সামান্য মনুষ্য নহ, নহ শুধু গৃহিণীর ভ্রাতা, হে শ্যালক, হে স্বভাব-শালা!

১১০৭ পঠিত ... ১৮:১৯, আগস্ট ০৬, ২০১৯

 

সামান্য মনুষ্য নহ, নহ শুধু গৃহিণীর ভ্রাতা
হে শ্যালক, হে স্বভাব-শালা।
বঙ্গদেশে বহু বেশ বহু বার দেখেছি তোমারে।
রচিয়াছি তব জয়মালা।

বহুবার করে গেছ অকিঞ্চিন-চিত্ত পরশন
সভামঞ্চে নেতৃবেশে, হে শ্যালক, সৌম্যদরশন,
প্রাণের আবেগে যবে বক্তৃতা করেছ বরষণ
সে বাণী জ্বালা
বহু করতালি যোগে প্রাণ মন করি ধরষণ
কর্ণ দুটি করিয়াছে কালা!
হে শ্যালক, হে স্বদেশী শালা।

কখনও বা শ্মশ্রূ-গুম্ফে সাজিয়া ও চাঁদবদন,
জটা-মৌলি গুরু-বেশে অঙ্গে দেছ গৈরিক বসন,
(নির্ভেক নির্ভীক কভু!) সানুগ্রহে ভক্তের সদন
করিতেছ আলা
আত্মার অঙ্গুষ্ঠ রূপ, গীতা, গান, বিজ্ঞান-বচন,
বিতরিছ উপদেশ-মালা,
হে শ্যালক, হে ধার্মিক শালা।

কুর্দনে, নর্তনে লাস্যে লক্ষজনে লাগাইয়া তাক
কখনও সিনেমা-পটে, হে রসিক, সভঙ্গী সবাক
গুণ্ডা-বেশে, কবি-বেশ, কাঁপাইছে সেই চোখ নাক
একই ছাঁচে ঢালা!
পিতৃধন ধ্বংস করি ছাত্র ছাত্রী দেখিছে অবাক
নাবালকে ভাঙ্গিতেছে তালা,
হে শ্যালক, হে আর্টিস্টের শালা।

উৎসর্গিয়া আপনারে কখনও বা শিল্প-পাদ-মূলে
বৃষোৎসর্গ শ্রাদ্ধ তার সমাপিছ সর্ব-দ্বিধা ভুলে
সার্থক ধরেছ তুলি! ক্রমাগত রং গুলে গুলে
হে শিল্প-দুলালা,
কণ্ডূয়ন-উন্মাদনা আন্দোলিয়া তুলিতে অঙ্গুলে
আঁকিছ নিতম্ব-স্তন-মালা!
হে শ্যালক, হে পটুয়া শালা। 

নির্লিপ্ত উদো-র পিণ্ড গিলাইয়া সন্ত্রস্ত বুধোরে
সাহিত্য রচনা করি শুনাও তো ক্ষেন্তি বা ভূতোরে,
কোটর-প্রবিষ্ট আঁখি, গামছা-বাঁধা ক্ষুধার্ত উদরে
রসনায় লালা!
কন্টিনেন্টালি ঢঙে ডাক দাও কামারে, ছুতোরে,
বক্ষে চাপি ধর বস্তি-বালা!
হে শ্যালক, হে বাস্তব শালা।

কখনও উকীল-বেশ! (মূর্খ জনে কহিবে বঞ্চক!)
অনর্থ-কে অর্থ-যোগে আনান শর্তে করিছ সার্থক!
কখনও দালাল তুমি, কখনও বা মহাচিকিৎসক
কভু বাড়ি-বালা,
কংগ্রেসে, মন্দিরে মঠে সর্ব ঘটে হে পরম বক,
নানা পুষ্পে ভরিতেছ ডালা।
হে শ্যালক, হে শিকারী শালা।

অনবদ্য তব কণ্ঠ কভু শুনি বিচিত্র ভঙ্গীতে
বেতারে, বৈঠকে, মাঠে, সভাস্থলে, রেকর্ড-সঙ্গীত;
কর্ণের পটহ ভেদি ধৈর্যসীমা চাহে যে লঙ্ঘিতে
প্রাণ ঝালাপালা।
শ্মশানে, মশানে, রণে, পরাজয়ে, বিজয়ে সন্ধিতে,
চলিয়াছে বেসুরো বেতাল!
হে শ্যালক, হে ওস্তাদ শালা।

হে মোর আসল শালা, হে প্রাকৃত, নির্জলা, নির্ঘাৎ
তোমারে বলিনি কিছু ( ভাষা খুঁজে পাইনি অর্থাৎ)
ভাবিলেই তব কথা শিরে রক্ত চড়ে অকস্মাৎ
অঙ্গে ধরে জ্বালা,
জুতা-হস্তে ছুটে যাই। - কাছে গেলে শিথিল সে হাত,
মুখে তব মধু হাসি ঢালা!
হে শ্যালক, হে আদৎ শালা।

দেশের দশের অর্থ শত হস্তে করিয়া লুণ্ঠন,
ভব্যতারে নগ্ন করি সভ্যতার খুলিয়া গুন্ঠন,
কভু হাস, কভু কাঁদ, কভু তব মৃদুল কুন্থন
একই সুরে ঢালা।
‘’অর্থ চাই, অর্ঘ্য চাই, বুদ্ধি চাই ওহে জনগণ
তৃপ্তি নাই, আনো ছালা ছালা।‘
হে শ্যালক, হে কৌশলী শালা।

 

অপরিচয়ের মাঝে থাকো তুমি অ-শ্যালক বেশে
ঘনিষ্ঠ হলেই তব শালা-মূর্তি বাহিরায় এসে।
আত্ম বন্ধু পরিজন কাছে গিয়ে দেখি হায় শেষে
শালা-সব শালা!
দিন যায় ক্রমে দেখি শালা-সাগরেতে এসে মেশে
দুনিয়ার যত নদী নালা-
হে শ্যালক, হে অনন্ত শালা।

 

[শনিবারে চিঠি। চৈত্র ১৩৪১]

১১০৭ পঠিত ... ১৮:১৯, আগস্ট ০৬, ২০১৯
 

পাঠকের মন্তব্য

 

ইহাতে মন্তব্য প্রদান বন্ধ রয়েছে

আপনার পরিচয় গোপন রাখতে
আমি নীতিমালা মেনে মন্তব্য করছি।

আইডিয়া

গল্প

রম্য

সঙবাদ


Top