১০০ দিনে ৩৯৬ জন নারী ও শিশু ধর্ষিত হওয়ার ঘটনায় সাধারণ মানুষ মুষড়ে পড়ে। নারী ও শিশুর জন্য অনিরাপদ জনপদে বিষাদের কালো ছায়া নেমে আসে।
মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার নির্দেশ দেয় সিরাজ নামে এক মাদ্রাসা অধ্যক্ষ। এই নির্দেশ পালনকারীদের মাঝে নুসরাতের বয়েসি তিনটি মেয়েও রয়েছে। তারা নুসরাতকে পুড়িয়ে তারপর গিয়ে ঠান্ডা মাথায় পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। মাদ্রাসা অধ্যক্ষের এই অপরাধ ধামাচাপা দিতে সক্রিয় হয় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। কারণ সিরাজ নিয়মিত টাকা-পয়সার নজরানা পৌঁছে দিতো ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের কাছে। নুসরাত অধ্যক্ষ সিরাজের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করার পর সিরাজ তাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেবার সিদ্ধান্ত নেয়।
হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে নুসরাত পৃথিবী থেকে বিদায় নিলে; সমাজ শোকে মুহ্যমান হয়। এই সময়ে কয়েকটি মাদ্রাসায় কিশোরের আত্মহত্যাসহ আরো কয়েকটি যৌন নিগ্রহের খবর এলে; অনেকে সমালোচনা করে, মাদ্রাসাগুলো অপকর্মের ঘাটি হয়ে পড়েছে।
মাদ্রাসাপক্ষ এতে বিক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, পরিমল কী মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলো; সে তো ঢাকার আধুনিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বসে যৌন নিগ্রহ চালিয়েছে। আপনারা ইসলামের শত্রু বলেই মাদ্রাসা বন্ধের ষড়যন্ত্রে নেমেছেন।
কেউ কেউ বলেন, মাদ্রাসা 'আল্লাহ'র নামে' পরিচালিত হয় বলে; সেখানে শিশু-কিশোর-কিশোরীদের নিরাপত্তা বেশি প্রত্যাশিত। পরিমলের অপরাধ দিয়ে তো সিরাজের অপরাধ জাস্টিফাই করার কিছু নেই। অপরাধ-অপরাধই।
মাদ্রাসাপক্ষ শাসিয়ে যায়, বাংলাদেশ মুসলিম কান্ট্রি, হিসাব করে কথা বলবেন। সিরাজ একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। মাদ্রাসা নিয়া আপনাদের এতো কথা বলার দরকার নাই; মনে রাখবেন, আপনাদের জানাজার নামাজ পড়াইতে মাদ্রাসার লোক লাগবে।
এক ভদ্রলোক বলেন, যখন যেসব প্রতিষ্ঠানে ধর্ষণের ঘটনা বেশি ঘটে তখন তাদের নিয়ে সমালোচনা হয়। আপনারা এতো উত্তেজিত হচ্ছেন কেন! এসব অপরাধ জাস্টিফাই না করে বন্ধের চেষ্টা করুন। চেঁচামেচি করে অপরাধ হজম করতে পারবেন না ভাই। আর সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, বিচারহীনতার কারণেই ধর্ষণ প্রবণতা বাড়ছে। যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে; সে দলের লোকেদের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে ধর্ষকরা পার পেয়ে যায়।
এক সহমত ভাই এসে বলেন, আপনি যদি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের লোকেদের কথা বলে থাকেন, তবে দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি; কেউ ধর্ষণ বা ধর্ষণে সহযোগিতার দায়ে অভিযুক্ত হলেই আমরা তাকে দল থেকে বহিষ্কার করি। এটা বিএনপি-জামায়াত করে না। কাজেই সবাইকে এক পাল্লায় মাপবেন না।
ভদ্রলোক উত্তর দেন, গত ১০০ দিনে ৩৯৬ জন নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে; আর আপনি আছেন, পাল্লায় মাপামাপি নিয়ে। ক্ষমতায় থাকলেই দলের একটা অংশ ধর্ষণের সাহস পেয়ে যায়। চেষ্টা করুন ক্ষমতার এই অপরাধের দুঃসাহসের কালচারটা বন্ধ করতে।
এর মাঝে নুসরাতের মৃত্যুর আগের একটি ভিডিও পাওয়া যায়; যেখানে পুলিশ তাকে দিয়ে 'সিরাজের বিরুদ্ধে আনা যৌন নিগ্রহের অভিযোগ'-কে ভ্রান্ত প্রমাণের চেষ্টা করছে। পুলিশ এই জিজ্ঞাসাবাদের কথা-বার্তায় যৌন নিগ্রহ চালাচ্ছে। নুসরাতের অভিযোগকে কাল্পনিক প্রমাণের দায়িত্ব নিয়েছিলো স্থানীয় কিছু সাংবাদিকও।
একজন মন্তব্য করেন, তার মানে নুসরাত হত্যার পেছনে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ-ছাত্র-ছাত্রী, আওয়ামী লীগ নেতা, পুলিশ, সাংবাদিকের একটি সংঘবদ্ধ চক্র কাজ করেছে। বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থাকতে আওয়ামী লীগের জায়গায় বিএনপি-জামায়াতের নেতা যুক্ত থাকতো এরকম অপরাধে। পুলিশ, সাংবাদিক এগুলো কমন ফ্যাক্টর। অপরাধ ধামাচাপা দেয়ার প্যাটার্ন একই।
পুলিশের এক বড় কর্তা অভিযুক্ত পুলিশকে বাঁচাতে চিঠি লেখেন।
অভিযুক্ত সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে সাংবাদিক সমাজ মৌনব্রত পালন করে।
এর মাঝে এক পাকিস্তানি তরুণী বাংলাদেশ ঘুরতে এসে ধর্ষিত হলে; নুসরাত ধর্ষণে অত্যন্ত মানবতাবাদী প্রতিবাদ জানানো কেউ কেউ বলে, এই ধর্ষণের ঘটনায় অবশ্য মন খারাপ লাগছে না। ১৯৭১ সালে পাকি সেনারা বাংলার মা-বোনদের ধর্ষণ করেছিলো। এ হচ্ছে তার প্রতিশোধ; এগিয়ে চলো।
সেতু মণ্ডল নামে আরেকটি কিশোরী ধর্ষিত হবার পর আত্মহনন করলে; সে ঘটনা তেমন মিডিয়া কাভারেজ পায়না।
একজন দুঃখ করেন, সংখ্যালঘু এই মেয়েটির ঘটনাটি প্রচার পেলো না।
একজন সাধু লোক এসে গা থেকে অপরাধ ঝেড়ে ফেলার ভঙ্গিতে বলেন, আমগো দ্যাশের লোক ধর্ষণ করতে জানতো না। পাকি আর রেন্ডিয়ার প্রভাবে এই বাজে জিনিসটা আমগো সমাজে ঢুকছে।
আরেকজন এসে বলেন, হ ভাই; পাকি আর রেন্ডিয়ার লোক ধর্ষক; আর আমগো সমাজের সব পুরুষ নিষ্পাপ ফিডার বেবি; এই জন্য ক্ষমতায় যেই থাকুক ধর্ষণ আর থামে না। সারাক্ষণ এইরকম অপরাধ অস্বীকার আর জাস্টিফিকেশান দিয়াই আপনারা কামডা সারলেন।
একজন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, যাই বলুন, ধর্ষণের ঘটনার মিডিয়া কাভারেজ পাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার। তাতে লাভ কিছুটা হয়। ধর্ষণের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ছাগল, টাকা বা ক্ষুদ্র চাকরি পায় পরিবার। ন্যায়বিচারের স্বাদ দিতে মিডিয়া কাভারেজ পাওয়া ধর্ষণের বিচার হয় কেবল। মিডিয়া কাভারেজ না পাওয়া ধর্ষণের বিচার হয় না।
আরেকজন মন্তব্য করেন, তনু ধর্ষণ ও হত্যা মিডিয়া কাভারেজ পেলেও তার পরিবার বিচার পায়নি।
একজন চিন্তাকামান এসে বলেন, প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে; আপনারা অযথা প্যানিক ছড়াবেন না। গিয়ে দেখুন নরওয়েতে কী বিপুল সংখ্যক ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। উন্নত দেশের পরিসংখ্যান দেখুন; তারপর কথা বলুন। ইতিবাচক হন। সারাক্ষণ নেগেটিভ কথা কেন বলেন। আমি তো স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, ঐ তো ওখানে আলো।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন