গত ২৮ বছর ধরে মুক্তির প্রতীক্ষায় থাকা মোস্ট অ্যাওয়েটেড সিনেমা 'ডাকসু নির্বাচন' মুক্তি পেলো আজ ১১ মার্চ। গতকাল রাতেই যদিও সিনেমাটির পাইরেটেড কপি রিলিজ হয়ে যায়, তবুও সিদ্ধান্ত নিলাম এত দিনের আকাঙ্ক্ষিত এই ছবিটি হলে গিয়েই দেখবো। যেই ভাবা সেই কাজ, মুক্তির প্রথম দিনে ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শো দেখে ফেললাম ঢাকা ইউনিভার্সিটির কুয়েত মৈত্রী হলের থ্রিডি পর্দায়।
যারা এখনো সিনেমাটি দেখেননি, তাদের জন্য রইলো সিনেমাটির একটি সংক্ষিপ্ত রিভিউ
*spoiler alert*
এর আগে ডিরেক্টর প্রডিউসারদের বড় বড় বুলি শুনে বারবার হলে গিয়ে ধরা খেয়েছি। তারা বলেছে, 'এইবার গল্প ইউনিক, এই সিনেমা মানসম্মত, ভরসা করে হলে গিয়ে দেখেন ঠকবেন না।' কিন্তু প্রতিবারই দেখেছি যে লাউ সেই কদু। হতাশ হয়েছি। সত্যি বলতে এখনো ডিরেক্টরের কথায় ভরসা রেখে হলে যাওয়া বিষয়টা হাস্যকর হয়ে দাড়িয়েছে। তারপরও শুধুমাত্র বাংলা সিনেমাকে ভালোবাসি বলেই হলে গিয়ে 'ডাকসু নির্বাচন' সিনেমাটা দেখেছি এবং পুনরায় হতাশ হয়েছি। বললে বিশ্বাস করবেন না, এই মুভি মাত্র কয়েক মাস আগে দেশজুড়ে রিলিজ হওয়া আরেকটি সিনেমার হুবহু কপি। শুরু থেকে শেষ অব্দি একই স্টোরি লাইন। জাস্ট কয়েকটা ডায়লগ আর অভিনেতা অভিনেত্রীর চেহারা বাদে কিচ্ছু আলাদা নেই।
আগের রাতে ব্যালটবাক্স ভরার ঘটনার মাধ্যমে সিনেমা শুরু হয়। সকালের দৃশ্যে দেখায় বিশাল লাইন কেন্দ্রের বাইরে। যে লাইন কমছে না। একজন কেন্দ্রে ঢুকে বের হয়ে আবারো লাইনে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। তাদের সহযোগিতা করছে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। তারপর কয়েকটা অ্যাকশন দৃশ্য। কমেডি অ্যাক্টর ফেসবুকের কিছু ফানি ডায়লগ। কিছু স্যাটায়ার আর কিছু সার্কাজম। কয়েক পক্ষের নির্বাচন বর্জন। সব সেম। শেষ দৃশ্যে দেখা যায় নায়কের জয় আর নায়কের বাবার চিরাচরিত ডায়ালগ, 'নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে।' সিনেমা শেষ।
কোনো ব্যতিক্রম নেই, কোনো টুইস্ট নেই। বাংলাদেশের সিনেমা পরিচালক কমিটির কাছে প্রশ্ন, 'আমরা কি পান্ডা? এই একই বাশ আর কতবার খাবো? নতুন কিছু না করতে পারলে প্লিজ সিনেমা বানানো বাদ দিন।'
সিনেমার ভালো দিক
ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক আর সিনেমাটোগ্রাফি বেশ ভালো ছিলো। শুধু ঢাবির ভেতর শ্যুট করা বিধায় ঢাবির বিভিন্ন ঐতিহ্য ও স্থাপনা চোখে পড়ে। অভিনয় রিয়েলিস্টিক হয়েছে। বিশেষ করে নায়ক ভিসি সিনেমার শেষ ডায়লগটি দেয়ার ক্ষেত্রে অভিনয়ের মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন- 'নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে।' ফেসবুকের কিছু কমেডি পাঞ্চলাইন বেশ হাসিয়েছে। বিরতিতে টিএসসির দশ টাকার চা, সিঙ্গাড়া, সমুচা ও চপও ভালো ছিলো৷ তাছাড়া আমাদের এই কাহিনী নিয়ে নাকি উত্তর কোরিয়াতেও মুভি হচ্ছে। বিষয়টা অবশ্যই আমাদের জন্য গর্বের। আর কয়েক মাস আগেই মুক্তি পাওয়া মুভিটির মত ৭০০ কোটি বাজেটের সিনেমার রিমেকটি অল্প বাজেটেই করে ফেলা ডাকসু নির্বাচন মুভির পরিচালকের মুন্সিয়ানা বলা যায়।
ডায়লগ
তবে হ্যাঁ, সিনেমায় সাধারণ ফেসবুকার চরিত্রে অভিনয় করা শিল্পীদের বেশ কিছু সংলাপ ছিল ইন্টারেস্টিং, হাস্যরসপূর্ণ। যেমম এগুলো-
* নির্বাচন একটা ওয়ানডে ম্যাচ। এখানে খেলতে আসে সবাই, কিন্তু সন্ধ্যার পর লীগের জয় হয়, বাকিরা ভোট বর্জন করে।
* কোরিয়া যেমন নিশীথ সূর্যের দেশ, বাংলাদেশ তেমন নিশীথ ভোটের দেশ।
* আগে ফেসবুকে খালি লাইক ছিলো। পরে বাংলাদেশের নির্বাচনগুলোর কথা ভেবেই মার্ক জাকারবার্গ ফেসবুকে নিয়ে আসেন 'হাহা' রিয়্যাক্ট!
ব্যক্তিগত রেটিং
২৮ বছর ধরে অপেক্ষার পর এই?/১০
পরিশিষ্ট
এটুকু বলতে পারি যে আমি তো আর কলাকুশলীদের কথায় বিভ্রান্ত হয়ে এ জীবনে বাংলা ছবি দেখতে হলে যাচ্ছি না। আপনার ইচ্ছা হলে নিজ দায়িত্বে ঢাবির যেকোনো হলে গিয়ে দেখতে পারেন। ধন্যবাদ।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন