখবো 'আমার' হাতের ব্যানারে যে ভাষায় প্রতিবাদের তীব্রতা আছে বলে 'আমি' মনে করছি, পাশের জনের ব্যানারের ভাষাটা ঠিক সেরকম তীব্র হয়ে ওঠেনি।

* 'আমি' তখন নজর দেবো সামনের দিকে। মনে হবে সামনের লোকগুলো একটু বেশি জোরে হাঁটছে। 'আমি' তখন দার্শনিকের মতো জ্ঞান দেবো 'দীর্ঘমেয়াদে ভাবতে হবে বাছা, অতো জোরে দৌড়ুলে ক্লান্ত হয়ে যাবে তো। আমার গতিতে হাঁটো।' ব্যাপারটাকে আরো পোক্ত করতে ইংরেজিতে বলবো Follow ME!

* তারপর তাকাবো পেছন দিকে। অবাক বিস্ময়ে দেখবো এরা অনেক ধীর গতিতে হাঁটছে। তাদের উদ্দেশ্যে খিঁচিয়ে উঠবো 'পার্কে বেড়াতে এসেছো? যাও ঝালমুড়ি কিনে খাও, আন্দোলন এতো সোজা নয় বাপু, হু হু...'

* একে একে যেদিকেই তাকাই দেখবো চরম অধপতন। কেউই 'আমার' মতো তীব্র প্রতিবাদি হয়ে উঠতে পারেনি এরা। কী আশ্চর্য! ‘আমি’ কেবল এবং একমাত্র 'আমি' শুধু তীব্র আগুন হয়ে উঠতে পেরেছি! বাকিরা সব যাচ্ছেতাই রকমের পানসে!

* তারপর তাকাবো ফেসবুকের দিকে। দেখবো কেউ ছড়া লিখে প্রতিবাদ করছে, কেউ করছে গান, কেউ বাড়িতে বসে নাচের ভিডিও আপলোড করে প্রতিবাদে শামিল হচ্ছে। তাদের ঝাড়ি দেবো 'এটা কি শিল্প সাহিত্য করার সময়? দেখো না 'আমি' কেমন রগ ফুলিয়ে স্লোগান দিচ্ছি? তুমিও আসলে অপরাধ-প্রবণ, তোমার বিরুদ্ধেও 'আমি' প্রতিবাদ শুরু করলাম!'

* যারা 'আমার' মতোই স্লোগানমুখর হয়ে উঠেছিলো, হঠাৎই নজরে আসবে যে তাদের পোশাক ঠিক 'আমার' মতো না। মনে হচ্ছে একটু যেন সেজেগুজে এসেছে। অথবা স্লোগান দেওয়ার সময় হাত যথেষ্ট মুষ্টিবদ্ধ হচ্ছে না।

* দেখবো অমুকেরা প্রোফাইল পিকচার পাল্টে বিপ্লব করছে। 'আমি' তাদের বিরুদ্ধে এবার তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলবো ‘এসব বা*ছাল করেই এরা আন্দোলনটার জি-বাংলা মেরে দিচ্ছে, আগে এদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠতে আমাদের’!

* দেখবো পৃথিবীতে একমাত্র 'আমিই' সহীহ বিপ্লবী, আর কেউ বিপ্লব করতেই জানে না!

* তারপর দেখবো তমুকেরা শাকিরার গান শুনছে। পৃথিবীর সব মানুষের এইসব আবলামি দেখতে দেখতে 'আমি' ততোক্ষণে রেগে আগুন হয়ে গেছি। আর সইতে না পেরে 'আমি' এবার তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বো।

* 'আমার' ডানপাশের জনও তাই করবে, বাম পাশের জনও। সবদিকে 'আমরা' পরস্পর দ্বন্দ্বে এবং সংঘাতে লিপ্ত হবো।

* তারপর একসময় 'আমরা' পরষ্পরকে প্রশ্ন করবো 'আমরা যেন কী নিয়ে প্রতিবাদ করছিলাম?'

* যাদের বিরুদ্ধে আমরা প্রতিবাদ শুরু করেছিলাম, তাদের যদিও অতো দ্বন্দ্ব-সংঘাত-দ্বিধা নেই, ছিলো না কখনো, থাকবেও না কখনো। ’আমাদের’ দৌড় কদ্দুর, তাও তাদের অজানা নেই। তাই তারা নিষ্ঠার সঙ্গে নিজেদের আদি ও অকৃত্রিম ‘দায়িত্ব’ পালন করে যেতে থাকবে।

বি:দ্র: এটা নিছকই একটি গল্প। উল্লেখিত সকল ঘটনা ও চরিত্র কাল্পনিক। অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যতের কোনো ঘটনা ও চরিত্রের সঙ্গে ইহার সামান্যতম মিল খুঁজিয়া পাইলে উহাকে কাকতাল বলিয়া ধরিয়া লইতে হইবে। নইলে আপনার বিরুদ্ধেও 'আমি' একাই তীব্র আন্দোলন গড়িয়া তুলিবো।

৫১৮ পঠিত ... ২০:১৩, অক্টোবর ০৭, ২০২০

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top