বুয়েটে শিক্ষক রাজনীতি বন্ধের ঘোষণা, বেনীআসহকলাদের একটি কাল্পনিক কথোপকথন!

৩১০৩ পঠিত ... ০০:০১, অক্টোবর ১০, ২০১৯

বুয়েটে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সৈনিকদের নির্মম নির্যাতনে আবরার ফাহাদের মৃত্যুর পর ছাত্র-ছাত্রীদের লাগাতার প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে; বুয়েটের শিক্ষক পরিষদ 'শিক্ষকদের রাজনীতি' নিষিদ্ধ করে। 

এ সংবাদে মাথায় বাজ ভেঙ্গে পড়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগুণি-নীল-আকাশি-সবুজ-হলুদ-কমলা-লাল তথা বেনীআসহকলা দলগুলোর শিক্ষকদের মাথায়। 

অধ্যাপক বেগুণি আক্ষেপ করে বলেন, শিক্ষকতা পেশার চার্মটা চইলা গেলো। জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থীর পক্ষে ট্রাক মিছিলের রঙ্গিন দিনগুলো আর রইলো না! 

অধ্যাপক বেগুণির স্ত্রী ইউটিউবে 'দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইলো না' গানটি বাজিয়ে দিয়ে টিস্যু পেপার এগিয়ে দিতে দিতে বলেন, মেয়ে আর জামাইয়ের বিদেশে স্কলারশিপটা যখন প্রায় হবার মুখে; তখন এ কী হলো গো! বয়স থাকলে তুমি বিসিএস দিয়ে পুলিশ বা কাস্টমস কর্মকর্তা হতে পারতে। টাকা থাকলে নিজ খরচে মেয়ে-জামাইকে বিদেশে পড়তে পাঠানো যায়। এখন টাকাও নাই; রাজনীতিও নাই; তোমার 'লঞ্চও গেলো; পঞ্চও গেলো' গো। 

অধ্যাপক বেগুণি ধমক দেন, মরা কান্না থামাও; ভাবতে দাও। রাজনীতি নিষিদ্ধ মানে; এতোই সোজা নাকি! জানো বের্টোল্ড ব্রেখট কী বলেছেন! 

অধ্যাপক বেগুণির স্ত্রী তেলে বেগুণে জ্বলে উঠে বলেন, থাক আর বিরাট বিরাট নাম বলতে হবে না। নিজের ছেলে-মেয়েকে পঁই পঁই করে বলেছিলে রাজনীতি করার দরকার নাই। পরের ছেলেদের বের্ল্টল্ট ব্রেখট-ফেখট থেকে উদ্ধৃত করে কেমন রাজনীতির দীক্ষা দিয়েছো; সে তো দেখতেই পাচ্ছি। রাজনীতির নামে চাঁদা তুলছে আর টর্চার সেল চালাচ্ছে। 

এমন সময় অধ্যাপক নীল ফোন করে, হ্যালো বেগুণি ভাই; খবরটা শুনেছেন; দেখুন তো দেখি; ভালোই ছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প বাস্তবায়নের ছা-ছপ-ছমুছার দিনগুলিতে; এখন দেখছি রেগুলার ক্লাস নিতে হবে-গবেষণা করতে হবে-গবেষণা জার্নালে লিখতে হবে। আচ্ছা বলেন ভাই, জার্নালের লেখা পড়ে কী কাউকে উপাচার্য-ডিন-প্রোকটর-প্রোভোস্ট বানানো হয়! এরজন্য রাজনীতি করতে হয়; আনুগত্য প্রকাশ করতে হয় যৌথ বিবৃতিতে; পারলে পত্রিকায় তেলকলাম লিখে তুলকালাম করতে হয়। টিভি-টকশোতে গিয়া জাস্টিফিকেশান দিতে হয় সরকারের প্রতিটি ভুল-পদক্ষেপের। লুক্রেটিভ পোস্টের জন্য পলিটিক্যাল লুব্রিকেশন ইউজ করতে হয়।  

বারান্দায় উদাস মুখে বসে  অধ্যাপক আকাশি বিড় বিড় করে স্ত্রীকে বলেন, ভাবতেছিলাম উন্নয়ন উদযাপনে একটা মেজবান দিমু; যা শুনতাছি আর মেজবান দিয়া কী লাভ আছে! 

