চোরামান্ডি

২৪৫ পঠিত ... ১৬:০৩, আগস্ট ২৭, ২০২৪

1

গভীর রাতে কলাপসিবল গেটে ধাক্কার শব্দ শুনে পারভিন বিছানা থেকে উঠে গেটের কাছে যায়। দেখে হিজাব পরে দাঁড়িয়ে এক পৃথুলা নারী।

: কে আপনি!

মুখের ওপরের পর্দা সরালে চমকে ওঠে পারভিন।

: ভাইয়া আপনি!

: তাড়াতাড়ি দরজা খোলো; আমাকে ভেতরে ঢুকতে দাও।

পারভিন কলাপসিবল গেট খুলে তাকে ভেতরে নিয়ে যায়। সোফায় বসায়। চট করে এক গ্লাস আমের শরবত এনে দেয়।

: ভাইয়া আমি তো ভেবেছিলাম আপনি দেশের বাইরে পালিয়ে গেছেন!

: পালাব কেন পারু; আমরা মরি নাই; আবার আসিব ফিরে আনসার কিংবা রিকশাওয়ালার বেশে; বজরাঙ্গীর ঢেউয়ে ভেসে ভেসে।

: কিন্তু এখানে তো আপনি নিরাপদ নন; বারো রকম লোক আসে এখানে।

: তোমাদের চোরামাণ্ডি প্রতিষ্ঠার সুচিন্তা ও আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা কে দিয়েছে! তোমাদের আয়না বসানো ব্লাউজ কে দিয়েছে! ওয়েস্ট ইনের আড্ডাটা নাই হয়ে যাবার পর এখানে তোমাদের এনে বসিয়েছে কে! এখন বুদ্ধি করে আমাকে এখানে লুকিয়ে রাখতে পারবে না পারু!

পারভিনের তীক্ষ্ণ মেধা; চোরাজকতার আমলে বাঘে মহিষে এই ঘাটে একসঙ্গে জল পান করেছে। সে একটা শিফনের শাড়ি এনে ভাইয়াকে দেয়; শাবানার সেলাই মেশিন বের করে একটা এক্স এক্স এল সাইজের ব্লাউজ তৈরি করে। ভাইয়াকে সে মনের মাধুরী মিশিয়ে সাজায়। ভোর হবার আগেই ভাইয়া গুলফাত আরা ম্যাডাম হয়ে পড়ে।

পারভিন চোরামাণ্ডির মেয়েদের এক জায়গায় করে পরিচয় করিয়ে দেয়, উনি কুইক রেন্টাল নবাবের সঙ্গে ঘর বেঁধেছিলেন। বুবু ভারতে পালিয়ে যাবার পর; নবাব ভারত যাবার চেষ্টা করে; কলাপাতার বিছানায় তিন দিন শুয়ে থেকে তারপর ধরা পড়েছেন বিজিবির হাতে। যেহেতু ম্যাডাম এই চোরামাণ্ডি প্রতিষ্ঠার অর্থ দিয়েছিলেন; আজ থেকে তিনি আমাদের সর্দারনি।

সবাই হাত উঁচু করে স্লোগান তোলে, জয় গুলফাত আরা ম্যাডামের জয়।

ম্যাডাম তখন কুইন সাইজের গোলাপ কাঠের বিছানায় বসে কুটুর কুটুর করে পান খাওয়া শুরু করে; আর গুন গুন করে গান গায়, লাল গোলাপের ছোয়া নেবে কাছে এস।

বিকেল গড়াতেই ঘরে ঘরে কু কু কু কু গান বাজতে শুরু করে। আসতে শুরু করে পারমানবিক বালিশ নবাব, পদ্মা সেতু নবাব, মেট্রোরেল নবাব, কর্ণফুলী টানেল নবাব, অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন এ টু আই নবাব। সবাই দাঁড়ি রাখতে শুরু করেছে। কথায় কথায় আলহামদুলিল্লাহ ও ইনশাআল্লাহ বলছে আজকাল। আগে কথায় কথায় জয় বাংলা বলে যে রোমান্টিক অভিভাষণ দিত; এখন তা রাতারাতি নারায়ের তাকবিরে বদলে গেছে। খোদা হাফেজ এখন হয়েছে আল্লাহ হাফেজ।

ফলে গুলফাত আরা ম্যাডামের পক্ষে তাদের চেনা মুশকিল হয়। এক নবাবকে দেখে চমকে উঠে ম্যাডাম। পারভিনকে ডেকে বলে, পারু জামায়াত ঢুকে পড়েছে!

