৫ ঘন্টায় ফার্মগেট থেকে মিরপুর: পড়ুন ঢাকাবাসীর জ্যামের উপাখ্যান

৫৩১ পঠিত ... ১৬:৪০, মার্চ ৩১, ২০২১

‘আহারে! আহারে! জ্যামের শহর ঢাকারে’ চিরকুটের বিখ্যাত সেই গানে প্রাণের শহরের জায়গায় আসলেই জ্যামের শহর লিখতে চেয়েছিলেন কি না সেই বিষয়ে আমাদের কোন ধারণা নেই। তবে আপনি যদি ঢাকায় বসবাস করেন এতটুকু বলা যায়, আপনার প্রাণের সাথে জ্যামের একটা নিবিড় সম্পর্ক ইতোমধ্যে হয়ে গেছে। জ্যামে বসে কাটিয়ে দিয়েছেন ১ ঘন্টা, ২ ঘন্টা, পুরো একদিন কিংবা পুরো একটা জীবন। ঢাকাবাসীর সেই সব অভিজ্ঞতা জানতে চেয়ে eআরকি পেজ থেকে একটা পোস্ট দেয়া হয়েছিলো। সেই পোস্টের কমেন্টবক্সে রচিত হয়েছে শত শত জ্যামের উপাখ্যান!

jam dhaka earki-min

বন্ধুকে রাজশাহীর বাসে তুলে দিয়ে নিজে ক্যান্টনমেন্ট থেকে এলিফেন্ট রোড যাওয়ার জন্য বাসে উঠেছিলেন শাফায়েত শামিম। শাফায়েত যতক্ষণে ফার্মগেট ব্রিজ পর্যন্ত পৌঁছেন, শাফায়েতের বন্ধু ততক্ষণে ১৮৬ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে বুনপাড়ায়। এ যেন জীবন নয়, আস্ত একটা ইন্টারস্টেলার সিনেমা। 

তানভীর ফুয়াদ রুমি ফার্মগেট থেকে মিরপুর ১০ এ যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসে চড়ে ৫ ঘন্টা পরে কাজীপাড়াতেই নেমে পড়েছিলেন। এছাড়াও উত্তরা থেকে ওয়ারী ৪ ঘন্টা, প্রেসক্লাব থেকে শাহবাগ ৩ ঘন্টা, গাবতলী থেকে ওয়ারী ৭ ঘন্টা, শাহবাহ থেকে মিরপুর ৪ ঘন্টাসহ এমন শত শত অভিজ্ঞতার কথা জানান অনেকে। কেউ কেউ তো ঢাকার জ্যামকে তুলনা করেছেন কোহেকাফ নগরীর সাথে। তারা জ্যামেই ঘুমিয়ে পড়েন, ঘুম থেকে উঠে আবার জ্যাম দেখেন। এরপর আবার আবার ঘুম। জ্যাম থেকে উঠে কেউ কেউ ঘুমও দেখেন। ততক্ষণে ঘুম আর জ্যাম তালগোল পাকিয়ে যায়। 

ইমরান হোসেন নামের এক হুমায়ূন আহমেদ ভক্তের সাথে ঘটা ঘটনার সাথে হয়তো আমরা অনেকেই পরিচিত। বইমেলা থেকে ‘তোমাদের এই নগরে’ বইটি কিনে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে বাসে চড়েছিলেন তিনি। এয়ারপোর্ট তিনি পৌঁছেছেন, তবে ততক্ষণে বইটাও পড়ে শেষ করতে পেরেছেন।

জ্যামে বসে থাকার অভিজ্ঞতাকে রূপকভাবে জানিয়েছেন কেউ কেউ। কৌশিক মজুমদার শুভ জানান, তার এক আত্মীয় বিয়ে করে বউ নিয়ে ফেরার পথে জ্যামে পড়েছিলেন, সেই জ্যামেই নাকি তার বন্ধু বাবা হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। মুরগি ডিম নিয়ে বাসে উঠে জ্যামে পড়েন অরিন অনি, সেই জ্যামেই নাকি ডিম থেকে বাচ্চা ফুঁটে যায়। ফারিন নামের একজন জানান, চাকরির ইন্টারভিউ দেয়ার জন্য ক্লিনশেভ করা তার এক বন্ধুর কথা। ক্লিনশেভ করে রওনা দিয়ে ইন্টারভিউ বোর্ডে গিয়ে দেখেন খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি উঠে গেছে তার।

নাজমুল হক নেহাল নামের একজন জানান, জ্যামে কখনো বসে থাকেননি তিনি, দাঁড়িয়ে ছিলেন। তবে জ্যামে বসে সবচেয়ে বেশি আফসোস করেছেন সম্ভবত বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ভক্তরা। তামজেদ নামের একজন বাংলাদেশ বনাম ওয়েস্টইন্ডিজের খেলা দেখার জন্য উত্তরা থেকে মিরপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। তিনি মিরপুর পৌঁছাতে পৌঁছাতে বাংলাদেশ ৯ উইকেটে হেরে বসে আছে। 

জ্যাম নিয়ে প্রতিটা ঢাকাবাসীর জীবনেই নিশ্চয় এমন হাজারো উপাখ্যান পাওয়া যাবে। জ্যাম না থাকলে এইসব উপাখ্যান আমরা কোথায় পেতাম? সেজন্য বলতেই হচ্ছে, হে জ্যাম, হে জ্যামের শহর, জ্যামের মেয়র, আপনারা মহান। 

৫৩১ পঠিত ... ১৬:৪০, মার্চ ৩১, ২০২১

Top