যেভাবে ইউনূসের সংগে ঘনিষ্ঠতা প্রমাণ করবেন

৬৯৪ পঠিত ... ১৮:৫৪, আগস্ট ০৭, ২০২৪

1

হাসিনা যুগের অবসান ঘটেছে। ইউনূস যুগের সূচনা হতে যাচ্ছে। কাজেই অতি দ্রুত আপনাকে প্রমাণ করতে হবে ইউনূসের সঙ্গে আপনার পূর্ব পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা। এখানে কতগুলো মডেল পোস্ট ড্রাফট করা হলো, যা থেকে পছন্দের গল্পটি ফেসবুকে পোস্ট করে; আপনিও হয়ে পড়তে পারেন ক্ষমতাবান।

প্রথম গল্প: জোবরা গ্রামে এক ভদ্রলোককে দেখেছিলাম রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করতেন। এ একেবারেই নতুন ধরনের ব্যাপার। কোন রকম গ্যারান্টি না রেখে ঋণ প্রদান। আমি ভেবেছিলাম, তাই কি হয়! গ্রামের মহিলারা ঋণের টাকা খেয়ে ফেলবে; ঋণ শোধ তো দূরে থাক। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে রহিমার মা, আমেনার খালা, ফাতেমার ফুপু কেউ গরু পুষে, কেউ মুড়ি ভেজে, কেউ বা ছাগল চরিয়ে কুঁড়েঘরের জায়গায় টিনের ঘর তুলে ফেলল। বদলে গেল জোবরা গ্রাম; দেখে মনে হতে লাগলো এ বুঝি সুইটজারল্যান্ডের গ্রাম। আমি একদিন ভয়ে ভয়ে ঐ ঋণদাতা ভদ্রলোকের কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির শিক্ষক। নিজের পকেটের পয়সা খরচ করে তিনি ক্ষুদ্র ঋণ গবেষণা করছেন। আমি তাকে বললাম, স্যার আমি কি আপনার পা ছুঁয়ে সালাম করতে পারি? উনি হেসে বললেন, পায়ে কেন বুকে এসো।

দ্বিতীয় গল্প: আমি সিদ্ধান্ত নিলাম বিসিএস পরীক্ষা দেব না। ডেভেলপমেন্ট সেক্টরে কাজ করবো। একবার ভয়ে ভয়ে মিরপুরে গ্রামীণ ব্যাংক কার্যালয়ে গিয়ে ড. ইউনূসের সঙ্গে দেখা করতে চাইলাম। এক ভদ্রলোক বললেন, উনার অফিসের কোনো দরজা রাখেননি উনি, যান দেখা করুন। আমি ভয়ে ভয়ে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ালাম উনার সামনে। উনি বললেন, দাঁড়িয়ে কেন বোসো; কী চাকরি চাই? আমি তো ইউনিভার্সিটির চাকরি ছেড়ে নিজে কিছু করেছি। তরুণ ছেলে চাকরি খুঁজবে কেন? নিজে কিছু কর। মানুষের মাঝে যে অসীম ক্ষমতা রয়েছে; তা সে নিজেই জানে না। স্যারের দোয়া নিয়ে ফিরতেই আমার জীবন বদলে গেল। নিজেই গড়ে তুললাম বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, চলো সাইকেলে চড়ি। আর আমাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। কখনো সাইকেলে চড়তে হয়নি। খোদা আমাকে গাড়ি দিয়েছেন। কিন্তু এবার ভাবছি আর গাড়ি নয়, এবার পায়ে হাঁটবো, ইউনূস স্যারের পিছে পিছে। এই দেশকে আমরা পৌঁছে দেবো সুইটজারল্যান্ডে।

তৃতীয় গল্প: তখন প্রথম আলোতে কনট্রিবিউটরের কাজ করি। হঠাৎ খবর এলো অধ্যাপক ইউনূস নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। আমার বুকের ছাতি ছাপ্পান্ন ইঞ্চি হয়ে গেলো। এয়ারপোর্টে দৌড়ালাম স্যারকে ফুল দিয়ে বরণ করতে। ভীড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে ফুল ছিটাতে ছিটাতে আনন্দে উড়ছিলাম যেন। এই মানুষটি বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন। তিনি এতো মানুষের মধ্যে থেকে আমাকে ঠিকই চিনতে পেরে বললেন, এই ছেলে তুমি আমাকে নিয়ে ফিচার লিখেছিলে না, সফল যারা কেমন তারা!  আমার অফিসেও তো এসেছিলে। এই নোবেল পুরস্কারের ভাগীদার তুমিও। আমার মাথা বনবন করে ঘুরছিলো। এতো মানুষের মধ্যে তিনি আমাকে মনে রেখেছিলেন। জিনিয়াসেরা এমনই হন; তারা একবার কারো সঙ্গে দেখা হলে আর ভোলেন না। আজ আমার কী যে আনন্দ! আমি জানি, ইউনূসের হাত ধরে পথ হারাবে না বাংলাদেশ।

চতুর্থ গল্প: ইউনূসের মতো গুণী মানুষকে টুপ করে পদ্মা সেতু থেকে ফেলে দিতে চেয়েছিলেন মুখরা বুবু। আঁচলের তলায় দেশ ডাকাতির দরবেশ ও এস আলম পুষে, বেনজির ও আজিজদের দুর্নীতির লাইসেন্স দিয়ে চোর দমন কমিশনকে লেলিয়ে দিয়েছিলেন তিনি আলোর মানুষ ইউনূসের বিরুদ্ধে। এই মানুষটিকে এত অসম্মান করেছে সহমত ভাইয়েরা যে কী বলব। আমি মন খারাপ নিয়ে দেশ ছেড়েছিলাম। ব্রাসেলস এয়ারপোর্টে নেমে একটা ট্যাক্সি খুঁজছিলাম। ট্যাক্সিতে উঠতেই চালক জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কোন দেশ থেকে এসেছ! আমি বললাম বাংলাদেশ; তারপর বোঝাতে চেষ্টা করছিলাম দেশটা কোথায়! চালক আমাকে থামিয়ে বললেন, ও তুমি ইউনূসের দেশের লোক। যাও তোমার কাছ থেকে ট্যাক্সি ভাড়াই নেব না। চোখ আমার ছল ছল করছিল। কানের কাছে বাজছিল, আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।  

পঞ্চম গল্প: আমি তখন অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্স করছি। সান্টিয়াগোর মেয়ে নাটালিকে ভালো লেগে গেলো। কিন্তু কিছুতেই পটাতে পারছিলাম না ওকে। এরমধ্যে একদিন ব্যাংকার্স টু দ্য পুওর ড. ইউনূস আমাদের ক্যাম্পাসে লেকচার দিতে এলেন। আমি নাটালিকে অনুরোধ করলাম উনার স্পিচ শুনতে যেতে। একঘণ্টা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনলাম। উনি বললেন, মানুষ তো মানি মেকিং মেশিন নয়। সে রক্তমাংসের মানুষ। সে মুনাফালোভী ব্যবসা কেন করবে! সে করবে সামাজিক ব্যবসা। তোমাদের মতো তরুণরাই পারে এই পৃথিবীতে জিরো পভার্টি, জিরো ভায়োলেন্স, জিরো এমিশনে পৌঁছে দিতে। তোমরাই গড়ে তুলতে পার স্বপ্নের পৃথিবী। লেকচার শেষে নাটালিকে নিয়ে উনার সঙ্গে দেখা করতে গেলাম। উনি অনেক স্নেহ করলেন। তারপর নাটালিকে বললেন, তুমি তোমার বন্ধুর সঙ্গে বাংলাদেশ ঘুরে যেয়ো; তোমাকে শক্তি দই খাওয়াবো। কনসেপ্টটা হচ্ছে দৈ যে প্যাকেটে রাখা, ওটাও খেয়ে ফেলতে হয়, তাতে পুষ্টি মেলে। নাটালি এতো মুগ্ধ হল যে ফেরার পথে আমার হাত ধরে রইল। ওর অ্যাপার্টমেন্টের নীচে এসে ওকে বিদায় জানাতেই বলল, কী ওপরে আসবে না! একটু কফি খেয়ে যাও প্লিজ।

 

৬৯৪ পঠিত ... ১৮:৫৪, আগস্ট ০৭, ২০২৪

আরও

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ

সাক্ষাৎকারকি


Top