: পারু হেসে বলে, ম্যাডাম এটা তো গোপালগঞ্জের জলমহালের নবাব। কাছে এলে ঠিকই চিনতে পারবেন।

: থাক থাক কাছে ডাকার দরকার নাই; যদি আমাক চিনে ফেলে।

: আরেক নবাবকে দেখে আঁতকে উঠে ম্যাডাম চিৎকার করে, বিএনপি বিএনপি।

: পারু হেসে বলে, ও তো আপনার রাজশাহীর বালুমহালের নবাব, যুবলীগের সোনার ছেলে!

এক কভিড টেস্টিং কিট নবাব কাছে এসে বলে, ম্যাডাম আপনার চেহারাটা খুব চিন পরিচিত লাগে!

ম্যাডাম রেগে বলে, তুমি কি ড্রাগড নাকি! আমি কুইক রেন্টাল নবাবের বাগানবাড়িতে থাকতাম। আমাকে দেখবে কেমন করে। নবাব আমাকে কখনও পরপুরুষের সামনে আসতেই দেয়নি।

নৈশভোজের সময় ঘরের দরজার সিটকিনি লাগিয়ে দিয়ে পারভিন জিজ্ঞেস করে, ভাইয়া আপনি তো বলছিলেন গুলির কোনো অভাব নাই! তাইলে চোরাজকতার পতন হইল ক্যামনে!

: আগেই বলেছি ক্যাজুয়ালটি কমাতে; এমনিতেই হাজার খানেক মরেছে; বিচার করলে তো আমাদের ফাঁসি হয়ে যাবে গো।

ম্যাডাম, অঝোর ধারায় কাঁদতে থাকে। পারু ম্যাডামের মাথায় তেল-পানি দিয়ে দেয়। হঠাৎ চমকে ওঠে, ম্যাডাম আপনার চুলে উকুন হয়েছে!

: কই আমায় দাও একটা; ৫ তারিখের পর কিছুই মারতে পারিনি, হাত নিশপিশ করে।

ম্যাডামের অনুরোধে জ্যোতিষী রতু মজুমদারকে ডেকে আনা হয়। মাজা মরা কৃশ লোকটি হাতে একটি গোলাপ হাতে প্রবেশ করে। গোলাপটি হাঁটু গেড়ে ম্যাডামের হাতে দিয়ে বলে, আমার দীপু আপার বাগানের ফুল।

ম্যাডামের হাতের রেখা ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে দেখে রতু চুক চুক করে বলে, শনি নিচস্ত; বৃহস্পতির দেখা নেই; রবির ক্ষেত্রে বেশ কাটাকুটি; মনে শান্তি ফিরিয়ে আনা কঠিন। একটা নীলার আংটি দিয়ে যাচ্ছি; ব্যবহার করে দেখুন ম্যাডাম উপকার পান কিনা; নইলে পাথর বদলে দেব।

ম্যাডাম আঁচল থেকে চাবির গোছা খুলে পারুকে দেয়, রতু জ্যোতিষীকে পুরস্কৃত করো।

রতু রাধা গোবিন্দ রাধা গোবিন্দ বলতে বলতে চলে যায়।

সন্ধ্যা নামার আগেই ম্যাডাম একটা নীল শিফন পরে ম্যাচিং নীলাভ আই মেক আপ করে। পারুকে অনুরোধ করে নীল নেইল পলিশ লাগিয়ে দিতে। নিজে খয়েরি লিপস্টিক দিয়ে ঠোঁট উলটে আয়নার দিকে তাকিয়ে বলে, ক্রস ড্রেসিঙের আনন্দ পাচ্ছি। আমি আসলে নিজের নারীসত্ত্বাকে এতদিন সেলিব্রেট না করে ভুলই করেছি।

এমন সময় সিঁড়ির কাছে এক সাদা সাহেবকে দেখে সি আই এ সি আই এ বলে চেঁচিয়ে ওঠে। পারু তড়িঘড়ি করে হলুদ খাপটির মধ্যে থেকে কটা মুড স্টেবিলাইজার দেয়। ডি ক্যান্টার থেকে হুইস্কি গ্লাসে ঢেলে তা দিয়ে গিলে নেয় ম্যাডাম।

গোরা সাহেব এগিয়ে এসে বলে, আমি সি আই এ নই, আমার নাম আর্নেস্ট হেমিংওয়ে। জার্নালিস্ট ও নভেলিস্ট। আপনার মধ্যে এলিজাবেথান পিরিয়ডের নারীর লাস্য আছে ম্যাডাম।

: গুলফাত আরা বলে ডাকো আমায়।

আর্নেস্ট গুলফাতের হাতের উল্টোপিঠে চুম্বন দিয়ে বলে, উইল ইউ ডান্স উইথ মি গুলফাত মাই ফেয়ার লেডি!

২৪৫ পঠিত ... ১৬:০৩, আগস্ট ২৭, ২০২৪

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top