আমাদের প্রয়োজন ভাত-মাছ-মাংসের স্বাধীনতা, বিদ্যুৎ সরবরাহ, হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সন্তানের সুশিক্ষার সুযোগ, একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই, পরিচ্ছন্ন জামা-কাপড়, চুরি-ডাকাতির ভীতিহীন নিরাপদ তন্দ্রা, সরকারি দপ্তরে একটু ভদ্র ব্যবহার। সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনের শৃঙ্খলা ও শান্তির এই আকাঙ্ক্ষা থেকেই আমরা রাষ্ট্রের নাগরিক হতে রাজি হয়েছিলাম; সামাজিক চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিলাম। এরজন্য কত রক্ত-ত্যাগ-ঘাম; কিন্তু যতবারই রাক্ষুসে স্বৈরশাসক থেকে মুক্ত হয়ে একটা গণতান্ত্রিক কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ার স্বপ্ন দেখি আমরা; ততবারই রাজনৈতিক দলের সাইনবোর্ড ঝুলানো ডাকাত দলগুলো তাদের চর দখলের লড়াই-এ আমাদের জনপদকে আতঙ্কিত করে।
সহমত ভাই ও রহমত ভাইয়ের চাঁদাবাজি ও দখলবাজি প্রতিষ্ঠিত করতে এদের অগ্রবর্তী দল হিসেবে শিবব্রত দাদা ও শরিয়ত ভাই; সারাক্ষণ কালচারাল ওয়ারে ব্যস্ত থাকে। ললিতাদি ও রাবেয়া আপা সারাদিন কালচার নিয়ে ত্যানা প্যাঁচায়। ত্যানা প্যাঁচানোর কাজটা সহমত ও রহমত ঠিকমতো পারে না বলেই কুঁচকুঁচানি শিবব্রত ও শরিয়তকে সঙ্গে রাখে।
এই চরিত্রগুলোকে বুঝতে আমরা তাদের ডিএনএ বিশ্লেষণের সাহায্য নেব। দক্ষিণ এশিয়ার সমতল কৃষিজমি আর নদী-সাগর ধরিব মতস্য খাইব সুখের নিশ্চয়তা দেয়। ঠিক এ কারণেই আফ্রিকা, ফার ইস্ট, পারস্য ও সেন্ট্রাল এশিয়া থেকে মোট চারটি প্রধান অভিবাসনের ঘটনা ঘটেছিল এই দক্ষিণ এশিয়ায়। ডিএনএ স্যাম্পল বিশ্লেষণ করে পাওয়া গেছে; এখানে সবাই অভিবাসী; কেউ আগে এসেছে; কেউ পরে এসেছে। এই যে বিপুল জনসংখ্যা এখানে অভিবাসী হয়েছিল; তাদের সঙ্গে স্বাভাবিকভাবেই কিছু ভিক্ষুক প্রকৃতির লোক এসেছিল; যারা অলস; যাদের মন কৃষিকাজে নেই; কেবল চেয়ে খাওয়ার অভ্যাস।
এই ভিক্ষুক অভিবাসীদের উত্তরাধিকার হচ্ছে সহমত-রহমত-শিবব্রত-শরিয়ত। আর ললিতাদি ও রাবেয়া হচ্ছে প্রাচীনকালে পাতকূয়ার ধারে উকুন তুলে দিতে দিতে কুঁচ কুঁচ করে অনুপস্থিত নারীকে নিয়ে পরচর্চা করার জেনেটিক আশ্লেষ।
পালযুগ-সেনযুগ-সুলতানি আমল-মুঘল আমল-নবাবী আমলে এরা সমাজে ছিল। কিন্তু ভিক্ষুক বলে মায়া করে কেউ তাদের ওপরে কেউ নির্দয় হয়নি।
বৃটিশ আমল এলে; এর আগে যেহেতু নবাবী ও মুঘল যুগ ছিল; তাই বৃটিশেরা শিবব্রত ও ললিতাদিকে ইতিহাস বলে বেড়ানোর বিনিময়ে খাদ্য প্রকল্পে যুক্ত করে। শিবব্রত তখন কুঁচ কুঁচ করে বলে বেড়ায়, সিরাজউদ্দৌলা কত দুঃশ্চরিত্র ছিল, মুঘলেরা কত অত্যাচারী ছিল। এই যে বানিয়ে ছানিয়ে ইতিহাস বলা, রুপকথা ও কোবতে রচনা এইগুলোকে কালচার বলে স্বীকৃতি দেয় বৃটিশ। সহমত-রহমত-শরিয়তের সঙ্গে দেখা হলে শিবব্রত চুক চুক করে বলত, নাহ তোমাদের কালচার নাই। সহমত তখন এসে কেঁদে পড়ে, ও শিবুদাদা আমায় একটু কালচার শেখাও। শিবব্রত শেখায়, নবাব আর মুঘলেরা মন্দ লোক ছিল আর বৃটিশেরা ভগবান; এটা বললেই দেখবে পেটের মধ্যে কালচার গুড় গুড় করবে। ললিতাদি তো পাতকূয়া তলায় গিয়ে হাসিতে হুটোপুটি খেয়ে বলে, সিরাজুদ্দৌল্লার স্ক্রিনশট ফাঁস কইরা দিমু!
