গা ঘেঁষে দাঁড়াতে যদি এতো লাগে ভালো, ঢালো আগে নিজের চরকায় তেল ঢালো

৮৪৯৬ পঠিত ... ১৯:২২, এপ্রিল ০৬, ২০১৯

ছবি: বিজেন্স

ইউনিভার্সিটির মিড-টার্ম পরীক্ষার ফলাফল দিয়েছে। যথারীতি মেয়েদের ফলাফল ছেলেদের চেয়ে ভালো হয়েছে। একজন শিক্ষক ছেলেদের ডেকে জিজ্ঞেস করেন, কী ব্যাপার তোমাদের রেজাল্ট এতো খারাপ কেন! 

ছেলেরা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। শিক্ষক বলেন, পড়াশোনায় মনোযোগ দাও। দেখো তো মেয়েরা কত মনোযোগী; তোমাদের মনোযোগ কোথায় থাকে! 

একটা ছেলে মিন মিন করে বলে, মেয়েদের চিন্তাতেই পড়ালেখায় মন দিতে পারিনা স্যার। 

-কেন এইটুকু বয়সেই প্রেম-ট্রেমে পড়ে গেলে নাকি! ওরে বাবা প্রেমের জন্য সারাজীবন পড়ে আছে; এখন একটু মন দিয়ে পড়ো।

-মেয়েদের প্রেমে পড়ি নাই স্যার। কিন্তু মেয়েরা কী পোশাক পরবে না পরবে তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় ঘুমাইতে পারি না।

-সে কী; তুমি চিন্তা করবে নিজের পোশাক নিয়ে; মেয়েদের পোশাক নিয়ে তোমার চিন্তা কেন! নাকি ফ্যাশান ডিজাইনার হতে চাও!

-না স্যার আপনি বুঝতে পারতেছেন না স্যার। মেয়েরা অশালীন পোশাক পরে; যা আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে যায় না।

-কোনটা শালীন-কোনটা অশালীন এটা ঠিক করার দায়িত্ব তোমাকে কে দিয়েছে! তুমি নিজে শালীনভাবে চলাটা তোমার দায়িত্ব। অন্য কে কী করলো তা নিয়ে মাথা ব্যথা করে পরীক্ষায় পেয়েছো তো 'সি' গ্রেড। আর তোমাদের নিয়ে একদম চিন্তা না করে মেয়েরা পেয়েছে 'এ' গ্রেড। সংস্কৃতি ঠেকানোর আগে নিজের রেজাল্ট বিপর্যয় ঠেকাও হে! যাও গিয়ে নিজের চরকায় তেল দাও। ফাইনাল পরীক্ষায় 'এ' গ্রেড পাওয়া চাই। 

Bigence

কর্পোরেট অফিসের বস এসে এক তরুণ কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করেন, তোমাদের সবাইকে গত পরশু যে এসাইনমেন্টগুলো দিলাম; অফিসের নারী কর্মীরা তা টাইমলি জমা দিয়ে দিয়েছে। তুমি আর অন্য পুরুষ কর্মীরা কেউ এখনো জমা দেয়নি তাদের এসাইনমেন্ট। কী নিয়ে ব্যস্ত তোমরা বলো তো! 

-স্যার মেয়েরা 'অশালীন' টি-শার্ট পরে তাতে লিখেছে, গা ঘেঁষে দাঁড়াবেন না। বলেন স্যার, কেউ অশালীন পোশাক পরলে; এরপর লাঞ্ছিত হলে; সেটা কী পুরুষের দোষ!

-কেন পুরুষ মানুষ কী স্পেনের ষাঁড়; যে লাল কাপড় দেখলেই গিয়ে ঢুঁশ দেবে! মাইন্ড ইওর অউন বিজনেস। বিকেলের মধ্যে এসাইনমেন্ট জমা দাও। নইলে কাল থেকে আর অফিসে আসার দরকার নাই।

 

মাঠে ফুটবল কোচ তরুণদের ধমক দেন, মেয়েদের ফুটবল টিম বিশ্বজয় করে বেড়াচ্ছে; আর তোমরা রয়ে গেলে থার্ড ক্লাস একটা ফুটবল টিম হয়ে! লজ্জা করে না তোমাদের! 

