জনপ্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগের সার্চ কমিটির উপদেষ্টা হলেন শরিয়ত ভাই। সার্চ কমিটির সচিব হলেন নেয়ামত ভাই।
শিক্ষা সংক্রান্ত একটি কমিটিতে দুজন শিক্ষাবিদকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিলো। কিন্তু নেয়ামত ভাই এসে বলে, একজন শিক্ষাবিদ টাকনুর ওপর পাতলুন পরে না। ফক্সফোর্ড মসজিদে কোনোদিন নামাজের জামাতে ইমামতি করতে দেখিনাই তারে। সুন্নতি গোঁফ কাটা নাই। মাইকেল মধুসূদন দত্তের মতো এক গোছা দাড়ি আছে; ঐটারে দাড়ি বলে না। সুতরাং ঐ লোক নিশ্চয়ই ইসলামোফোবিক। সে এই শিক্ষা কমিটিতে থাকলে টেক্সট বইগুলি শিরকে ভইরা যাইব।
শরিয়ত ভাই বুদ্ধি দেয়, ও নেয়ামত ভাই আপনি তো ইউটিউবার। ঐ মাইকেল মধুরে নিয়া বয়ান দিন। এইটা ভাইরাল হইব। তারপর কাকরাইল মসজিদে একটু তৌহিদি জনতারে নিয়া হৈ চৈ কইরা সেই ভিডিওডা দিয়েন। এইগুলি দেখাইয়া শিক্ষা উপদেষ্টারে জাইতা ধরুম। উনি দেখলাম আন্দোলনের সময় একটা ছবি আঁকছিলেন; তার একটা গানের ভিডিও দেখছি; এইসব লোক বড্ড নরম হয়; হালকা প্রেশার কুকারে রাখলেই হুইসেল দিব।
শাহজাদীর কালো নেকাব পরে রাবেয়া প্রবেশ করে, লম্বা করে সালাম দিয়ে বলে, শরিয়ত হুজুর শিক্ষা কমিটিতে এক মহিলারে দেখলাম। উনি তো আন্দোলনের সময় পুলিশের কাছ থিকা গ্রেফতার হওয়া ছাত্র ছাড়াইতে গিয়া এতোগুলি না মেহেরামের সামনে মাটিতে পইড়া গেলো গিয়া। পর্দা পুশিদা কিছু নাই।
শরিয়ত হুংকার দেয়, এইজন্য সেকুলাঙ্গার নারী আমার দুই চক্ষের বিষ। নারী ঘরের শোভা; সে কেন পরপুরুষের সঙ্গে রাজপথে। সে কেন আন্নের মতো অন্দর মহলে বইসা ফেসবুকে গরম গরম পোস্ট দেয় নাই; পরকালের কোন ফিকর কি নাই তার। এই নারী তো টেক্সট বইয়ে ও-তে ওড়না যুক্ত করার বিপক্ষে অবস্থান নেবে। রাবেয়াবুজি আপনে তারে নিয়া একটা ভিডিও করেন। আপনি কইবেন, প্রত্যেক সমাজের একটা নিজস্ব কায়দা কানুন আছে। এইটা তো আম্রিকা না; যে এইখানে নারীরা কমলা হ্যারিসের মতো নাইচা বেড়াবে! শিক্ষা সংস্কারে সহি নারী চাই।
হঠাত একটা ফোন আসে। শরিয়ত ভাই ব্যালকনিতে চলে যায়, সালাম আলমদানি ভাই; কাজকাম ভালোই আগাইতেছে; ইন্ডিয়ান টিভিতে ময়ূখ দাদু যেইভাবে বলতেছে আমরা ঠিক ঐভাবে কাম করতেছি।
: দুই চারটা পূজা মণ্ডপে হামলা রেডি থাকবো তো!
: মাজারে হামলার পর কামডা কঠিন হইয়া গেছে আলমদানি ভাই; আর্মি ধরলে গোপালগঞ্জ থেরাপি দেয়। দেখেন যদি কাঁচামাল জনতা পার্টি দিয়া পূজা মণ্ডপ টেক কেয়ার করা যায়।
এমন সময় নেয়ামত ভাই রুপপুরে পরমাণু বিজ্ঞানী নিয়োগের একটা ফাইল নিয়ে আসে। একটু পরে বিজ্ঞানীদের ইন্টারভিউ। শরিয়ত ভাই মরিস বুকাইলির গ্রন্থ খুলে বিজ্ঞানীর ইন্টারভিউ নেবার জন্য প্রস্তুতি নেয়।
প্রথমেই একজন নারী বিজ্ঞানী আসে। তার চুল ছোট করে কাটা। ও-তে ওড়না ছাড়াই একটা ব্লেজার পরে চলে এসেছে সে।
শরিয়ত ভাই বলে, মা জননী, আপনি মায়ের জাত। প্রত্যেক মা এক একটি পারমানবিক কেন্দ্র। তার গর্ভে মানব বোমা তৈরি হয়। নিয়মিত বোমা ডাউনলোড করাই তার কাজ। আপনার জন্য রুপপুরে ক্ষুদ্র শক্তি উৎপাদন গবেষণা অনেক ছোট কাজ।
এরপর একজন পুরুষ প্রার্থী আসে। নেয়ামত ভাই তাকে কটাক্ষ করে বলে, দেইখা তো ছাত্রলীগ মনে হয়; কলেমা বলেন দেখি।
প্রার্থী উঠে দাঁড়িয়ে পরনের কোট টাই খুলে ফেলে দেয়; খুলে ফেলে পাতলুন।
শরিয়ত ভাই বিব্রত হয়, আহা করছেন কি!
কোট টাইয়ের নীচে আজানুলম্বিত পাঞ্জাবি আর টাকনুর ওপর পাজামা। পকেট থেকে টুপি বের করে মাথায় পরে। তারপর গর্বিত ভঙ্গিতে বলে,
: আমি ফক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির কার্জন হল শাখার শিবিরের সভাপতি; এতোদিন ঐ শাখার ছাত্রলীগের পরিবেশ সম্পাদক ছিলাম। শহীদ হইনাই; তাই এখন গাজি হইয়া আছি হুজুর।
নেয়ামত ভাই গর্বের সঙ্গে বলে, এমেরিকার আছিলো ওপেন হাইমার আর আমগো আছে গোপন হাইমার। আগামীকাল বাদ যুহরে কাজে যোগদান করুন সাথী।
Give them an inch and they will take a mile.
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন