নূর হোসেন তো সত্যিই নেশাখোর, তার ছিল গণতন্ত্রের নেশা

১৬৫৬ পঠিত ... ১৭:৫১, নভেম্বর ১২, ২০১৯

 

হানিফ মাস্টার ভোর বেলা বাস থেকে নেমে অনেক কষ্টে ঠিকানা দেখে তার এক সাবেক ছাত্রের বাসা খুঁজে বের করে। গেটে তো তাকে ঢুকতেই দেবে না।

--আমি তোমার সাহেবের মাস্টার গো বা; অরে হাতেখড়ি আমি দিছিলাম।

বারান্দার কোণায় একটা চেয়ারে বসতে দেয়া হয় তাকে। সেখানে বসে খবরের কাগজ পড়েন তিনি।

কিছুক্ষণ পর সাবেক ছাত্র বেরিয়ে আসে। হানিফ মাস্টারকে দেখে বিস্মিত হয় সে।

--আসেন আসেন স্যার ভিতরে বসেন। এই স্যাররে ব্রেকফাস্ট দে।

--আমি তো বাবা ব্রেকফাস্ট খাইনা। সকালে একটু মুড়ি খেয়েছি।

হানিফ মাস্টার অবাক হয়ে দেখেন তার ছাত্রের শান-শওকত। ভাবা যায় সেই স্কুলের পড়া না পারা ছেলেটি এখন দেশের শ্রেষ্ঠ ধনীদের একজন।

সাবেক ছাত্র বলে, স্যার আপনার জন্য কিছু করতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করবো।

--না বাবা আমার জন্য কিছু করতে হবে না। আমার তো বেশি কিছু লাগে না। আমার একটাই চাওয়া ছিলো; দেশটা স্বাধীন হবে। তাই তো মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলাম। আর কোন চাওয়া নাই আমার।

--স্যার সারাজীবন এই দেশ কইরা কী পেলেন স্যার!

--ওটা অন্যরকম আনন্দের ব্যাপার; সে তুমি বুঝবে না বাবা।

--স্যার আপনার দোয়ায় আমি তো এখন দেশের মালিক। পরপর অনেকবারের এমপি।

হানিফ মাস্টার একটু বিচলিত হয়ে বলেন, জনগণই দেশের মালিক; তুমি বড় জোর তাদের সেবক।

--ওসব কেতাবের কথা স্যার; আমরাই দেশ চালাই।

--তা বাবা এবার ইলেকশানে কত ভোট পেয়েছিলে! আমি তো তোমাকে ভোট দিতে গিয়ে শুনলাম; আমার ভোট নাকি দেয়া হয়ে গেছে।

সাবেক ছাত্র প্রসঙ্গ পালটায়, স্যার আমি তো বের হবো। আপনি বিশ্রাম করেন।

হানিফ মাস্টার বলেন, শুনলাম বাবা তুমি পরিবহন মাফিয়া। তোমাদের কারণে জনগণের অনেক ভোগান্তি। পরকালের কথা একটু মনে রেখো বাবা। আমি এখন উঠি। আরেক ছাত্রের বাসায় যেতে হবে। দেখি গিয়ে দেশটাকে ও কীভাবে ঝাঁঝরা করেছে! এক একটা জিনিসকে হাতে খড়ি দিয়েছিলাম বাবা; সব কটা গণশত্রু হয়েছে।

সাবেক ছাত্র ভীষণ অপ্রস্তুত হয়। গেট পর্যন্ত এগিয়ে দেয়। গাড়ি দিয়ে পৌঁছে দেবার প্রস্তাব দিলে হানিফ মাস্টার প্রত্যাখ্যান করেন। হন হন করে হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে যান।

রাস্তা দিয়ে একটা মিছিল যাচ্ছিলো। শহীদ নূর হোসেন দিবসের মিছিল। সবাই বলছে, স্বৈরাচারের দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে।
ভীষণ বিক্ষুব্ধ হয় সাবেক ছাত্র। একটা মিটিং আছে; দ্রুত রওনা হয়ে যায়।

মিটিং-এ পৌঁছাতেই সবাই অনুযোগ করে, নূর হোসেন দিবসে সবাই আমাদের অনেক অপমান করছে রাঙ্গা ভাই।

রাঙ্গা ভাই হুংকার দিয়ে বলে, কে এই নূর হোসেন! সে তো আওয়ামী লীগ-বিএনপি-বাম দল কিছুই না। তারে নিয়ে ওরা লাফাইতেছে কেন! নূর হোসেন নেশা করতো; নেশার ঘোরে কে তারে মারছে কে জানে!

এ কথা মিডিয়ায় প্রকাশ পেলে সাধারণ মানুষ প্রতিবাদে ফেটে পড়ে।
--হ্যা নূর হোসেনের গণতন্ত্রের নেশা ছিলো; আমাদের সবার এই নেশা আছে। আমরা রাঙ্গাদের স্বৈরাচারের নেশাটা ছুটিয়ে দেবো!

এক সাংবাদিক রাঙ্গাকে জিজ্ঞেস করে, আপনারা বিরোধী দল হিসেবে জনগণের দাবি নিয়ে কোন কথা না বলে; নব্বুই এর গণ আন্দোলনের শহীদ নূর হোসেনের আত্মত্যাগকে খাটো করছেন কেন!

--সকাল সকাল দুই গালে তালে তালে জুতা খাইয়া মাথাটা গরম হই গেছিলো ভাই। এরশাদরে যে আপনারা স্বৈরাচার বলেন; স্বৈরাচার কে নয় ভাই! আর আমরা বিরোধী দল হিসেবে সংসদের বাসরে পেয়াজ-টেয়াজ নিয়া কথা বলি; সরকারের সঙ্গে স্বামী-স্ত্রী সম্পর্ক। তাই রাজপথে দাম্পত্য-কলহ করিনা। আন্ডারস্টুড।

সরকারি দলের সংস্কৃতি মামাদেরও এ প্রসঙ্গে দু'কথা বলতে হবে। তাই তারা সন্তর্পণে সরকার ও স্বৈরাচারি এরশাদের বাসরের কথাটা উহ্য রেখে শুধু রাঙ্গাকে গালাগাল করে। আর্তনাদ করে, ক্ষমা চাও ক্ষমা চাও রাঙ্গা মিয়া!

রাঙ্গা বলে, যদি ভুল হয়ে থাকে; পরম করুণাময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে ব্যাপারটা আপার লেভেলে সেটল করে নেবো। আপনারা শান্ত হউন।

টিভিতে একথা শুনে রাঙ্গার গ্রামের এক লোক বলে, খুব আপার লেভেল শিখিছাও; লুঙ্গি খুইলা প্রিন্স কোট পইরা তুমারে বড্ড এরশাদ এরশাদ লাগতিছে গো। উপস্থিত সবাই হো হো করে হেসে ওঠে।

হানিফ মাস্টারের ফোন আসে, বাবা রাঙ্গা একজন দেশপ্রেমিক নূর হোসেনকে নিয়ে তুমি 'নেশা'-র কথা বলেছো; ঐ দেশপ্রেমের নেশাটা আমারো ছিলো; তাই তো মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলাম। ঐ দেশপ্রেম-গণতন্ত্র-মানুষের অধিকারের নেশাটা মানুষকে মানুষ করে। আর ঐ নেশা না থাকলে মানুষ স্বৈরাচারের দালাল হয়; মানুষ খুন করে; অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে।

১৬৫৬ পঠিত ... ১৭:৫১, নভেম্বর ১২, ২০১৯

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top