করোনার কারণে অনেকেরই বাসযাত্রা আপাতত বন্ধ। বাসেও নেই ভিড়ভাট্টা, ঠেলাঠেলি। অনেকেই হয়তো বাসে চলাচলের চিরাচরিত আদব-কায়দাগুলো ভুলে গিয়ে থাকবেন। তা মনে করিয়ে দিতেই আমাদের এই প্রয়াস। একটাবার চোখ বুলিয়ে নিন...
১# বাসে উঠে অবশ্যই মহিলা সিটে বসবেন। খামাখা কষ্ট করে হেঁটে গিয়ে পিছে বসার কী দরকার? আর কোনো মহিলা এসে জায়গা ছেড়ে দেয়ার জন্য অনুরোধ করলে 'কেন, মহিলারাও তো পুরুষ সিটে গিয়ে বসে, আমরা কি উঠায়ে দেই?' লাইনে বিশাল লেকচার দেবেন।
২# অগত্যা যদি মহিলা সিট ছাড়তেই হয়, তাহলে বসবেন মহিলা সিটের ঠিক পেছনের সিটে। সিটে বসে সামনের সিটের সাথে 'হাঁটুশিল্প' বলে একটা ব্যাপার আছে। আপনি যে তার সুনিপুন শিল্পী, সেটা বুঝিয়ে দিন।
৩# বহুদিন বাসায় থেকে থেকে আপনার গালিচর্চায় মরচে পড়ে যাচ্ছে। বাস ড্রাইভার কড়া ব্রেক করলে, জায়গায় জায়গায় থামালেই আপনার গালি ভাণ্ডার বজ্রকণ্ঠে উজাড় করে দিন।
৪# সিটে বসার সময় অবশ্যই সোজাসুজি না বসে যতটা সম্ভব কোনাকোনি বসুন। তাতে আপনার কোনো লাভ নেই, কিন্তু আপনার সহযাত্রী বসার জন্য কম জায়গা পাবেন। সহযাত্রীর চেয়ে আপনি আরামে যাচ্ছেন, এরচেয়ে বড় লাভ আর কী আছে?
৫# বাসের কন্ডাক্টরকে ভুলেও ভাংতি টাকা দেবেন না। সব ভাংতি বাসের পেছনেই দেবেন, আপনি কি বোকা নাকি? আরাম করে পাঁচশো বা হাজার টাকার নোট ধরিয়ে দিন। ও এমনিতেই খানিকক্ষণ 'ভাংতি নাই, ভাংতি নাই', করবে। কানে তুলো দিয়ে রাখুন। নামার আগে ঠিকই ভাংতি ম্যানেজ করে ফেরত দিয়ে যাবে।
৬# হাঁচি-কাশি-ঢেঁকুর ইত্যাদি এলে সেটা সশব্দে সম্পাদন করুন। জৈবিক ক্রিয়ায় আবার লজ্জা কীসের? কফ-থুতু ফেলতে চিন্তা করার দরকার নেই। জানালা খুলে সশব্দে ফেলুন। চলন্ত বাস থেকে কার মাথায় বা কাপড়ে পড়লো- সেটা তার মাথাব্যথা, আপনার না।
৭# আবার, বমির ক্ষেত্রে জানালার বাইরে করার দরকার নেই। উড়ো বাতাসে জামাকাপড় মাখামাখি হয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে নিরাপদ হলো পাশের যাত্রীর গায়ে বমি করা। বাসের মেঝে নোংরা করার একেবারেই দরকার নেই।
৮# ফোন আসলে সেটাকে কখনই কানে ধরবেন না। লাউডস্পিকারে কথা বলুন। বাসের সহযাত্রী মানে তো ওরা আপনার জীবনেরও একটা অংশের সহযাত্রী। শুনুক ওরা আপনার পারিবারিক বা অফিসের আলাপ, কী আসে যায়? যথাসম্ভব উচ্চস্বরে কথা বলবেন, যেন বাসের একেবারে কোনার সিটে বসা যাত্রীটাও সব শুনতে পায়।
৯# নিজের পায়ে দাঁড়ানো জীবনের সবক্ষেত্রে ভালো। তবে শুধু বাসে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে পরের পায়ে দাঁড়াবেন। বাসের শক্ত মেঝেতে পা রাখার চেয়ে পাশে দাঁড়ানো ভদ্রলোকের পায়ে পাড়া দিয়েই দেখুন, কতো আরাম!
১০# বাসে ওঠা মাত্রই আপনি কেমন সংস্কৃতি প্রেমিক বা কোন হুজুরের ওয়াজ শুনতে বেশি পছন্দ করেন- সেটা অবশ্যই সবাইকে জানানো উচিৎ। জোরে জোরে ইউটিউব বাজান। বাসের সবাইকে আপনার রুচিতে বুঁদ করে ফেলুন। আপনি নামলেই সবার বুক খাঁ খাঁ করবে।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন