শিল্প সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতায় আওয়ামীলীগ ছিল আমাদের মেডিসি ফ্যামিলি। সবার অগোচরেই দলটি যে রেনেসাঁ বা নবজাগরণ তৈরি করেছে— বিশেষ করে মিম (meme) শিল্প এবং সাহিত্যে, তা এখনও পর্যাপ্ত লাইমলাইট পায়নি।
এই দলটির বদৌলতে আমরা কী পেয়েছিলাম?
আমরা পেয়েছিলাম বেবি বুমার, Generation X, Y, Z এবং জেন Alpha-র ফ্যাশন আইকন ওবায়দুল কাদেরের মতো এক মহান ব্যক্তিত্বকে— যিনি একাই আমাদের উপহার দিয়েছেন শত শত মিম টেমপ্লেট। সারাজীবন ধরে অন্ন বস্ত্রের সংস্থান করেছেন অসংখ্য ফটোগ্রাফার এবং টেইলরের। তার জন্য বাগানে ফুটেছে অসংখ্য ফুল এবং সজীব হয়েছে গাছের পাতা। তাকে ঘিরে সাহিত্যজগতে তৈরি হয়েছে নানা কবিতা, ছড়া, এবং গল্প। তার গলার স্বর নকল করে কেউ কেউ সোশ্যাল মিডিয়াতে পেয়েছেন এক্সট্রা খাতিরও।
তিনি যে শুধু একজন মন্ত্রীই নন, একজন অভিভাবকও এর প্রমাণ দিয়েছেন তিনি মাসুদকে। অন্দরে-বাহিরে তিনি বারবার ভালো হয়ে যেতে বলেছেন তাকে। সকল প্রচেষ্টা মাঠে মারা যাবার পর খেদের সুরে বলেছেন, তুমি কি কখনও ভালো হবে না মাসুদ?
আওয়ামীলীগকে কত সহস্রবার নিজেদের কন্টেন্ট হিসেবে ব্যবহার করে নিজেদের পেট ভরেছে র্যান্টেজেস, earki-সহ নাম না জানা অসংখ্য মিমপেজ। অকৃতজ্ঞতার চরম উদাহরণ হিসেবে তারা এখনও সেটাই করে যাচ্ছেন। এরাই হয়ত সুনীলের সেই বোষ্টমী, নাদের আলী কিংবা বরুণা— যারা কখনও কথা রাখেনি।
আমাদের Elegy written in a country churchyard, Lament for Adonais কিংবা Lycidus উপহার দিয়েছেন বাংলার কবি নির্মলেন্দু গুণ। তিনিই বাংলার একচ্ছত্র থমাস গ্রে, বিয়ন এবং মিল্টন। এক সাক্ষাৎকারে কবি নির্মলেন্দু গুণ বলেছেন, মাঝে মাঝে মনে হয়, আমার কবি জীবনের জন্ম বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতা লেখার জন্যই...
বঙ্গবন্ধু না থাকলে এই স্বাপ্নিক ধ্যানমগ্ন কবির কবি হয়ে ওঠা হতো না। একজন কবি যার কারণে কবি হয়ে ওঠেন, একজন লেখক যাকে আশ্রয় করে লেখা শুরু করেন— তার প্রতি আজীবন ঋণ গ্রস্ততা এক কোটি বছর চেষ্টা করেও শোধ করা যায় না। সেই ঋণ শোধ করার প্রচেষ্টা হিসেবেই হয়ত গুণ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লিখেছেন, সর্বাধিক সংখ্যক কবিতা এবং ভূষিত হয়েছেন, পোয়েট অব বঙ্গবন্ধু খেতাবে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হোস্টিং, ক্যামিওসহ হাজির হয়েছেন ৩০টির মতো সিনেমা এবং টিভি শোতে। সেই তালিকায় আছে The Apprentice, Home Alone 2: Lost in New York, Zoolander, The Little Rascals এর মতো সিনেমা। যারা সিনেমাগুলো দেখেছেন তারা হয়ত মনের অজান্তেই এড়িয়ে গেছেন ট্রাম্পের উপস্থিতি। এতগুলো সিনেমা, টিভি শোতে উপস্থিত হয়ে ট্রাম্প যে জনপ্রিয়তা পাননি— সেই জনপ্রিয়তা একটি বিজ্ঞাপনে গান গেয়ে এবং কোমড় দুলিয়েই পেয়েছেন সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী পলক। তার সরল হাসি, নাচের ভঙ্গিমা এবং, বন্ধু তোর বারাত নিয়া আমি যাব—কে প্রায়ই দেখা যায় বিভিন্ন নিউজফিডে মানুষ ভালোবেসে শেয়ার করছেন। সেখানে সাপের বিন বাজানোর ভঙ্গি করে মসলা হয়ে যোগ দিয়েছেন একই দলের আরেক বিখ্যাত এবং জনপ্রিয় ব্যক্তি মুরাদ হাসান। এই মানিকজোড়ের কল্যাণে গভীর রাতে আকাশের দিকে উদাস হয়ে তাকিয়ে গুণগুণ করে গেয়ে উঠি, বন্ধু তোরা বারাত দিয়া...
আমরা পেয়েছি আমাদের ফেলোমেনা কানক ফেরদৌস, রিয়াজদের— যারা অভিনেতা কম, কমেডিয়ান বেশি। একই সাথে তাদের কথাবার্তা, কাজকর্ম সময়ে অসময়ে হয়েছে আমাদের সুখের খোরাক। চট্টগ্রামে রাস্তায় গেলে আহ্লাদিত হয়ে মনে পড়ে ইউরোপের রাস্তার কথা। তারা না থাকলে এই সুখ আমরা কোথায় পেতাম?
আমরা পেয়েছি অভিনয়শিল্পীদের জননী শেখ হাসিনা— First of Her Name, Queen of BAL, M.u.r.d.e.r.e.r. of Her People, Mother of Aynaghor, Protector of Autocracy কে।
শুধু একটি দেশের পরিচালিকাই নন, রন্ধনজগৎকেও তিনি করে গেছেন আরও সমৃদ্ধ। তার বদৌলতেই অভিনয়শিল্পীদের স্ট্যান্ডার্ড সেট হয়েছে আরও উঁচুতে। তিনি আমাদের নিজস্ব মেরিল স্ট্রিপ।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন ৫ আগস্ট। অথচ আগামী ৫০ বছর এই আন্দোলন নিয়ে লেখা হবে অসংখ্য গল্প, কবিতা, উপন্যাস। নির্মাণ হবে সিনেমা, টিভি সিরিজ, এমনকি ভিডিও গেমও। তৈরি হবে স্মৃতিস্তম্ভ, মিউজিয়াম, গ্রাফিতি। ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে আমাদের নাম।
এই দলটি যেন তেন কোনো দল নয়, এ যেন রবি ঠাকুরের নতুন বৌঠান— যে মরিয়া প্রমাণ করিল সে মরে নাই!
পাঠকের মন্তব্য
ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে
লগইন