স্ত্রী বলে, ঘোষণা শুইনা এতো ঘাবড়াইও না। তলে তলে ঠিকই মেজবান করা যাবে। 

এমন সময় সহযোগী অধ্যাপক আকাশি প্রবেশ করে, ইউরেকা স্যার, ইউরেকা; বেশ কিছু শিক্ষকের ফেসবুকের স্ট্যাটাস দেইখা একটা কালো তালিকা করছি। এইটা পার্টি অফিসে পাঠিয়ে দেই স্যার আপনি অনুমতি দিলে। 

অধ্যাপক আকাশি বলে, খবর শোন নাই; শিক্ষক রাজনীতি বন্ধের হাওয়া উঠছে। কয়টা দিন একটু শিক্ষকের মতো আচার-আচরণ করতে হবে। পরে সুযোগ বুঝে আবার পার্টি কর্মী হওয়া যাবে। 

অধ্যাপক সবুজ দীর্ঘশ্বাসের ভঙ্গিতে বসে আছেন শিক্ষকদের ক্লাবে। প্রভাষক সবুজ এসে বলে, স্যার শিক্ষক রাজনীতি না থাকলে, বিভিন্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান হওয়ার সুযোগটা অন্য পেশার লোকেরা নিয়ে নেবে। আমরা একে একে পদমর্যাদা থেকে উচ্চ পদায়নের সুযোগ সব হারাচ্ছি। কিছু একটা করেন স্যার! 

অধ্যাপক হলুদ এসে যোগ দেয় শোক-আলোচনায়। আর্তনাদ করে ওঠে, আমরা কী কিন্ডার গার্টেনের শিক্ষক! যে বলে দেবেন খালি ক্লাস নেবেন আর পরীক্ষার খাতা দেখবেন ব্যাস! শিক্ষক-রাজনীতি বন্ধ করা মানে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক স্পিরিট নষ্ট করা। এসব সুশীল ষড়যন্ত্র মানিনা। আরে বাবা, রাজনৈতিক দল না করলে 'অবস্থান স্পষ্ট' করবো কী করে! এ সমাজে অবস্থান স্পষ্ট না করে কী পদ-পদবী পাওয়া যায় কোন খানে! 

লন টেনিসের ব্যাট হাতে সহযোগী অধ্যাপক কমলা বলে, ঢাকায় বসে থেকে ভুরুঙ্গামারী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বেতন নেবার সুযোগ বোধ হয় আর রইলো না। জানিনা ভুরুঙ্গামারীতে গিয়ে থাকতে হলে; আমার ঢাকার এনজিওটা কে চালাবে! দুধভাতে এ কী উৎপাত শুরু হলো!

অধ্যাপক লাল এসে বিরক্ত ভঙ্গিতে বলেন, তা-ও ভালো শিক্ষকদের কনসালটেন্সির অধিকারটা কেড়ে নেয় নাই; আমাদের নরম পেয়ে যা খুশী তা করছে!  আরে বাবা, শিক্ষক রাজনীতি না থাকলে সরকারের দৃষ্টি-আকর্ষণের পন্থাটা কী হবে! আমাকে কী কেউ দয়া করে বোঝাবেন! আমরা তো আর মডেল না যে ফ্যাশান প্যারেড করবো! ক্যাটওয়াক দেখে পার্টি ইন পাওয়ার মুগ্ধ হবে।

৩১০৩ পঠিত ... ০০:০১, অক্টোবর ১০, ২০১৯

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top