৫ আগস্ট সাঁঝে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে গাঢ় লিপস্টিক আর আই মেকআপে নিজেকে সজ্জিত করে পালান মাহমুদ। রাত বিরেতে সেজেগুজে বেলজিয়ামের দূতাবাসে গিয়ে বলে, আমাকে বাঁচাও প্রিয়; আমাকে হাতের কাছে পেলে ওরা আমায় আস্ত রাখবে না।
পরিচিত দূতাবাস কর্মকর্তা বোঝায়, আপনি বিদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার না করে বরং আপনার রাবেয়া খাতুন নামের পাসপোর্ট ব্যবহার করে দুবাই চলে যান। তারপর সেখান থেকে নাহয় বিদেশি পাসপোর্টে বেলজিয়ামে যাবেন।
পালান মাহমুদ সময় নষ্ট না করে এয়ারপোর্টে চলে যায়। চোখের সামনে পদ্ম কামালকে তার স্বর্ণকেশী কন্যা নিয়ে ইমিগ্রেশন পার হয়ে যেতে দেখে তার আশা জাগে।
কিন্তু এয়ারপোর্ট পুলিশ স্বেচ্ছাসেবক লীগের আফসার আলী বলে, স্যার আপনারে অ্যারেস্ট করতে আসতেছে; আপনি পলাইয়া যান; আমারে সামান্য দুই কোটি টাকা দিয়া যান; অগো চা-মিষ্টি খাওয়াইয়া থামাই।
পালান মাহমুদ এয়ারপোর্ট থেকে সটকে পড়ে। সারাশহর জুড়ে কিশোরেরা গাইছে,
একি রণ-বাজা বাজে ঘন ঘন
ঝন রনরন রন ঝনঝন!
সেকি দমকি দমকি
ধমকি ধমকি
দামা-দ্রিমি-দ্রিমি গমকি গমকি
ওঠে চোটে চোটে,
ছোটে লোটে ফোটে
বহ্নি-ফিনিকি চমকি চমকি
ঢাল-তলোয়ারে খনখন!
একি রণ-বাজা বাজে ঘন ঘন
রণ ঝনঝন ঝন রণরণ!
ভয়ে আত্মারাম খাঁচা ছাড়া হয়ে যায় পালান মাহমুদের। বজরঙ্গী ভাইকে ফোন করে, দাদা আমাকে কোনোমতে কলকাতা পর্যন্ত আসার ব্যবস্থা করে দিন। বাকিটা আমি নিজেই করতে পারব।
: আপনি বেনাপোল পৌঁছে যান; ওখানে ধনঞ্জয় আপনাকে রিসিভ করবে।
পালান মাহমুদ মেকআপ রিফ্রেশ করে রাবেয়া খাতুন হিসেবে যাত্রা শুরু করে। পথে বিভিন্ন জায়গায় সেনাবাহিনীর লোকেরা গাড়ি থামায়; রাবেয়া খাতুন তাদের দেখে লজ্জায় আড়ষ্ঠ হলে তারা মহিলা মহিলা যেতে দেন বলে ছেড়ে দেয়।
বেনাপোলে ধনঞ্জয় এসে বলে, চেক পোস্ট দিয়ে যেতে গিয়ে পুলিশ লীগের বিপ্লব ধরা পড়েছে। কাজেই আপনাকে যেতে হবে ঘোরা পথে। আপনি পার্শ্ববর্তী বাঁশবাগানে গিয়ে কলাপাতা বিছিয়ে শুয়ে থাকুন। ভোরের আগে আপনাকে সীমান্ত পার করে দেব।
পালান মাহমুদ কলাপাতার বিছানায় শুয়ে শুয়ে গান করে,
বড় আশা করে
বড় আশা করে এসেছি গো
কাছে ডেকে লও
ফিরাইও না জননী।
দিনহীনে কেহ চাহে না
তুমি তারে রাখিবে জানি গো।
আর আমি যে কিছু চাহিনে
চরণও তলে বসে থাকিব,
আর আমি যে কিছু চাহিনে
জননী বলে শুধু ডাকিব ।
তুমি না রাখিলে গৃহ আর পাইব কোথায়
কেঁদে কেঁদে কোথা বেড়াব
ঐ যে হেরী
তমশ ঘন ঘরা
গহন রজনী।
ধনঞ্জয় এসে বলে, ওপারে বজরঙ্গী ভাই অপেক্ষা করছে; চলুন দিদি।
নো ম্যানস ল্যান্ডের কাছে এসে সহাস্যে বজরঙ্গী ভাই সানন্দে জড়িয়ে ধরে বলে, জয় শ্রীরাম।
পালান মাহমুদ আনন্দাশ্রুতে সিক্ত হয়ে বলে, জয় বাংলা।
দমদম এয়ারপোর্টে যাবার পথে ফোন আসে বিদ্যুতদানি ভাইয়ার। পালান মাহমুদ বলে, আপনার এই ঋণ কখনও শোধ করতে পারব কিনা জানি না বিদ্যুতদানি ভাইয়া।
: ও নিয়ে ভাববেন না; আপনাদের সমঝোতা স্মারকের বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সার্ভিস চার্জের টাকায় ছেলের রাজকীয় বিবাহ দিয়েছি। আপনাদের প্রতি ঋণের অন্ত নেই আমার।
পালান মাহমুদ অবশেষে রাবেয়ার সাজ ছেড়ে পালান মাহমুদ হিসেবে দীর্ঘ বিমানযাত্রা শেষে বেলজিয়ামের সেকেন্ড হোমে পৌঁছে। ছোটো ভাই চালান মাহমুদ বাড়িটি বেশ সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছে। কয়েকঘণ্টা ঘুমিয়ে উঠে, পালান মাহমুদ বলে, চল চালান একটু ব্রাসেলসে যাই, কিছুই আনতে পারিনি। কিছু শপিং করা দরকার।
: বদ্দা, ব্রাসেলস গিজ গিজ করছে প্রবাসী বাংলাদেশিতে। আপনারে দেখলেই তো চিনে ফেলবে।
পালান মাহমুদ আবার ড্রেসিং টেবিলের সামনে সাজতে বসে যায়। ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক দেয়, চোখে ব্ল্যাক আই মেকআপ।
: বদ্দা আন্নেরে তো চিনতে ন পারি!
: বদ্দা না, রাবেয়া বুবু বলে ডাক, হাজারিবাগ মহিলা বিএনপির সভানেত্রী আমি। মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক; আমি বিএনপির লোক।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন