থামেন ভাই

২০০ পঠিত ... ১৮:১০, আগস্ট ২৪, ২০২৪

26

কলকাতায় বিয়ে হয়ে আসার পর থেকে শুক্লা দিদি সারাক্ষণ ক্যাসেট বাজিয়ে আবদুল আলীমের গান শোনেন, ও পদ্মা নদী রে .....

সর্বনাশা পদ্মা নদী

তোর কাছে শুধাই

বল আমারে তোর কি রে আর

কুল কিনারা নাই...

কুল কিনারা নাই

ও নদীর কুল কিনারা নাই।

জামাইবাবু একদিন বিরক্ত হয়ে বলেন, কী যে এক গান পেয়েছ! বরং নীড় ছোট ক্ষতি নেই, আকাশ অনেক বড়-এই গানটা শোন। তাহলে এই গরীব কম্যুনিস্টের সংসার করতে কষ্ট হবে না!

দিদি বলেন, আমাদের নড়াইলে নিজেদের পুকুর থেকে জাল দিয়ে তুলে আনত দুই-তিন কেজি ওজনের রুই-কাতলা; হাটবারে বড় বড় ইলিশ মাছ নিয়ে ফিরতেন বাবা। আর কী এক শিক্ষিত ছেলে বলে তোমার ঘরে পাঠালো, আড়াইশো গ্রাম মাছ নিয়ে ফেরো বাজার থেকে।  রোজ রোজ ঐ পোস্ত-থানকুনি পাতার ঝোল। এমন দুশো গ্রাম রসগোল্লা কিনতে দেখিনি কখনো। উতসবে আয়োজনে ময়রারা আসতো; উঠোনের একপাশে বড় কড়াইয়ে ভেসে উঠতো টইটুম্বুর রসে ভরা গোল্লা।

: আমি তো চেষ্টা করছি কংগ্রেসে একটু ঠাঁই পেতে। দেখে নিও; তখন আমরা দিল্লির ফ্ল্যাটে থাকবো; এমব্যাস্যাডর গাড়িতে চড়বো!

: দিল্লি বহুত দূরস্ত। দিল্লির লাড্ডুর লোভ দেখিওনা। ও আমার জানা আছে।

জামাই বাবু মন খারাপ করে গান শোনেন, এই কিগো শেষ দান।

এরমধ্যে ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে একটা এপয়েনমেন্ট জুটে যায়। স্ত্রী সারাদিন "সর্বনাশা পদ্মা নদী" গান শোনে। তাই পদ্মা শাসনের একটা ব্যবস্থা করে স্ত্রীকে খুশি করতে ইচ্ছা করে। সেই সঙ্গে নতুন একটা আইডিয়া নিয়ে মিসেস গান্ধীর সঙ্গে কথা বলে উনাকে ইমপ্রেস করা যায়।

মিসেস গান্ধী বলেন, কি প্রণব বাবু; জ্যোতির মোহ কাটলো বুঝি!

: আজ্ঞে আমি নেহেরুজীকে দেখে বড় হয়েছি; তাঁকেই নেতা মেনেছি!

: তা কংগ্রেসের জন্য কী করতে চান!

: আমার স্ত্রী বাঙ্গাল; সে সারাদিন সর্বনাশা পদ্মানদী গান শুনে চোখের পানি ফেলে। তাই বলছিলাম, গঙ্গায় একটা বাঁধ দিয়ে ওর মনের দুঃখ কমানো যায় কি! শুষ্ক মৌসুমে ভারতে সেচের পানির অভাব হবে না। উইন উইন সিচুয়েশান; ওদেরকেও বন্যা-প্লাবন থেকে বাঁচানো গেলো; এদিকেও কৃষিতে সেচ বিপ্লব হয়ে গেলো!

ইন্দিরা গান্ধী ইমপ্রেসড হন। একটা ফর্ম এগিয়ে দিয়ে বলেন, আপনি এক্ষুণি কংগ্রেসে জয়েন করুন।

ফারাক্কা বাঁধ দেবার পর পদ্মা শুকিয়ে চর পড়ে গেলে; শুক্লাদি তখন আব্বাসউদ্দীনের "আল্লাহ মেঘ দে পানি দে ছায়া দে রে তুই" গানটা শোনেন। জামাই বাবু বিরক্ত হয়ে বলেন, প্লাবনেও কাঁদো; খরাতেও কাঁদো; কি একটা ক্রন্দসী জুটেছে ভাগ্যে!

ফারাক্কা বাঁধের সাফল্যের পরে ভারত-বাংলাদেশ যৌথনদীগুলোতে দিল্লির উদ্যোগে একে একে বাঁধ, ব্যারেজ, ড্যাম নির্মিত হয়। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল এতে মরুভূমিতে পরিণত হলে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা মরুর বাতাসে আলখাল্লা ওড়াতে শুরু করে।

বাংলাদেশের নদীগুলো শুকিয়ে গেলে ভুক্তভোগীরা ভারতকে দায়ী করতে থাকে খরাদাহের জন্য। আবার বর্ষা মৌসুমে হঠাত বাঁধের স্লুইস গেট খুলে দিলে রাতারাতি প্লাবিত হয়ে জলদাহে বানভাসী মানুষের অভিশাপ কুড়ায় ভারত।

শুক্লাদি জামাইবাবুর সঙ্গে কথাবার্তা বন্ধ করে দেন। সারাক্ষণ টিভিতে বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলে খরা-বন্যার খবর দেখে কাঁদেন আর আঞ্চলিক ভাষার হাসির নাটক দেখেন আর খুক খুক করে হাসেন। জামাই বাবুর সঙ্গে চোখাচোখি হলেই দিদি গম্ভীর হয়ে যান।

নিজগৃহে পরবাসী হয়ে জামাইবাবু একটা উপায় খুঁজতে থাকেন। মেয়ে বিষণ্ণতার গান মহীনের ঘোড়াগুলি শুনছিলো। ক্যাসেটের গায়ে মহীনের ঘোড়াগুলি লেখা দেখে জামাইবাবু "ইউরেকা ইউরেকা" বলে বাইরে বেরিয়ে যান।

বাংলাদেশের মঈন উকে ডেকে চারটে ঘোড়া উপহার দিয়ে বলেন, ভাই তুমিও বিপদে, আমিও বিপদে। চলো এমন কিছু করি; যাতে দুজনের সমস্যার সমাধান হয়। বাংলাদেশে ভারত সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে ওখানকার মিডিয়ায় যাতে কম কথা হয়; তেমন একটা হাসিখুশি সরকার ইনস্টল করা যাক। যাতে নদী শুকিয়ে গেলেও হাসে, নদী প্লাবিত হলেও হাসে।

বাংলাদেশে শুধু মিডিয়া নয়, সোশ্যাল মিডিয়াতেও ভারত রাষ্ট্রের বিন্দুমাত্র সমালোচনা দেখলে, থামেন ভাই বলে, খরা, বন্যা, করিডোর, ট্রানজিট, কয়লা পোড়ানো বিদ্যুৎ কেন্দ্র ইত্যাদি সবকিছুকে জাস্টিফিকেশন দিতে "থামেন ভাই" হয়ে ওঠেন হাসিখুশি আস্থার প্রতীক।

জামাইবাবু এই হাসিখুশি বসন্তকাল দেখে প্রবল পুলকে বজরং ভাইয়ের মন্দিরে গিয়ে ফুল দিয়ে  মেয়েকে বলেন, বজরং দল থেকে এমপি হয়ে যাও মা। মেয়ে অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে মাকে বলে, মা বাবার তো বুড়ো বয়সে ভীমরতি হলো।

শুক্লাদি বলেন, একদা বামপন্থী মানেই বুড়ো বয়সে ঘামপন্থী হয়ে ঘোরার আশংকা। কি বাংলাদেশ, কি ভারত; বামেরাই ইসলামপন্থা ও হিন্দুত্ববাদের তাত্ত্বিকগুরু হয়ে পড়ে।

বাংলাদেশের ঢাকায় গিয়ে পানসুপোরি চিবিয়ে জামাইবাবু একটা চেয়ারে বসেন। বাকি বৃদ্ধরা দাঁড়িয়ে। সেই ছবি নিয়ে ফেসবুকে বিতর্ক হলে, থামেন ভাই বলেন, উনার হাঁটুতে ব্যথা; উনি তো এরশাদের মতো আর্মির লোক নন কিংবা মুহিতের মত সিভিল এডমিনিস্ট্রেশানের লোক নন। ফিজিক্যাল ফিটনেস ট্রেনিং করা লোক নন। সিভিলিয়ানের হাঁটুতে ব্যথা; গিটে গিটে ব্যথা তো হবেই।

জামাইবাবু দিল্লিতে ফিরলে দিদি মুখ ঝামটা দিয়ে বলেন, হুঁশ হারিয়েছো নাকি; আমার বাপের বাড়ির লোকেরা নিপাট ভদ্রলোক বলে তুমি এমন একটা ছবি তুলবে; গান্ধীজীর মতো দু'পাশে দুটি উর্বশী নিয়ে দাঁড়িয়ে ছবি তুললেও তো পারতে।

: সে কি ইচ্ছা হয়নি শুক্লা; কিন্তু তোমার ভয়েই সে সাহস করিনি।

২০০ পঠিত ... ১৮:১০, আগস্ট ২৪, ২০২৪

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top