[গত ১৬ মার্চ সৌদি প্রবাসী রুবিনা সন্তানের হার্নিয়া অপারেশনের উদ্দেশ্যে দেশে আসেন। সঙ্গে ছিল সেই অপারেশনের জন্য প্রয়োজনীয় টাকা। বিমানবন্দরের ১ নম্বর ফটকের কাছে আসতেই তাঁর সঙ্গে প্রতারক তাজুল ইসলামের দেখা হয়। তাজুল ইসলাম তাকে বলেন, তার একমাত্র বোনকে তিনি এইমাত্র দুবাই পাঠিয়ে দিলেন এবং এরপর রুবিনার গন্তব্যস্থল জেনে নিয়ে তিনিও সেদিকে যাচ্ছেন বলে তার সহযাত্রী হন। রুবিনাকে বোন ডেকে এবং নানারকম আলাপচারিতার মাধ্যমে তাজুল তার বিশ্বাস অর্জন করেন। এমনকি সকাল থেকে রুবিনার কিছু খাওয়া হয়নি শুনে তাঁর ‘পাতানো ভাই’ তাজুল পাউরুটি আর পানি কিনে আনেন, রুবিনা দাম দিতে চাইলে তাজুল দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন, ‘তুমি সত্যিই আমার বোন হলে আজ এমন করে টাকা দিতে চাইতে না। আসলে পর কখনো আপন হয় না।’ রুবিনার সেই ‘পাতানো ভাই' এরপর ক্লোরোফর্ম প্রয়োগ করে তাকে অজ্ঞান করেন এবং টাকা-মোবাইল সবকিছু নিয়ে পালিয়ে যান। একটু সুস্থ হয়ে রুবিনা আবার ফিরে আসে এয়ারপোর্টে। পরপর তিনদিন সে এয়ারপোর্টে গিয়ে খুঁজে পায় তাজুল ইসলামকে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে ধরে ফেলে। এরপর এয়ারপোর্ট ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের সহায়তায় তার প্রানপ্রিয় 'ভাই'-এর কাছ থেকে ফিরে পায় তার টাকা।]

ভাই সেজে তাজুলের এই অসাধারণ বাটপারি দেখে মুগ্ধ বড় ভাইদের বড় ভাই, ভাই সমাজের কিংবদন্তি, নারায়ণগঞ্জের সবার বড় ভাই শামীম ওসমান ভাই। তাজুলের কথা জানতে পেরে তিনি আবেগঘন কন্ঠে বলেন, 'এমন ভাই তো আমিও হইতে পারি নাই! ভাই রে ভাই, তাজুল ভাই দেখি আমারও বস!'

পুরো ঘটনাটিই শামীম ভাইকে করেছে বিস্মিত। বিস্ময়ে তিনি চোখ বড় বড় করে বলেন, 'আমার ধারণা ছিল ভাই চরিত্রে আমার চেয়ে ভালো অভিনয় করা সম্ভব না। আপনেরাই বলেন, মেয়র ইলেকশনের মত কেসে (অন্য কাহিনীগুলার কথা বাদ দেন) ব্যালট পেপার হাতে নিয়া এতগুলা ক্যামেরার সামনেও কী খেলাটা দিলাম! কিন্তু তাজুল মিয়ার কাহিনী শুইনা মনে হইতেছে, এইগুলা কিছু না। সে বস মানুষ। ভাই এবং অভিনেতা, দুই হিসেবেই সে আমাকে পেছনে ফেলেছে!'

তবে শামীম ওসমান কিছু ব্যাপারে নিজেকে এখনও এগিয়ে রাখছেন, 'দেখেন, তাজুল পোলাটা কী করছে, বোনের খিদা লাগছে দেখে বোনের জন্য আনছে কলা রুটি এইসব। সেইখানে আমি বোনরে দিছি নির্বাচনী প্রচারণার জন্য নতুন শাড়ী! ক্লাসটা বুঝছেন? ক্লাস অন্য জিনিস! ভাই সাইজা নিখুঁত অভিনয় করলেই হয় না, ক্লাসটাও মেইনটেইন করা লাগে!'


তবে পুরুষ সমাজের ক্রাশদের প্রতি শামীম ভাই কিঞ্চিৎ টিপন্নি কেটে বলেন, 'মেয়েগুলারে এইজন্য বলি, পোলাদের কথায় কথায় ভাই বানাইস না! নিজেও বাঁচ, পোলাগুলারেও বাঁচতে দে!'

এদিকে ভাই হিসেবে তাজুলের দুর্দান্ত অভিনয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ এফডিসি এবং বাংলাদেশ নাট্য পরিষদের সদস্যবৃন্দরা। এমন ন্যাচারাল অ্যাক্টিং বাংলাদেশে তো বটেই, বিশ্বচলচ্চিত্রেও বিরল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন খ্যাতিমান অভিনেতা বলেন, 'বলিউডের "ভাই" সালমান খান অভিনয়ে তাজুল মিয়ার আশেপাশেও নাই!' সঠিক পরিচর্যা করা হলে আগামী বছরের সেরা অভিনেতার অস্কার পুরস্কারটি তাজুলের হাত ধরেই বাংলাদেশের ঘরে আসবে বলে বিশ্বাস বায়োপিক ও নন বায়োপিক ছবির নির্মাতা, অভিনেতা ও প্রযোজকদের।


প্রতারক ভাই তাজুল ধরা পড়ায় অবশ্য উল্লাস প্রকাশ করেছে 'নিখিল বাংলা ভাইজোন সংসদ'! সংগঠনের মুখপাত্র জানান, 'এই যে মেয়েরা এত সহজেই ছেলেদের ভাই বানায় ফেলে, দেখলেন তো, ব্যাপারটা কত রিস্কি? এজন্যই এতদিন ধরে আমরা "আপন ভাই ছাড়া কাউকে ভাই ডাকবেন না" এই শ্লোগান নিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছি! মনে রাখবেন, সব ভাই ভাই না, কোনো কোনো ভাই আসলে *** ভাই!'

বক্তব্য দেয়া শেষ হলে আমাদের নারী সাংবাদিক তাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে 'থ্যাংক ইউ ভাইয়া' বলার পর অবশ্য তিনি আবেগ ধরে রাখতে না পেরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন!