আড়াই লাখ টাকার বাতির নিচে পড়ালেখা করলে আমি বিদ্যামহাসাগর হতে পারতাম : ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

১২০৮ পঠিত ... ২০:১২, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২০

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ‘নর্থ সাউথ সড়ক নির্মাণ’ প্রকল্পে নগরের জাকির হোসেন সড়কের ওয়্যারলেস মোড় থেকে বায়জিদ বোস্তামি-ফৌজদার হাট সড়ক পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের কাজ হাতে নিয়েছে। এই রাস্তায় সড়ক বাতি লাগানোর জন্য প্রতিটি এলইডি বাতির দাম ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা করে। এবং আড়াই কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের প্রশিক্ষণ নিতে কানাডা-আমেরিকা ও ইউরোপ যাওয়ার আবদারও করেছে ১৩ জন কর্মকর্তা ও প্রকৌশলী। খবর: প্রথম আলো।

রাস্তার উপর বাতি, তাও দাম আড়াই লাখ! এমন খবর পাওয়া মাত্রই পরপার থেকে এপার আসতে সাঁতরে স্বর্গের এক নদী পার হন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। অতঃপর মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালিয়ে চট্টগ্রাম শহরে চলে আসেন তিনি। কিন্তু অনেক ঘুরেও আড়াই লাখ টাকা দামের বাতি না পেয়ে হতাশ হয়ে ফেসবুকে নিজের ফেক আইডিতে লগ ইন করে ফিলিং ডিপ্রেসড-এর সাথে ‘আড়াই লাখ টাকা দামের আলো কখনো আমার হবে না’ লিখে একটা স্ট্যাটাস দেন। ওই স্ট্যাটাসে দেখে আমরাও মোবাইলের ব্যাকলাইট বাড়িয়ে দিয়ে বিদ্যাসাগরকে মেসেঞ্জারে নক দেই।

কুশল বিনিময়ের পর আড়াই কিলোমিটার রাস্তায় আড়াই লাখ টাকা দামের বাতির বিষয়ে তার মতামত জানতে চাইলে তিনি এই উদ্যোগকে বেশ সাধুবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘মেধাবীরা আর কতকাল চাঁদের আলো, কমদামি স্ট্রিটল্যাম্পের আলো আর হারিকেনের আলোয় পড়ালেখা করবে! যারা একসময় আমার মতো বিদ্যাসাগর হবে তাদের একটু বেশি সুযোগ-সুবিধা পাওয়া উচিত।’

এমন একটা উদ্যোগ আরো আগে নেয়া উচিত ছিলোও বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, ‘সবসময় সবাই বলে দেশে মেধাবী জন্ম নিচ্ছে না! কিন্তু মেধাবীদের পড়ালেখার জন্য কমদামি সড়কবাতির প্রতিবাদ কাউকে করতে দেখলাম না। এতদিনে কর্তৃপক্ষের শুভবুদ্ধি হয়েছে দেখে বেশ ভালো লাগছে। আবার কিছুটা খারাপ লাগাও আছে!’

কেমন খারাপ লাগা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সময়! বুঝলেন সময়। আমার সময়ে আমি কমদামি স্ট্রিটল্যাম্পের আলোতে পড়ালেখা করতাম। কমদামি লাইটে সব অক্ষর ঠিকঠাক দেখতে পেতাম না বলে বিদ্যায় কিছু গ্যাপ থেকে গিয়েছিল। ইচ্ছে করছে এখনই আবার শৈশবে ফিরে গিয়ে চট্টগ্রাম চলে আসি। এরপর আড়াই লাখ টাকা দামের সড়কবাতির নিচে একটু পড়তে বসি।’

আমাদের প্রজন্মকে সৌভাগ্যবান দাবি করে বিদ্যাসাগর বলেন, 'তোমাদের জন্য হিংসে হয়। আমি এতকিছু পাই নাই।  আড়াই লাখ টাকা দামের বাতির নিচে বসে পড়তে পারলে আমি ঈশ্বরচন্দ্র মহাবিদ্যাসাগর হতে পারতাম। শুধু কি আড়াই লাখ টাকা দামের লাইট! তোমাদের আরো কত সুবিধা! এইসব লাইট কদিন পরই জ্বলা-নেভা করবে, নষ্ট হয়ে যাবে। ওই ফাঁকে তোমরা একটু ফেসবুকিং করে নিতে পারবে। আমি এইটাও পাই নাই। আমার সময়ে লাইট নষ্ট হইতো না। টানা পড়া লাগতো। লাইফে কোন অবসর আছিলো না! রিক্রিয়েশন আছিলো না!’

এ প্রসঙ্গে তিনি রসিকতা করে আরও বলেন, ‘কমদামি স্ট্রিটল্যাম্পের আলোয় পড়া হলো পাবলিকে পড়ার মতো। আর আড়াই লাখ টাকার বাতির নিচে পড়া মানে হলো প্রাইভেটে পড়া, হা হা হা…’

নর্থ সাউথ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় বিদেশ যেতে চাওয়া ১৩ জন কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীকে এ যুগের অতীশ দীপঙ্কর উপাধি দিয়ে বিদ্যাসাগর বলেন, ‘’একটা কথা মনে রাখবে, যে দেশে দামি স্ট্রিট লাইট নেই, সে দেশে বিদ্যাসাগররা জন্মায় না।’

১২০৮ পঠিত ... ২০:১২, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২০

Top