অবশেষে পাশের বাসার আন্টিদের হাঁসফাঁস অবস্থা থেকে মুক্তি মিলল। আজ প্রকাশিত হলো এসএসসির রেজাল্ট। সাধারণত মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে এসএসসির রেজাল্ট প্রকাশিত হয়। কিন্তু এবার দুনিয়া কাঁপিয়ে আসা (এবং বাঙালির কাছে পাত্তা না পাওয়া) করোনার কারণে রেজাল্ট প্রকাশ হলো মে মাসের শেষদিনে।
বরাবরের মতো এই রেজাল্ট নিয়ে সবার অধীর আগ্রহ ছিল। কারা জিপিএ ফাইভ পাবেন, তা নিয়ে যেমন উৎকণ্ঠা ছিল এই দুই মাস... তেমনি কারা এবার ফেল করে বাসা থেকে পাচ্ছেন রিকশা, তা নিয়েও ছিল দীর্ঘ সংশয়। অতঃপর সবাই জেনে গেছেন নিজেদের ভবিতব্য। বাসায় বসে দীর্ঘদিন যাবত প্যাডেল মারার প্রস্তুতি নেয়া অনেকেই জিপিএ ফাইভ পেয়ে হতাশ, আবার অনেকেই নটরডেম কলেজে পড়ার স্বপ্ন চোখে নিয়েই রিকশা নিয়ে নামবেন রাস্তায়।
তবে সবার মাঝে ব্যতিক্রম ঝন্টু নামের এক কৃতি ছাত্র। এসএসসিতে ফেল করায় বাবার রিকশা কিনে দিতে চাইলে সে জানিয়েছে চার্টার্ড বিমান কিনে দেওয়ার দাবি।
৬০% বেশি বাস ভাড়া দিয়ে ওই শিক্ষার্থীর বাসায় যেতে চাননি আমাদের কোনো প্রতিবেদক! তাই খবর পাওয়া মাত্র ওই ছেলেকে আমরা ভিডিও কল করি। দেখা গেলো ফেল করলেও তার চোখে-মুখে কোন 'স্যাড রিয়্যাকশন' নেই। উল্টো মুচকি মুচকি হাসছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঝন্টু বলে, 'ধুর ভাই! এখনও এইচএসসি পরীক্ষাই হইলো না, পাশ কইরা লাভটা কী হইত! যারা পাশ করছে, তাদের কেউ কি এখন কলেজে যাইতে পারবে, বলেন? বরং ফেল করে আরও এক বছরের কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করলাম!'
কিন্তু এত কিছু থাকতে চার্টার্ড বিমান কেন। প্রশ্ন করতেই ঝন্টু চঞ্চল চৌধুরীর মতো 'এই শহরে আমার মতো ক্রিমিনাল আর একটাও নাই' টাইপ লুক দিয়ে বলে, 'প্রথম কারণ ব্যবসায়িক। এখন রিকশার খাওয়া নাই। সময় এখন চার্টার্ড বিমানের। এক ট্রিপ মারমু। আরামসে এক মাস ঘুমামু। যে হারে ভিআইপিরা দেশের বাইরে যাওয়া শুরু করছে, এই ব্যবসায়ের কোন লস নাই। খালি ট্রিপ আর ট্রিপ। দুই, করোনার মধ্যে রিকশার চেয়ে বিমান অবশ্যই সেফ। আর তৃতীয় কারণ, বাপেরা যতই বলুক রিকশাওয়ালার সাথে বিয়ে দিবে, শেষে খুঁজে তো ওই পাইলটই। আর এই চার্টার্ড বিমানের যুগে, বিসিএস ক্যাডার হওয়ার চাইতেও লাভজনক। বলতে পারেন, এই এক বছরের গ্যাপে আমি ক্যারিয়ার এন্ড লাইফে ফোকাস করতে চাই।'
তবে ক্যারিয়ারের পাশাপাশি সে জানালো নিজের লেখাপড়ার পরিকল্পনাও, 'সাইন্স নেয়াটাই আমার ভুল ছিল। আমার মূল প্রতিভা আসলে বিজনেস লাইনে। আগামী বছর পাশ করলে অবশ্যই কমার্স নেবো।'
কল কাটার আগে আমরা তার বাবার সাথেও একটু কথা বলতে চাইলে সে আমাদের জানায়, রিকশার বদলে চার্টার্ড বিমান চাওয়ার পর বাবা প্রথমে তাকে বাড়ি থেকে বেরোতে বলে একটু পরে নিজেই বেরিয়ে যান। তবে আমাদের প্রতিবেদক এবং পাঠকদেরকে অগ্রিম বিয়ের দাওয়াত দিয়ে রাখতে কিন্তু ঝন্টু ভুল করেনি।