পাকিস্তান আমল এসে গেলে, রহমত ও শরিয়তের ইদ এসে যায়। তারা তাদের এলাকার নবাবের কাছে গিয়ে বলে, একটু কালচার দরকার যে নবাব, শিবব্রত শুধু কালচারের খোঁটা দেয়। নবাব বুদ্ধি দেয়, সেনযুগের শাসকেরা ভীতু ও কাপুরুষ ছিল এগুলো বলে বেড়ানোই কালচার। রাবেয়া তখন পাতকূয়া তলায় গিয়ে হেসে লুটোপুটি করে, লক্ষণ সেন রান্নাঘরের দরজা দিয়া পালাইছিল।
কালচারের আলাপে আরেকটু এগিয়ে শিবব্রত রবীন্দ্র পূজা শুরু করে। ললিতা জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের মেয়েদের মতো সাজতে শেখে। ওদিকে শরিয়ত নজরুলের একি মধুর শরাব দিলে আল আরাবি সাকি বলে ভক্তিতে অশ্রুসিক্ত হয়। রাবেয়া তখন আল আরাবি সাকিদের মতো সাজতে শেখে।
বাংলাদেশ আমলে সহমত ও রহমত ডাকাতি পেশাটাকে প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি দেয়। অসহায় মানুষের দালান দখল করে বাবু ও সাহেব কালচার শুরু করে। সহমতের সংস্কৃতি জোটের প্রধান হয় শিবব্রত। আর রহমতের সংস্কৃতি সংস্থার প্রধান হয় শরিয়ত।
শিবব্রত আর শরিয়তের কালচারাল ওয়ারের ঠেলায় সমাজের কোনো জরুরি বিষয় আর আলোচিত হতে পারে না। ললিতাদি আর রাবেয়া আপার কালচারাল ওয়ারে সবার অক্কা পাবার জোগাড় হয়।
সহমত ক্ষমতায় থাকলে শিবব্রত তখন সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শেখায়; কেউ ঠিকমতো শিখতে না পারলে তাকে পাকিস্তানে চলে যেতে নির্দেশ দেয়। রহমত ক্ষমতায় থাকলে শরিয়ত তখন সবাইকে ইসলামি চেতনা শেখায়, কেউ শিখতে না চাইলে তাকে ভারতে চলে যেতে হুকুম দেয়। যেহেতু শিবব্রতের জীবন কেটেছে হিন্দু জমিদারের বারান্দায় আর শরিয়তের জীবন কেটেছে মুসলিম জমিদারের বারান্দায়; ভূমিহীন নিঃস্ব ভিক্ষুকের জীবন; তাই তাদের দুজনের মধ্যে দেশের মালিক সাজার উদগ্র আকাঙ্ক্ষা আর লোকজনকে উচ্ছেদের সংকল্প। এগুলো ডিএনএ-র শীতকার।
সহমত ও শিবব্রতের বাড়াবাড়ি জনগণের ধৈর্য্যসীমা অতিক্রম করলে; জনগণ লাত্থি দিয়ে সহমতকে ক্ষমতা থেকে ফেলে দেয়। রহমত ক্ষমতা না পেলেও সহমতের চাঁদাবাজি ও দখলের জমিদারির দায়িত্ব নেয়। কিন্তু মাথা খারাপ হয়ে যায় শরিয়তের। সে শিবব্রতের বাড়িতে হামলা করে; মাজার সংস্কৃতিকে শিরক দাবি করে ভাঙতে শুরু করে। ললিতাদি তখন সারাদিন আফসোস করে সহমত ক্ষমতা হারানোর। রাবেয়া আপা তখন তার হিজাব স্টোরে সামার সেল চালু করে।
সহমত ঠিক যেভাবে ক্ষমতার দম্ভে পাছা দুলিয়ে রবার্ট মুগাবের মতো ঘুরত, শরিয়ত ঠিক সেইভাবে ক্ষমতার দম্ভে পাছাদুলিয়ে আয়াতুল্লাহ খোমেনির মতো হাঁটে। জনগণ দেখে আর আর মুচকি হাসে, সহমতের পাছায় লাথি (পিএল) পড়তে দেখেও কারও শিক্ষা হইল না!
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন