ঢাকার বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের ১৫ টাকার প্লেইস এন্ড ৩৮ টাকার ফুড রিভিউ

২৬৯০ পঠিত ... ২২:৩২, জুলাই ১৪, ২০১৮

প্লেইস রিভিউ
স্থান: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

(বিঃদ্র- এটি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ একটি রিভিউ, কোন পেইড রিভিউ নয়)
হল সিট খরচ: মাসিক ১৫ টাকা

এত স্বল্প খরচে নির্বিঘ্নে থাকার জায়গা আর পৃথিবীতে একটাও নেই। রুম প্রতি বরাদ্দ আছে একটি সুদৃশ্য বিছানা, দৈর্ঘ্য-প্রস্থে একটু চাপা হলেও দু’জন নিমিষেই সে বিছানায় গুটিসুটি করে ঘুমাতে পারবেন। বিছানার তোষকের আনাচে কানাচে রয়েছে ছারপোকার আনাগোনা, যাদের সুড়সুড়িতে আপনি অ্যালার্ম দেওয়া ছাড়াই ঘুম ভেঙ্গে উঠে যাবেন। বাথরুম ব্যবস্থাও দারুণ, হলের প্রতিটি ফ্লোরে রয়েছে একটি করে বাথরুম। এতে প্রাকৃতিক কর্ম সাধনের এত ভালো সুব্যবস্থা আছে যে, মাঝেমাঝে আপনাকে সেখানে লাইন দিতে হতে পারে। হলের ঘরগুলোর পরিবেশ বেশ খোলামেলা, তাই আপনি বদ্ধ ঘরে থেকেও পাচ্ছেন গরমের সময় আদ্র বাতাস, বৃষ্টিতে ভেজার আনন্দ আর শীতের সময় কনকনে ঠাণ্ডা। তবে বলে নেওয়া ভালো, মাসিক ১৫ টাকা খরচে এই রুমগুলো পেতে আপনাকে দুই কিংবা তিন বছর আগে থেকেই বুকিং দিয়ে রাখতে হবে। এই বুকিংয়ের শর্তাবলীর অংশ হিসেবে আপনাকে হতে হবে নম্র, ভদ্র এবং একই সাথে থাকতে হবে জোর গলায় স্লোগান দেওয়ার ক্ষমতা। ১৫ টাকা দিয়ে থাকার সুবর্ণ এই সুযোগ সবাই সবসময় পান না, আর তার জন্য আপনাকে প্রথমে থাকতে হবে দুইশ/তিনশ মানুষের সাথে গণরুমে, যেখানে সবার সাথে গড়ে উঠে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক। যদি আপনি হাতুড়ি, ছেঁনি, ধারালো যন্ত্রপাতি এবং বাঁশ- এই বস্তুগুলোর ব্যবহারাদি সম্পর্কে অবগত হন এবং সারারাত বাইরে দাঁড়িয়ে থাকার সামর্থ্য রাখেন, তবে একদিন আপনিও এই ১৫ টাকা দিয়ে হল রুমে থাকার সুবর্ণ সুযোগ লাভ করবেন!

হলের ফুড রিভিউ
খরচ: ৩৮ টাকা প্রতিবেলা
মেন্যু: সাদা ভাত, ডাল, মাছ/মাংস, সিদ্ধ সবজি, ভর্তা, পানি

প্রতিদিন দুপুর-রাতের এই নানাপদী খাবার শুধুমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ছাড়া আর কোথাও মিলবেনা। ডালের সাথে এখানে বোনাস হিসেবে মিলবে প্রচুর পানি, তাই আর অতিরিক্ত পানি আপনাকে খেতে হবেনা। ভাতের সাথে অতিরিক্ত আমিষ হিসেবে আপনি পাবেন ছোট ছোট পোকামাকড়। বেয়ার গ্রিলস এরকম খাবার আইটেমের সন্ধান পেলে বন-জঙ্গল ছেড়ে নির্দ্বিধায় এখানে এসে ভাত খেতেন, যদিও ‘বহিরাগত’ হওয়ায় তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ঢুকতে কিছুটা বেগ পেতে হতে পারে। ভাত-ডাল ছাড়াও রয়েছে ছোট ছোট প্রায় ‘অদৃশ্য’ সাইজের মাছ আর মাংস। এই ক্ষুদ্র আকৃতির মাছ/মাংস দেখে হলের রাঁধুনির সুনিপুণ দক্ষতার প্রশংসা করতেই হয়। কথায় আছে- ‘অনাহারে নাই খেদ, বেশি খেলে বাড়ে মেদ’, শিক্ষার্থীদের সুস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করেই খাওয়া-দাওয়ার জন্য এমন সাশ্রয়ী মেন্যু রাখা হয়েছে। আবার হলে খাবার-দাবারের রয়েছে বিশেষ সুবিধা। একশ্রেণীর শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে আনলিমিটেড অফারে হলের খাবারগুলো খেতে পারেন! হলের খাবারে একই সাথে রয়েছে এক আধ্যাত্মিক শক্তি, যেটি খেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা লাভ করেন দিন-রাত একটানা লাফালাফি করার ক্ষমতা।

রেটিং: ১১/১০

লেখা: শরীফুল হক আনন্দ

২৬৯০ পঠিত ... ২২:৩২, জুলাই ১৪, ২০১৮

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top