হ্যাঁ, আমিও একজন ঢাবি ছাত্র ছিলাম। কিন্তু তাতে কী! শুধু হলে থাকিনি বলে পুরোটা শিক্ষাজীবনে বিশাল সব সুযোগ সুবিধা হারিয়েছি। হারিয়েছি জীবনের রাতগুলো উপভোগ করার সুযোগ। সেই আফসোসের কথা বলতে গেলেও যেন গলা শুকিয়ে আসে!
এমনিতেই আড্ডাবাজি আর রাতে দেরি করে ফেরার ব্যারাম, এদিকে বাসাও মিরপুর! ফিরতে ফিরতে কখনো রাত হয়, কখনো ভোর! কত যে রাত ৪-৫টায় বাসায় ফিরে বাপ-মায়ের বকা খাইলাম। অগ্নিদৃষ্টির শিকার হইলাম। রাতে দেরি করে ফেরার কলঙ্কটা যেন কখনোই আমার গেলো না! অভিভাবকদের কী করে বোঝাই, রাত কি আর ঘুমোনোর টাইম! রাতে বাইরে বাইরে ঘুরতে হয়, শহর দেখতে হয়, এই তো জীবন!
অথচ হলে থাকলে, আমার জীবনটা হত অন্যরকম! সেখানে অভিভাবক হিসেবে আছেন বড় ভাইরা! হলের বড় ভাইরা রাতে আদর করে ডাক দিয়ে তুলে বলতো, 'এত রাতে বাসায় কী? বাইরে যাও ভাই, ঘুর, ফিরো, দুনিয়া দেখো। যা ভায়া যা, জি লে আপনি জিন্দেগি...'
এই বৃহস্পতিবার রাতের কথাই ধরুন! রাত ৪টা ১০ মিনিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্য সেন হলের গেস্টরুমে সোফাগুলোতে আধা শোয়া অবস্থায় ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের ১০ শিক্ষার্থী৷ এই দুরবস্থার কারণ, ছাত্রলীগের ‘বড় ভাইরা’ হল থেকে তাঁদের এক রাতের জন্য ‘বাইরে ঘুরতে’ বলেছেন। বৃহস্পতিবার রাতে হলের শিক্ষার্থীদের আঁতুড়ঘর খ্যাত গেস্টরুমে ডাক পড়েছিল সবার। এরপর ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে রাত দুইটার দিকে তাঁরা আশ্রয় নেন সূর্যসেন হলে।
হলের বড় ভাইরা এত ভালো কেন? এত ভালোও হয় কোনো অভিভাবক, কোনো শুভাকাঙ্ক্ষী! এমন বড় ভাই পাইনি বলেই হয়তো সারা রাত বাইরে চিল করার সুযোগ জীবনে হয়নি। ঢাবির হলে থাকলে জীবনটা কতোই না এডভেঞ্চারাস হতো, প্রতি রাতেই হয়তো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে শহরকে দেখা হতো অন্যভাবে... নেই তাড়াতাড়ি ফেরার কোনো তাড়া! আহা!
সত্যি, চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারলাম না।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন