যুবলীগ অফিসে যেমন কাটলো নতুন যুবলীগ চেয়ারম্যানের প্রথম কার্যদিবস

২৮৩১ পঠিত ... ১৭:৩৫, নভেম্বর ২৪, ২০১৯

যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান বলেছিলেন, পিএইচডি মানে পার্মানেন্ট হেড ডিফেক্ট। এতো বেশি পড়ালেখা দরকার নাই।

ভাগ্যের পরিহাসে যুবলীগের বর্তমান চেয়ারম্যান একজন পিএইচডি। তাও আবার সাহিত্যে। ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র পরশ যুবলীগের চেয়ারম্যান হবার পর জানা যায়; তার কবিতায় ঝোঁক আছে। আবার গিটার হাতে ছবি দেখে সংগীত অনুরাগের বিষয়টি সামনে এসে পড়ে।

যুবলীগের ক্যাসিনো কালচারের লোকেদের মাথায় বজ্রপাতের মতো এই আর্ট-কালচার ভেঙ্গে পড়লে; দলে দলে কবিতা গ্রন্থ ও গিটার কেনার হিড়িক পড়ে যায়। নতুন চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা হলে দু'এক ছত্র প্রাণের পদ্য শুনিয়ে দেয়া চাই।

অনেকে সমালোচনা করে, রাজনৈতিক শাখা সংগঠন যুবলীগকে লিটেরেরি লীগ বানানো কি ঠিক হইলো!

যুবলীগের চেয়ারম্যান প্রথম কার্যদিবসে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সকালের কবিতার ক্লাস নিয়ে যথারীতি পৌঁছে যান যুবলীগ কার্যালয়ে।

ফুল ও কবিতা নিয়ে হাজির অনেকেই। অনেকের হাতে গিটার। অভিনন্দন-শিল্পে এবার নতুন মাত্রা যোগের পালা।

যুবলীগের এক কর্মী সামিনা নবীর মতো ঢুলু ঢুলু চোখে গেয়ে ওঠে,

কবিতা পড়ার প্রহর এসেছে রাতের নির্জনে
জোনাকীর আলো নেভে আর জ্বলে
শাল মহুয়ার বনে।।
কবিতার সাথে চৈতী রাতে
কেটেছে সময় হাত রেখে হাতে
সেই কথা ভেবে পিছু চাওয়া মোর
স্মৃতির নকশা বুনে।।

চেয়ারম্যান খুব খুশি হন। অবশ্য বার বার মনে করিয়ে দেন, তিনি চেয়ারম্যান নন; কর্মীর মতো কাজ করতে চান।

অনেক ঘাগু লোক ভাবে, পিএইচডি তো; পার্মানেন্ট হেড ডিফেক্ট হইলে মানুষ বিনয়ী হয়। এইডা ভালা জিনিস না।

হেলমেট ও হাতুড়ি নিয়ে একশানে থাকা লোকেরা এই যুবলীগের 'লিটেরেরি লীগ' হয়ে ওঠার মুহূর্তে অত্যন্ত অসহায় বোধ করে।

আর ক্যাসিনোতে লাখ লাখ টাকা হেরে পাগল হয়ে থাকা কর্মীরা সহজাতভাবে কবিতা বলে ওঠে পরশের সামনে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে,

অল্প লইয়া থাকি, তাই মোর যাহা যায় তাহা যায়।
কণাটুকু যদি হারায় তা লয়ে প্রাণ করে "হায় হায়'॥
নদীতটসম কেবলই বৃথাই প্রবাহ আঁকড়ি রাখিবারে চাই,
একে একে বুকে আঘাত করিয়া ঢেউগুলি কোথা ধায় ॥
যাহা যায় আর যাহা-কিছু থাকে, সব যদি দিই সঁপিয়া তোমাকে
তবে নাহি ক্ষয়, সবই জেগে রয় তব মহা মহিমায়।
তোমাতে রয়েছে কত শশী ভানু, হারায় না কভু অণু পরমাণু,
আমারই ক্ষুদ্র হারাধনগুলি রবে না কি তব পায়॥

পরশ চেয়ারম্যান হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই কিছু ফেসবুকের কবি যুবলীগ কার্যালয়ে হাজির হয়ে যায়। কবিদের ভীড় দেখে বিরক্ত হয় পেশি ভ্রাতারা। আক্ষেপ করে বলে, এই কবিগুলিরে দুইচোখে দেখতারিনা; আর এরা ফেসবুক বাইয়া যুবলীগ দপ্তরে ভীড় জমাইছে। এইখানে কী; কবিরা যাইবো বাংলা একাডেমীর মাজারে; সেইখানে পদক ও চেক আছে; এইখানে কিছু নাই।

