বাংলাদেশের নির্বাচনী মডেল চুরির অভিযোগ, ফেঁসে গেছেন ট্রাম্প

৮২০ পঠিত ... ২০:০০, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০২০

আর কদিন বাদেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। দুই প্রার্থী- রিপাবলিকান দলের ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ডেমোক্র্যাটদের জো বাইডেন, এরই মধ্যে ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন। এই তোড়জোড়ের মধ্যেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ‘অনন্য’ নির্বাচনী মডেল চুরির ঘোরতর অভিযোগ উঠেছে। বিষয়টি নিয়ে দুই দেশেই তোলপাড় চলছে।

বাংলাদেশী নির্বাচনী আইডিয়া ‘মেরে দেওয়ার’ ঘটনাটি ঘটে ২ সেপ্টেম্বর। ঐদিন নর্থ ক্যারোলাইনার এক নির্বাচনী সমাবেশে ভোটারদের ২ বার করে ভোট দেওয়ার আহবান জানান ট্রাম্প! যদিও নির্বাচনী ব্যবস্থা যাচাই করার জন্য এমনটি বলেছেন ট্রাম্প, তবে তা পরোক্ষভাবে বঙ্গদেশীয় নির্বাচনী আইডিয়া টুকলিফাই করারই শামিল।

এদিকে বাংলাদেশের কয়েকটি জেলায় ট্রাম্পের নামে কপিরাইট আইনে একাধিক মামলা হয়ে গেছে। এ প্রসঙ্গে স্বনামধন্য আইনজীবী ব্যারিস্টার রুমন বলেন, 'ট্রাম্প যা করেছেন সেটা নির্লজ্জ পাইরেসি, প্লেজিয়ারিজম, বার্গলিং। আবহমানকাল থেকেই একজন ভোটারের একাধিক ভোট দেওয়ার রীতি কেবল বাংলাদেশেই আছে। সারা বিশ্বে সেটা ‘দ্যা রিডিকিউলাস বেঙ্গলি মডেল’ নামে বেশ পরিচিত। অথচ, ট্রাম্প কোন ক্রেডিট ছাড়াই নির্লজ্জভাবে সেটা টুকলিফাই করেছেন। আমরা আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছি। গরু বিক্রি করে হলেও আমরা কেস লড়বো।'

সাবেক ও বর্তমান একাধিক নির্বাচন বিশেষজ্ঞও এই বিষয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। নাম প্রকাশ করার শর্তে বর্তমান নির্বাচন কমিশনে থাকা এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেনে, 'স্টুপিডিটির একটা লিমিট আছে। ট্রাম্প যেটা করেছেন সেটা লিমিটের বাইরে। আর লিমিটের বাইরে স্টুপিডিটি করাটাও বাংলাদেশিদের ঐতিহ্য। সেটিও তিনি মেরে দিলেন!'

সাবেক এক নির্বাচন কমিশনার আক্ষেপের সুরে বলেন, 'এমনটা হবারই কথা ছিল। এক ভোটারের একাধিক, এবং কোন কোন ক্ষেত্রে যত ইচ্ছা তত ভোট দেওয়ার রীতি সব সরকারের আমলে কম-বেশি অনুসৃত হয়ে আসলেও এটির পেটেন্ট নিয়ে কোন সরকারই সিরিয়াস ছিল না। আমরা নিজেরাই নিজেদের উদ্ভাবন নিয়ে যত্নশীল না হলে, অন্যরা সুযোগ তো নিবেই। অন্য আরও অনেক কিছুর মতই হয়তো একাধিক ভোটের এই পেটেন্টও হাতছাড়া হতে যাচ্ছে!'

অন্যদিকে ট্রাম্পের এই ‘জোচ্চুরির’ বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ছাত্র সংগঠনগুলো বিক্ষোভে উন্মাতাল। করোনার কারণে ক্যাম্পাসকেন্দ্রীক আন্দোলন না হলেও অনলাইনে ভিডিও মিটিংগুলোতে চলছে জোর প্রতিবাদ- 'ট্রাম্পের জোচ্চুরি, খ্যাতা পুড়ি, খ্যাতা পুড়ি স্লোগানে মুখরিত ল্যাপটপ মোবাইলের স্ক্রিন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে জোর আলোচনা-সমালোচনা, ট্রল।

সাবেক এক ছাত্রনেতা বেশ আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়ে বলেছেন, 'প্রায় সব নির্বাচনে আমি একাই কাঁড়ি কাঁড়ি ভোট দিয়েছি। কত কত বাধা, বিপত্তি, সংগ্রামমুখর ছিল সে ভোটের দিন, সরি, রাত। রাতের অন্ধকারে সবাই যখন গভীর ঘুমে মগ্ন, তখন রাত জাগা লাল লাল চোখে, বুকের ঢিপঢিপানি নিয়ে একটা একটা করে ছাপ মেরেছি। অথচ আজ কোথাকার কোন ট্রাম্প আমাদের সেই অধিকার কেড়ে নিতে চাচ্ছে। আবার কি ফিরে আসবে সেই অন্ধকার রাতগুলো? বুকের সেই ঢিপঢিপ? একাধিক ভোটের অধিকার কেবল আমাদেরই থাকবে তো? নাকি তাতে ভাগ বসাবে কোন কুচক্রি, স্বার্থান্বেষী, ক্ষমতালোভী?' তার আবেগমাথা স্ট্যাটাসে প্রায় ২ হাজার ‘সহমত ভাই’ আর হাজার খানেক “coke pane cola asca, bi” কমেন্টের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।

এদিকে, সরকারের এক উচ্চপদস্থ মন্ত্রীর কাছে জানতে চাওয়া হলে ঈষৎ হেসে তিনি বলেন, 'আজ আমেরিকার মত উন্নত দেশ আমাদের মডেল নিয়ে কথা বলছে। এই যে আমরা আমেরিকার চেয়েও কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে আছি সেটা বর্তমান সরকারের রাত-রাত নিরলস পরিশ্রমের ফসল। অথচ, কোন কোন কুচক্রি মহল সরকারের সব অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাচ্ছে।'

বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানার জন্য eআরকির পক্ষ থেকে ট্রাম্পের মুঠোফোন নাম্বারে বারবার রিং করার পর তিনি ‘ইনবক্সে আসেন ভাই’ বলে ফোন কেটে দেন।

লেখা: শরীফ মজুমদার

৮২০ পঠিত ... ২০:০০, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০২০

Top