টর্চার সেল নাম্বার ২০১১

৭৩০০ পঠিত ... ১৯:১৭, অক্টোবর ০৭, ২০১৯

২০১১ নম্বর টর্চার সেলে বসে রাজার আকার ধারণ করা এক ছাত্রসৈনিক বলে, ওরা কারা যারা সারাক্ষণ পড়ালেখা করে! 

আরেকজন ছাত্র সৈনিক উত্তর দেয়, মেধাবী মানেই দেশের শত্রু; পিএইডডি মানে পার্মানেন্ট হেড ডিস্টার্বড। 

এক বিজ্ঞ ছাত্র সৈনিক বিশেষজ্ঞ অভিমত দেয়, মেধাবী মানেই রাজাকারের বাচ্চা। সবচেয়ে ভালো হইতো ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেনস মানে এনআরসি কইরা মেধাবীগো নাগরিক তালিকা থিকা বাদ দিয়া; ডিটেনশন ক্যাম্পে রাইখা দিতে পারলে। 

এক ছাত্রসৈনিক বলে, আমরা আমগো হলেই একটা এনআরসি করতে পারি। ফেসবুক দেইখা শত্রু চিহ্নিত করো। মেধাবী ছাত্ররা আমগো শ্রেণী শত্রু; তাগো খতম করো। 

বিজ্ঞ ছাত্র সৈনিক পরামর্শ রাখে, ফেসবুকে কোন ইস্যুতে কে কী অভিমত দিচ্ছে দেখো। আমগোর অভিমতের সঙ্গে ইঞ্চি ইঞ্চি মিলাইয়া দেখো। প্রতি ইঞ্চি অভিমত মিললে, সে হলে থাকবো। আর ভিন্নমত মানেই সে হলের থাকার যোগ্যতা হারাইলো। তাকে ডিটেনশান ক্যাম্পে নিয়ে এসো। 

এরই মাঝে ফেসবুক চেটে চেটে দেখতে শুরু করে এক ঘাগু ছাত্র সৈনিক। 

আবরার ফাহাদ নামে এক শত্রু চিহ্নিত করে সে। আবরার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছে, '১.৪৭ এ দেশভাগের পর দেশের পশ্চিমাংশে কোন সমুদ্রবন্দর ছিল না। তৎকালীন সরকার ৬ মাসের জন্য কলকাতা বন্দর ব্যবহারের জন্য ভারতের কাছে অনুরোধ করল। কিন্তু দাদারা নিজেদের রাস্তা নিজেদের মাপার পরামর্শ দিছিলো। বাধ্য হয়ে দুর্ভিক্ষ দমনে উদ্বোধনের আগেই মংলা বন্দর খুলে দেওয়া হয়েছিল। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজ ইন্ডিয়াকে সে মংলা বন্দর ব্যবহারের জন্য হাত পাততে হচ্ছে। 

২. কাবেরি নদীর পানি ছাড়াছাড়ি নিয়ে কানাড়ি আর তামিলদের কামড়াকামড়ি কয়েক বছর আগে শিরোনাম হয়েছিল। যে দেশের এক রাজ্যই অন্যকে পানি দিতে চাই না সেখানে আমরা বিনিময় ছাড়া দিনে দেড়লাখ কিউবিক মিটার পানি দিব। 

৩. কয়েকবছর আগে নিজেদের সম্পদ রক্ষার দোহাই দিয়ে উত্তর ভারত কয়লা-পাথর রপ্তানি বন্ধ করেছে অথচ আমরা তাদের গ্যাস দিব। যেখানে গ্যাসের অভাবে নিজেদের কারখানা বন্ধ করা লাগে সেখানে নিজের সম্পদ দিয়ে বন্ধুর বাতি জ্বালাব।

হয়তো এসুখের খোঁজেই কবি লিখেছেন-- 

"পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি
এ জীবন মন সকলি দাও,
তার মত সুখ কোথাও কি আছে
আপনার কথা ভুলিয়া যাও।" 