-স্যার মেয়েদের মধ্যে থেকে হায়া-লজ্জা হারিয়ে যাচ্ছে। তারা অশালীন পোশাক পরে চুলের খোপায় 'গা ঘেষে দাঁড়াবেন না' লেখা কাঁটা লাগিয়ে ঘুরছে।

-নিশ্চয়ই ছেলেরা গা ঘেঁষে দাঁড়ায় বলেই; এমন প্রচারণার প্রয়োজন পড়ছে। লজ্জাটা তো তোমাদেরই হারিয়ে যাচ্ছে। কেউ অভিযোগ করতে পারে এমন আচরণ করবে কেন! 

Tshirt

এক দোকান মালিক সাঁঝে দোকানে এসে তার ছেলেকে বলেন, তোর জন্মের সময় ছেলে হয়েছে বলে পাড়ায় মিষ্টি বিতরণ করেছিলাম। আর মেয়েটা হবার পর রাগে তোর মায়ের সঙ্গে কথা বলি নাই তিনদিন। এখন কী হইলো দেখ! তোর বইনেরে যে শো-রুমের দায়িত্ব দিছিলাম সে ঐটা থিকা আরো একটা নতুন শো-রুম করার প্ল্যান করতেছে। আর তুইতো বেটা এই দোকানটারে ডুবাইতে লইছস। কী করছ তুই! ব্যবসায় মন নাই কেন! ইয়াবা ধরছস নাকি!

-না আব্বা আমি নারীবাদ নিয়া ভীষণ চিন্তিত। নারীবাদীরা মেয়েদের রান্না করতে নিষেধ করে আর টি-শার্ট পইরা সেলফি তুলতে বলে। এইরকম হইলে তো বিয়াশাদী করা যাবে না আব্বা।

-নিজের ব্যবসা বাদ দিয়া তুই নারীবাদ নিয়া ভাবিস; আর করিস বিয়ার চিন্তা! গিয়া দেখ, তোর বইনে এতো চিন্তা না কইরা বিজনেস নিয়া চিন্তা করে। আর আমার দোস্ত মন্টু মিয়া দ্যাশে কোনদিন রান্নাঘরে যায় নাই; লন্ডনে গিয়া দেখ বিরাট শেফ হইছে; রেষ্টুরেন্ট ব্যবসা করতেছে ধুমাইয়া। 

 

এক হুজুর মসজিদে বক্তব্য রাখেন, মাইয়াগো ঘরের মইধ্যে ধইরা রাখতে হবে; তা গো অত স্বাধীনতা দেওন ঠিক না। স্বাধীনতা দিতে হবে পোলা গো। 

এমন সময় ফোন আসে, তার ছেলে ছিনতাই-এর অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে। থানায় গিয়ে বুঝতে পারেন, ছেলেকে ছাড়াতে অনেক খরচ হবে। আজ রাতের মধ্যে হাজার পাঁচেক টাকা দিতে হবে। অনেকের কাছে সাহায্য চেয়ে কোন সাড়া শব্দ পাননা। বাড়ি ফিরে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন। 

হুজুরের মেয়ে এগিয়ে এসে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে বলে, আব্বাজান যান ভাইজানরে ফিরাইয়া নিয়া আসেন। দেরি করলে গঞ্জে চালান কইরা দিবো।

-তুই এতো টাকা কই থিকা পাইলি!

হুজুরের স্ত্রী বলেন, মেয়ের সেলাইয়ের কাজ দেইখা পাড়ার মানুষ খুব পছন্দ করে। গিয়া দেখেন, ওর ঘরটা ভর্তি অর্ডারের কাপড়।

হুজুর অশ্রুসজল চোখে মেয়ের কাছ থেকে টাকাটা নিয়ে গিয়ে ছেলেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। আর আক্ষেপ করে বলেন,

-যে ছেলে ছিনতাই করে; তারে নিয়া পাড়ার লোকের সামনে মুখ দেখানোর আর অবস্থা নাই। সবাই দেখাইয়া কয়, ছিনতাইকারীর বাপ। এই যে রত্ন পোলার মা, তোমার বোরখাডা অহন আমারে আইনা দেও।

হুজুরের স্ত্রী হাসতে হাসতে বলেন, আপনে একটু শান্ত হন। খাইয়া দাইয়া বিশ্রাম করেন।

৮৪৯৬ পঠিত ... ১৯:২২, এপ্রিল ০৬, ২০১৯

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top