এক উচ্চাভিলাষী কবি বলে, এবার কবিতা প্রজাতন্ত্র গড়ে তুলতে চাই আমরা। শহীদ কাদরী থেকে উচ্চারণ করে-

ভয় নেই
আমি এমন ব্যবস্থা করবো যাতে সেনাবাহিনী
গোলাপের গুচ্ছ কাঁধে নিয়ে
মার্চপাস্ট করে চলে যাবে
এবং স্যালুট করবে
কেবল তোমাকে প্রিয়তমা।

যুবলীগ কর্মীদের কেউ কেউ না পারে সইতে; না পারে কিছু কইতে।

কবি পরশ শহীদ কাদরী থেকে বলেন,
ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো
বন-বাদাড় ডিঙ্গিয়ে
কাঁটা-তার, ব্যারিকেড পার হয়ে, অনেক রণাঙ্গনের স্মৃতি নিয়ে
আর্মার্ড-কারগুলো এসে দাঁড়াবে
ভায়োলিন বোঝাই করে
কেবল তোমার দোরগোড়ায় প্রিয়তমা।

এক যুবলীগ কর্মী বলে, "পরশ ভাই কবি শহীদ কাদরী বলেছেন,
ভয় নেই, আমি এমন ব্যবস্থা করবো
স্টেটব্যাংকে গিয়ে
গোলাপ কিম্বা চন্দ্রমল্লিকা ভাঙালে অন্তত চার লক্ষ টাকা পাওয়া যাবে।

তা এইরকম হইলে তো ভাই আমরা এইসব চান্দাবাজির চক্কর থিকা বাঁইচা যাই।

কবি পরশ খবরের কাগজ দেখিয়ে বলেন, এই দেখুন, এই দম্পতি ন'টা-পাঁচটা চাকরি ছেড়ে সিঙ্গাড়া বেচে কোটিপতি হয়েছে। তারা তো চাঁদাবাজি করেনি।

যুবলীগের আরেক কর্মী দীর্ঘশ্বাস ফেলে, কাম সারছে; এইবার মনে হইতেছে কাম-কাজ কইরা খাইতে হইবো।

আরেক বাতাসের হাল বোঝা কর্মী বলে, নবীর শিক্ষা করো না ভিক্ষা মেহনত কর সবে।

কবিতা শুনে কবি পরশ পুলকিত বোধ করেন।

কেউ একজন জিজ্ঞেস করে, ভাই আপনার অভিষেক দিবসে বিরিয়ানি ভক্ষণ হবে না; অর্ডার দিলে বিরিয়ানির দোকান এক্ষুণি লুট কইরা আনি।

কবি পরশ বলে, আমাদের আনন্দভূক হতে হবে। আনন্দ খেয়ে বাঁচতে শিখুন।

যুবলীগ কর্মী উত্তর দেয়, মইরা যাবো তো ভাই শুকাইয়া।

কবি পরশ বলেন, মনে করে দেখুন সেই সোনালী যুগের কথা; কর্মীরা দু'মুঠো চাল আর একমুঠো ডাল নিয়ে আসতো। তাদিয়ে রান্না হতো খিঁচুড়ি। কী আনন্দের ছিলো সেই সততার চড়ুইভাতি।

কবি পরশের অভিষেক থেকে বাড়ি ফেরার পর এক যুবলীগ কর্মীর স্ত্রী বলে, পরশ ভাইয়ের অভিষেকের বিরিয়ানি কই।

যুবলীগ কর্মী শুকনো মুখে বলে, যাও পেয়াজ আর লবণছাড়া খিঁচুড়ির বন্দোবস্ত করো। আমি ততক্ষণে একটা কবিতা পড়ি।

স্ত্রী ঘাবড়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করে, কী কবিতা!

যুবলীগ কর্মী হেলাল হাফিজ থেকে পড়ে,

কষ্ট নেবে কষ্ট
হরেক রকম কষ্ট আছে
কষ্ট নেবে কষ্ট!
লাল কষ্ট নীল কষ্ট কাঁচা হলুদ রঙের কষ্ট
পাথর-চাপা সবুজ ঘাসের সাদা কষ্ট,
আলোর মাঝে কালোর কষ্ট
‘মাল্টিকালার’ কষ্ট আছে
কষ্ট নেবে কষ্ট।

২৮৩১ পঠিত ... ১৭:৩৫, নভেম্বর ২৪, ২০১৯

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top