রাবেয়া অত্যন্ত আবেগ প্রবণ হয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে দেয়, ইনশাআল্লাহ একদিন আফগানিস্তানের মতো বাংলাদেশ ও পাকিস্তান স্বাধীন হবে।
অমনি সেই স্ক্রিনশটটা নিয়ে ললিতা হোয়াটস অ্যাপে গিয়ে রাউল রাহার ইনবক্সে দিয়ে আসে। গালে সুপোরি পুরে রাহা ভসভস করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়, নতুন জাহান নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে।
গদি মিডিয়ার ময়ূখ রাহার স্ট্যাটাস দেখেই স্টুডিওর মধ্যে দৌড়াদৌড়ি শুরু করে, ঐ যে বলেছিলাম, আগেই বলেছিলাম, বামিয়ানের বুদ্ধ মূর্তির মতো ওরা মুজিবের মূর্তি ভেঙ্গেছে। জুম লিংকে পদ্মশ্রী প্রাচীরকে যুক্ত করতেই সে কেঁদে ফেলে, আমি একটি সেকুলার তোরাবোরা থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে কথা বলছি।
রাবেয়া ইউটিউবে সাদা পাগড়ি পরা এক পোস্ট ট্রুথ ফকির মজনু শাহর বক্তব্য শোনে; তিনি মিহি স্বরে চেঁচাচ্ছেন, ইনসাফের জন্য যে বিপ্লব; সেইখানে প্রতিবিপ্লবের সিলসিলা জারি আছে। সবাই সজাগ থাকুন। রাতে ঘুমানোর কোনো দরকার নাই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি বিভাগের কোরআন পাঠের কনসার্টে বাধা দিয়েছিল এমন এক রামমন্দির প্রগতিশীলকে শিক্ষা দিতে হাজির হয়ে যায় আল আকসা মসজিদ ইনকিলাবিরা। কোরআন পাঠ করে প্রতিবাদ জানায় স্বৈরাচারের দোসরটির পদত্যাগ করার মুহূর্তে।
আনন্দে গলা শুকিয়ে যায় রাবেয়ার, মনে হয় হাতের কাছে একটু পামির কোলা থাকলে খাইতাম। রাবেয়ার হাবি জিজ্ঞেস করে, কী বেগম এত খুশ মেজাজ যে!
রাবেয়ার হাবি স্বৈরাচারের শোকরানা মেহেফিল করে আদম ব্যবসার এজেন্সি নিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের যে ওয়ার্ক ভিসার দাম ১৪০০ টাকা; তা সে ৬ লক্ষ টাকায় বিক্রি করে। ইস্তাম্বুলে একটা সেকেন্ড হোম কেনা হয়ে গেছে তার।
রাবেয়া প্রোপিক লাল করে বিপ্লবী হয়ে যাওয়ায় হাবির জন্য বেশ সুবিধা হয়েছে; তাকে কেউ সন্দেহ করছে না। আর সে চিকন বুদ্ধির লোক; শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাবার সঙ্গে সঙ্গে সে কয়েক ক্রেট পামির কোলা নিয়ে চলে যায় রাজপথের ছাত্রছাত্রীদের পরিবেশন করতে।
এক ছেলে হেসে বলেছে, ভালো হয়েছে আঙ্কেল; বিরিয়ানি আনেন নাই; বিরিয়ানি খাইলেই বিপ্লব ব্যর্থ হয়।
খানিকটা বিষম খেয়ে রাবেয়ার হাবি তাড়াতাড়ি পামির কোলা বিতরণ করে বাসায় ফিরে এসে ঘাপটি মেরে থাকে। রাবেয়া তখন ফেসবুকে ফ্যানফেয়ার করছে। ফেসবুকে ললিতা যেভাবে লোকজনকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপক্ষ শক্তি বলে তকমা দিত; ঠিক সেইভাবে রাবেয়া লোকজনকে নাস্তিক বলে তকমা দেবার জন্য উশখুশ করতে থাকে।
অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিঙের ভাবিদের সবাইকে ইফতারের দাওয়াত দেয়। অনেকেই শোকরানা রোজা করছে। ভাবিরা সবাই হালাল নেইলপলিশ, আই মেক আপ করে আঁটোসাটো পার্টি কামিজের ওপর প্রায় হীরকখচিত হিজাব পরে আসে। কেউ কেউ জ্বিন বুটিকের প্রায় ব্রাইডাল ড্রেস পরে এসেছে।
রাবেয়া কথাটা পাড়ে, ভাবিরা আপনাগো নিশ্চয়ই মনে আছে; আমরা মাথা কাভার করি বলে ললিতা, আনাহিতা, অপরাজিতারা আমগো কত অপমান করছে। লিফটে দেখা হইলে সেলিব্রেটি মিথিলা শবনম আপার মতো ঠোঁট ব্যাঁকা কইরা হাসত।
কে একজন বলে, রাখেন গো ভাবি; অরা তো চাকরি বাকরি হারাইয়া শরম পাইছে; আল্লা তাদের বিচার করছে।
অন্যেরাও একই সুরে কথা বলে, আমরা ফেসবুকে অন্য মেয়েদের নিয়া কথা কইলে সেইটা নিয়া মজা করে বেত্তমিজ পুরুষগুলি। আমগো একত্রে থাকাই ভালো হবে।
রাবেয়ার ঠিক পছন্দ হয় না কথাগুলো। ওর নিজের মেয়েও আজকাল কথা শুনতে চায় না। সেদিন ওকে ওড়নাটা ভালো করে নিতে বললে সে ধমক দিয়ে বলে, ইটস মাই ফ্রিডম অব চয়েস। আমাদের জেনারেশানে কেউ কারও পার্সোনাল চয়েস নিয়ে কথা বলে না। ঐসব কুঁচকুঁচানি তোমাদের জেনারেশানের।
রাবেয়া ফেসবুকে জাফর ইকবালের বই পোড়ানোর ইভেন্ট দেখে পুলকিত হয়। এই ইভেন্ট দেখেই কলকাতার পরিতোষ ব্যানার্জি ভাটের আলাপ জুড়ে দেয়, এরা সাক্ষাত বখতিয়ার খলজি যে।
কলকাতার তরুণেরা তাকে ঘষে দিয়ে যায়, ইতিহাসটা ভালো করে পড়ুন দাদা। কী সব হোয়াটস অ্যাপ ইউনিভার্সিটির জ্ঞান ঝাড়ছেন।
ভারতের রামমন্দির ভক্ত আর বাংলাদেশের আল আকসা মসজিদ ভক্ত মেলায় হারিয়ে যাওয়া জমজ ভাইয়ের মতো একে অপরের বিদ্বেষমূলক ইভেন্টের মাধ্যমে; বিদ্বেষের হোলসেলার হয়ে বেঁচে থাকে।
কে একজন মন্তব্য করে, তসলিমার দুর্বল সাহিত্যকে নিষিদ্ধ করে তাকে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলার মতো করে জাফর ইকবালের লঘু সাহিত্যকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলবে এরা। এরা আছে বলেই আওয়ামী লীগের বিভাজন করো ও দেশডাকাতি করো পলিসি এত সফল হয়েছে। আরে বাবা বাংলাদেশ হিন্দু ভারতও হবে না। মুসলিম আফগানিস্তানও হবে না। জুলাই বিপ্লবের পর বাংলাদেশ নিজেই এখন ভারত-পাকিস্তানের অনুপ্রেরণার প্রতীক।
এই মন্তব্য দেখে রাগের ইমো দেয় রাবেয়া ও ললিতা। এই প্রথম তারা কোনো একটি মন্তব্যে একসঙ্গে রেগে গেছে। রাবেয়া একটা বাটিতে করে ফিরনি নিয়ে গিয়ে ললিতার অ্যাপার্টমেন্টে নক করে। ললিতা এলোকেশী সর্বনাশী হয়ে কার্পেটের ওপর বসে। রাবেয়া তাকে নিজ হাতে এক গ্লাস পানি এনে খাওয়ায়। কিচেন থেকে অলিভ অয়েল এনে ললিতার চুলে দিয়ে দেয়। ললিতা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
আফগানিস্তানের আশাটা রেখো নাগো রাবেয়া; দেখলে না আমার ভারতের আশাটা কেমন তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল!
দুজনের চোখে মুখে তখন একই আশাভঙ্গের বেদনা; নদীভাঙ্গনের মানুষের মতো বুকটা খাঁ খাঁ করে।
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন