চাল-চোর অতিকায় ডাইনোসরদের বিলুপ্তির পরেও যেভাবে উন্নয়নের তেলাপোকারা টিকিয়া গেলো

১৬০৫ পঠিত ... ১০:৪৭, এপ্রিল ১১, ২০২০

উনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়। ফলে তৃণমূলের নেতারা যারা শত-বর্ষের ঐতিহ্য অনুযায়ী দরিদ্র মানুষদের জন্য দেয়া রিলিফের চাল চুরি করতো; তারা ক্রমে বিলুপ্ত হতে থাকে।

বিটিভিতে দেশ ভিক্ষুকমুক্ত হবার বিজ্ঞাপন দেখে দিশেহারা সে নেতাদের বিলুপ্তি প্রকৃতিতে ডাইনোসর বিলুপ্ত হবার গল্পের মতোই। ডাইনোসর বিলুপ্ত হলেও যেমন তেলেপোকা টিকে থাকে; ঠিক তেমনি করে 'চাল-চোরে'র বিলুপ্তির পরেও টিকে থাকে, তেলেপোকা বালিশ চোর, পর্দা চোর, হাসপাতালের সামগ্রী চোর, রেল-লাইনের লোহার পাত ও নাটবল্টু চোর, প্রকল্পের গাড়ি চোর, সরকারি গাড়ির তেল চোর, পুকুর খনন শিখতে বিদেশে সফরে যাওয়া পর্যটন চোর, সরকারি ক্ষমতা অপ- ব্যবহার করে চাঁদা তোলার এল আর ফান্ড চোর।

এই তেলাপোকারা 'দেশপ্রেম চুরি', 'ধর্ম চুরি', 'ক্ষমতা চুরি', 'ভোট চুরি', 'পদ-পদবী-পদক' চুরি, জনগণের 'বাক-স্বাধীনতা চুরি', 'ইতিহাস চুরি' থেকে 'ব্যাংক চুরি', 'শেয়ার বাজার চুরি', 'দেশের টাকা চুরি'; এমন কোন চুরি নেই যা করে না।

ফেসবুকে তেলাপোকারা ঘুরে ঘুরে লেখা চুরি করে। চুরি করা লেখা দিয়ে 'তেলাপোকার কাব্য' প্রকাশিত হয়।

চকিতে 'ক্যাসিনো চুরি'-র দায়ে ধরা পড়ে তেলাপোকারা যখন ছত্রভঙ্গ হবার পথে; ঠিক তখন মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘাঁ হয়ে আসে দুসংবাদ, তেলাপোকারা 'পাপিয়া ভাইরাসে' আক্রান্ত। তেলাপোকাদের হোম কোয়ারিন্টিন করা হয়। 'শারীরিক দূরত্বে' এক ঘোরতর চ্যালেঞ্জিং টাইম শুরু হয়।

এরপর করোনা ভাইরাস এলে তেলাপোকার উন্নয়নের ফেস্টিভ্যাল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। কিছু কিছু গার্মেন্টস তেলাপোকা 'করোনাকালে শ্রমিকের ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম চুরিতে' তবু সচেষ্ট থাকে। কিছু আবার তেলাপোকা 'করোনার ওষুধ তৈরি' করে 'আমরা চোর নই-মানবদরদী' এমন একটি ইমেজ চুরি করতে চেষ্টা করে।

কিন্তু করোনা যে বোঝে না! আশার সওদাগরদের 'কোথাও করোনা নেই' এমন ভেউ ভেউ স্বপ্ন চুরির বাসনাকে তেড়েফুঁড়ে করোনা সবকিছু লকডাউন করে দেয়।

যেহেতু সমুদ্র সৈকতে উন্নয়নের তেলাপোকার 'কোয়ালিটি টাইমের' সেলফি বন্ধ; তাই সমুদ্র থেকে কচ্ছপেরা সৈকতে উঠে এসে কোয়ালিটি সময় কাটায়। পথে পথে যেহেতু তেলাপোকার প্রকল্পের প্রাডো গাড়ি নেই, ব্যবসায়ী তেলাপোকার পোরশে নেই, সহমত তেলাপোকার টয়োটা করোনা নেই; তাই কুকুর এসে রাজপথের দখল নেয়।

প্রগতিশীল তেলাপোকা কুকুরের প্রতি সদয় হয়ে খাবার দিতে গেলে, কুকুর ধমক দেয়, দূর থেকে দাও; তোমাদের করোনা ভাইরাস আমার দেহে চলে আসবে; মরিতে চাহিনা এই সুন্দর ভুবনে।

ধার্মিক তেলাপোকারা করোনার প্রকোপে আর 'অনুভূতি চুরি' করতে পারে না আগের মতো। ফেসবুকে তারা করোনার দোয়া-তাবিজ বিলিয়ে যায়।

ক্ষমতাবান তেলাপোকারা তাদের সামান্য গুরুত্ব ধরে রাখতে তবু হুংকার দেয়, করোনা ঠেকাতে না পারলেও ঠেকিয়ে দেবো 'করোনা নিয়ে গুজব'। দেশপ্রেমিক তেলাপোকার ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার করে ক্ষমতাবান তেলাপোকা তুর্কেমেনিস্তানের তেলাপোকার মতো, যে পৃথিবী এখন এখন করোনার দখলে সেখানে 'নিজের দেশের মালিকানা' দাবি করে বলে, শুধু যারা দেশে থাকেন, সমালোচনা করলে যাদের বেঁধে আনা যাবে; শুধু তারাই সমালোচনা করবেন। বিদেশে যারা থাকেন, তাদের কোন অধিকার নেই সমালোচনা করার।

তেলাপোকার এসব রুটিন চর্বিত চর্বনের মাঝে চকিতে ফেসবুক লাইভে আসেন এক ডাইনোসর, তিনি কীভাবে ফুসফুস পরিষ্কার করে করোনাভাইরাস নির্মূল করা যাবে সেটা দেখান।

ওদিকে খবর আসে, হতদরিদ্রদের জন্য ১০টাকা কেজি দরে যে চাল দেয়া হচ্ছে, কিন্তু বেশ কয়েকটি এলাকায় সেই চাল নিয়ে দুর্নীতির দায়ে ইউনিয়ন পর্যায়ের কয়েকজন ডাইনোসরের জেল জরিমানা হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ধরা পড়েনি এমন কত সংখ্যক ডাইনোসর প্রকৃতিতে ফিরে এসেছে তা কে জানে।

চারিদিকে চাল-চুরির অভিযোগে চারিদিকে ডাইনোসরদের ধরা পড়ার খবরে বিষণ্ণ এক ডাইনোসরের বাচ্চা আক্ষেপ করে বলে, আরে ভাই ডাইনোসরেরও তো সংসার আছে, বউ বাচ্চার মুখে দুটি অন্ন তুলে দিতে হয়। এতো হাজার হাজার কোটি টাকা চুরি করে বিদেশে তৈরি হলো উন্নয়নের তেলাপোকার ঘর বসতি। সেইগুলির কোন বিহিত করতে পারলেন না। আর বিলুপ্ত প্রায় ডাইনোসর ফিরে এসে চাল চুরি করেছে; তাতেই আপনাদের আর সহ্য হইলো না। হিংসারে ভাই সবই হিংসা। না খেয়ে না দেয়ে কী দেশের সেবা করা যায় নাকি! দেশের সেবা করতে ডাইনোসরের মতো সুস্বাস্থ্য লাগে।

১৬০৫ পঠিত ... ১০:৪৭, এপ্রিল ১১, ২০২০

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top