জীবন থেকে প্রতিনিয়ত নতুনত্ব আহরণ করার সাধ মানুষের চিরায়ত বাসনা। তবে জীবনকে নতুনভাবে দেখতে হলে করতে হবে নতুন কিছু। এই রিস্ক-ই বা ক'জন নিতে চান? তবে যদি রিস্কটেকারদের তালিকা করা হয়, তবে প্রথম সারিতেই থাকবেন উদ্যোক্তারা।
আজ আমরা জানবো এক ভিন্নরকম উদ্যোক্তার গল্প যিনি সার্জন থেকে বেমালুম বনে গেছেন সফল মালা বিক্রেতা!
বগুড়া জেলার বিখ্যাত ডা. আনোয়ারুল আজিম ফাহাদ (৩৬) নামের একজন বিশিষ্ট ল্যাপারোস্কোপিক এবং কোলোরেক্টাল সার্জনের সফলতার গল্প এটি। লন্ডন হতে অনেক বড় বড় ডিগ্রীও আছে তার। ডা. ফাহাদ তার সফলতার পেছনের গল্প বলতে যেয়ে জানান, ‘প্রায় ১২ বছর আগের কথা৷ তখন বগুড়া মেডিকেল কলেজে ইন্টার্নশিপ করছি। একদিন রাতে ওটিতে (অপারেশন থিয়েটার) অ্যাসিস্ট করছিলাম বড় স্যারের সাথে। সেটা ছিলো গলস্টোন (পিত্তথলির পাথর) রিমুভ্যাল। বয়স্ক রোগীর গল ব্লাডার থেকে ভিন্ন ভিন্ন রঙের অসংখ্য পাথর বের হলো। সাধারণত এসব পাথরের রঙের মধ্যে খুব বেশি ভিন্নতা থাকে না। হলুদ, বাদামী, কালো কিংবা এই ধরনের কোনো রঙই থাকে। তবে ওই রোগীর এতো রঙের পাথর দেখে প্রচন্ড বিস্মিত হলাম, একই সাথে অদ্ভুত এক ভালো লাগা কাজ করলো। জানিনা সেসব পাথরের মধ্যে কী ছিলো, শুধু মনে পড়ে এর পর কয়েকদিন শুধু চোখ বন্ধ করলেই পাথরগুলোকে দেখেছি। একদিন স্বপ্ন দেখলাম একা সাগড়তীরে বসে আছি, বড় বড় ঢেউয়ের ধাক্কা আসছে, নরম বালিতে ঢেকে যাচ্ছে পায়ের পাতা, পরক্ষণেই আবার নিজ দায়িত্বে পরিষ্কার করে দিচ্ছে ঢেউ মালা আর আমি? আনমনে মালা গাঁথছি। সেই ওটিতে দেখা গলস্টোনের মালা! সাধারণত শোয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি নাক ডেকে ঘুমাই, স্বপ্ন টপ্ন দেখি না। সম্ভবত সেই পিত্তথলির পাথর আমাকে এতটাই প্রভাবিত করেছে যে স্বপ্নেও তার আগমন ঘটেছে। আমি ব্যাপারটা ভুলেই গিয়েছিলাম প্রায়...তবে কিছুদিন আগে MRCS শেষ করে ফেরার পথে একই স্বপ্ন আমি আবার দেখেছি...তখন থেকেই ব্যাপারটা নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবা শুরু করি...’
এতটুকু বলে ডাক্তার ফাহাদ আমাদের তার চেম্বার ঘুরে ঘুরে দেখালেন। সেখানে দুটি অংশ। একটি কক্ষে রাতে অপারেশন করে কিডনীর পাথর কিংবা পিত্তথলির পাথর বের করেন। আর দিনে তা দিয়ে মালা বানান। এ যেন এক অদ্ভুত কম্বিনেশন! বর্তমানে চেম্বার ছেড়ে তিনি একটি ফ্যাক্টরি দেবার চিন্তা করছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
'মানুষ কী বলবে' এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘দেখুন, চেম্বার থেকে আমার দিনে ৩০ হাজার টাকা আয় হলে মালা থেকে হয় ৬০ হাজার টাকা। তাহলে কেনো নয়? তার গলস্টোনের মালার খ্যাতি এখন দেশ ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে বিদেশেও। আয়ারল্যান্ডে ডায়মন্ড, রুবিকে টেক্কা দিয়ে উপরে উঠছে এসব মালা’
এই মুহুর্তে এই পিত্তথলির পাথর দিয়ে মালা, চুড়ি, কানের দুল, ব্রেসলেট তৈরি করা হলেও সামনে এগুলো দিয়ে জামা, শাড়ি কিংবা ওড়নার ডিজাইন করার প্ল্যানও আছে তার হাতে। তার এই সাফল্য দেখে নড়েচড়ে উঠেছেন অনেক ডাক্তারও। ডা. ফাহাদ আরও জানান, তার বাল্যকালের রুমমেট ডা. আরিফ, ডা. সাকিব এবং ডা. নাহিয়ানও খুব শীঘ্রই তার সাথে যোগ দেবেন। এ ব্যাপারে কে. এম. আরিফ বলেন, ‘আমার শ্বশুরবাড়ি থেকে একটু প্যারা আছে। যেহেতু আমি ঘরজামাই, সার্জন থেকে মালা ব্যবসায়ী তারা ব্যাপারটা সহজভাবে নাও নিতে পারে। তবে এতে আমার কিছু করার নাই। ওয়াল্টার হোয়াইটের মতো ডাবল টাইমিং করবো…'