এক দেশপ্রেমিক ছাত্র সৈনিক আর্তনাদ করে, এই ব্যাটা দেহি দেশদ্রোহী। এই কে আছিস ওকে বন্দী করে নিয়ে এসো। 

১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে ধরে নিয়ে আসা হয় দেশদ্রোহী আবরারকে। 

বিজ্ঞ ছাত্র সৈনিক বলে, অই শিবিরের বাচ্চা ল্যাঞ্জা ইজ ভেরি ডিফিকাল্ট টু হাইড; ফেসবুকে তোর স্ট্যাটাস আর বিতর্কিত পেজে লাইকের কারণে হল হইতে তোর নাগরিকত্ব বাতিল করা হইলো। 

আবরার প্রতিবাদ জানায়, আমার পরিবারের সদস্যরা আওয়ামী লীগের সমর্থক। আমি শিবির হতে যাবো কেন! ফেসবুকে আমি আমার অভিমত প্রকাশ করি। এতো আমার সাংবিধানিক অধিকার। 

আরেক ছাত্র সৈনিক টিটকারি দেয়, ধরা পড়লে পরিবার তখন আওয়ামী লীগ হইয়া যায়; ও আমগো জানা আছে। মনে রাখবা--

নহে আশরাফ যার আছে শুধু আওয়ামী বংশ পরিচয়
সেই আশরাফ জীবন যাহার পূর্ণ সহমতময়। 

এক ছাত্র সৈনিক ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে আবরারের শরীরে আঘাত করতে করতে বলে, খুব মেধা মারাইতেছো; দেশ বিক্রির মাতম তুলতেছো; তুমি কেন ঘষো আমি তাহা জানি; ঐ শিবিরের পো এক দেশ কয়বার বিক্রি করে রে! 

আবরার বলে, আমার দেশের সঙ্গে আরেকটি দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে নাগরিক হিসেবে আমি প্রশ্ন তুলতেই পারি; সরকারের দায়িত্ব এ বিষয়ে তার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিমূলক উত্তর দেয়া। আপনারা তো চাঁদা তোলা শেষ হলেই লন্ডনের সেকেন্ড হোমে চলে যাবেন; আমাকে তো আমার দেশেই থাকতে হবে। 

বিজ্ঞ ছাত্রসৈনিক ধমক দেয়, ঐ সুশীলের ভাষায় কথা বলবি না। পার্মানেন্ট হেড ডিস্টার্বড মেধাবী তুই। তোর শাস্তি মৃত্যুদন্ড। 

আবরার ফাহাদের ওপর উন্মত্ত হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে টর্চার সেলে রাজার আকার ধারণ করা ছাত্র সৈনিকেরা। 

আবরার একবার সাহস করে বলে, আমি মারা গেলে আপনাদের তো ফাঁসি হয়ে যাবে; আমাকে ছেড়ে দেন আপনারা; আমি মায়ের কাছে যাবো; আর কোনদিন বুয়েটে পড়তে আসবো না; আমার জীবনটা ভিক্ষা দেন! 

বিজ্ঞ ছাত্র সৈনিক বলে, বিশ্বজিত হত্যার ভিডিও ছিলো; কী হইছেরে তাতে; তোর হত্যার তো কোন ভিডিও নাইরে মেধাবী আবরার। 

আবরারের মৃত্যুযাত্রায় তাকে শেষ শিক্ষা দিতে ছাত্রসৈনিক মোবাইল ফোনে গান বাজিয়ে শোনায়,

ও মানুষ দুডো কান আর দুডো চোখ
দেকপা আর শুনবা; কিন্তু একটা মুখতো
একটু কথা কম কবা।
তোমার মেলা ঝামেলা কমে যাবে
চুপ করে থাকবা।

৭৩০০ পঠিত ... ১৯:১৭, অক্টোবর ০৭, ২০১৯

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top