ভিসিত্র এই পৃথিবী, ভিসিত্র এই ভুবন। আর তার চেয়েও ভিসিত্র আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা! যদিও যুগ যুগ ধরেই আমরা জানি, এই ভিসিত্রিতাই ভিসিদের ভূষণ! তবে সম্প্রতি পৃথিবীর ভিসিত্রতম ভিসি হিসেবে স্বীকৃত ঢাবি উপাচার্য আখতারুজ্জামান স্যারকে ছাড়িয়ে গেছেন আরেক শীর্ষ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় জাবির ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পিটিয়ে ছাত্রলীগ তাকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে বের করে আনার ঘটনাকে তিনি উদ্ধৃত করেছেন 'গণঅভ্যুত্থান' হিসেবে।
গত ৪ নভেম্বর থেকে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের পদত্যাগের দাবিতে তার বাসভবন ঘেরাও করে রাখে। দুপুরে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগ উঠে। ছাত্রলীগ সেসময় অবরুদ্ধ উপাচার্যকে তার বাসভবন থেকে বের করে আনে।
বের হয়ে এসে উপাচার্য এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। সেখানে তিনি বলেন, 'আমার জন্যে এটা অত্যন্ত আনন্দের একটি দিন। এই কারণে যে... মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে যারপরনাই আমাকে অপদস্থ করা হয়েছে। অসম্মান করা হয়েছে। কিন্তু, কোনো প্রমাণ ছাড়াই। যদি প্রমাণ পায় তাহলে যা বিচার হবে আমি মেনে নিবো।'
একইসঙ্গে তিনি এও বলেন, 'এটি গণঅভ্যুত্থান, আমি বলেছি। আমার কোনো নির্দেশে তারা করেনি। হামলা সেখানে হয়েছে, হামলা এখানেও হতে পারে। যদি হামলা হয়ে থাকে, সেটি প্রক্টর দেখবে।'
তবে হামলা সম্পর্কে ভিসির মনে যে 'যদি' রয়েছে, প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যে সেটা তেমন একটা থাকে না। ডেইলি স্টারের জাবি সংবাদদাতা জানান, ৫ নভেম্বর দুপুর সোয়া ১২টার দিকে জাবি শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি জুয়েল রানার নেতৃত্বে অন্তত শতাধিক ছাত্রলীগ সদস্য মিছিল সহযোগে এসে এই হামলা চালায়। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
ভিসিত্র এই ঘটনা, ঘটনার প্রতিক্রিয়া ও বক্তব্যে যেন একেবারেই ব্যাকফুটে চলে গেলেন ঢাবি ভিসি আখতারুজ্জামান স্যার। ছাত্রলীগের এমনই এক 'ছোটখাটো অভ্যুত্থানে' ইতোপূর্বে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে বের হয়ে বেশ আনন্দিত বোধ করলেও সেটাকে 'গণঅভ্যুত্থান' হিসেবে চিহ্নিত করার ভিসিত্রতা দেখাতে পারেননি তিনি।
চলুন ঢাবির ভিসিত্র এই ঘটনাটি সম্পর্কে একটু স্মৃতিচারণ করে আসা যাক।
দৈনিক সমকালে প্রকাশিত খবর অনুসারে, ২০১৮ সালের ২৩ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবরুদ্ধ উপাচার্যকে উদ্ধার করতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হকিস্টিক, লাঠি, রড ইত্যাদি নিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। এতে সাংবাদিকসহ অন্তত ৪০ জন আহত হন। তবে ছাত্রলীগ নেতারা বরাবরেই মতোই সেসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তারা উপাচার্যের ওপর হামলাকারীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের দাবি জানান।
অথচ কি আশ্চর্য! ঢাবি ভিসি তখন ছাত্রলীগ/আন্দোলনকারীদের উপর হামলাকারীদের কোন বিশেষণেই বিশেষিত করেননি! তাঁর কমরেডদের উদ্দেশে বীর সেনানী, বিপ্লবী... কিছু একটা তো বলতে পারতেন! অথবা দিতে পারতেন লাল-নীল-বেগুনি কোনো না কোনো সালাম! আন্দোলনকারীদের তীব্র সমালোচনা ও উদ্ধারকারীদের কৃতিত্ব দিলেও, নিজের ভিসি নামের প্রতি যেন তিনি যথেষ্ট সুবিচার করতে পারেননি!
ভিসিত্রতার এই নতুন দ্বৈরথে ঢাবি ভিসি কি ছাড়িয়ে যেতে পারবেন, তা আমাদের জানা নেই। ভৈসিত্র্যের এই প্রতিযোগিতায় আমরা শুধু তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখতে চাই। জানেনই তো, ভিসি মাত্রই ভিসিত্র হয়।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন